সেই করোনা যোদ্ধাকে পুরস্কৃত করলেন পুলিশ কমিশনার
বরিশাল বিভাগের একমাত্র করোনা পরীক্ষাগার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয় পরীক্ষা কার্যক্রম। নমুনা নেওয়ার জন্য হাসপাতালের পাঁচ টেকনোলজিস্টের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। ওই পাঁচজনের মধ্যে চারজন বিভিন্ন অজুহাতে তালিকা থেকে নাম বাদ দিলেও সাহস নিয়ে এই কাজে যুক্ত হন বিভূতিভূষণ হালদার (৩০)। তিনি একাই এখন সংগ্রহ করছেন নমুনা।
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে থাকা সহ বিভিন্ন স্থানের ২৭১ জন করোনা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ মারা যাওয়া রোগী, করোনার উপসর্গ বা সন্দেহ করা হয় এমন রোগীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন প্রথম সারির যোদ্ধা টেকনোলজিস্ট বিভূতিভূষণ হালদার । ঝুঁকি জেনেও ভয়কে জয় করে এই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন বলে ২৯ মার্চের পর আর বাড়িতে যাচ্ছেন না বিভূতিভূষণ। পরিবারের কাছ থেকে আলাদা আছেন তিনি। বিভূতি থাকছেন নগরীর আবাসিক হোটেল স্যাডেনা ইন্টারন্যাশনালের একটি কক্ষে।
তার এই নিঃস্বার্থ কাজের জন্য বরিশাল মেডিকেল এবং স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিভূতিকে 'করোনা যুদ্ধের নায়ক' অবহিত করেছেন। সেই করোনা যোদ্ধাকে সাহসিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ নগদ ৫ হাজার টাকা, ২ সেট গ্লাভস, ২টি মাস্ক ও ১টি পিপিই এবং ২ ঝুড়ি ফল ইত্যাদি উপহার পাঠিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।
রোববার বিকেল পৌঁনে ৪টার দিকে পুলিশ কমিশনারের পক্ষে তার স্টাফ অফিসার সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল হালিম নগরীর সদর রোডে বিভূতির অস্থায়ী সরকারি বাসস্থান হোটেল স্যাডেনা ইন্টারন্যাশনালে এই উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, এ সময়ে তিনি যা করছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি ভালো কাজ করছেন। তিনি প্রথম সারির একজন যোদ্ধা। তাকে উৎসাহিত করতে সামান্য উপহার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট বিভূতিভূষণ হালদার মুঠোফোনে জানান, নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে কোভিড-১৯-এ মারা যাওয়া রোগী, করোনার উপসর্গ বা সন্দেহ করা হয় এমন রোগীর খুব কাছে যেতে হচ্ছে। সে কারণে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রথমে হাসপাতাল থেকে পাঁচজনকে রোস্টার করে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নমুনা সংগ্রহের কথা শুনে সহকর্মীদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। অনেকে অজুহাত দেখিয়ে দায়িত্ব এড়ালেন। অনেকে চেষ্টা–তদবির করে রোস্টার থেকে নাম কাটিয়ে নিলেন। বুঝলাম, শেষ পর্যন্ত কাজটা আমাকে একাই করতে হবে।
তিনি জানান, যে কোন পুরস্কার আনন্দের। পুলিশ কমিশনারের পাঠানো পুরস্কার আমাকে উৎসাহিত করবে। করোনাভাইরাসের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে করোনার বিস্তার রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত বিভূতিভূষণ হালদার ৯ বছর আগে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট পদে যোগ দেন। তিনি সদর উপজেলার চরকাউয়া এলাকার বাসিন্দা সুধাংশু হালদারের ছেলে। তার বাবা সুধাংশু হালদার মেডিকেলের সহকারী কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ছয় বছর আগে অবসর নিয়েছেন। এ পর্যন্ত শের-ই-বাংলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সহ বিভিন্ন স্থানের ২৭১ জন করোনা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছেন বিভূতি ভূষন হালদার। এর মধ্যে ১৫জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে।