৩০ বছর ধরে তিনগুণ হারে বাড়ছে দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা
বিশ্বজুড়ে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে তার চেয়েও তিনগুণ হারে দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা বাড়ছে। আর এর বড় ধরণের প্রভাব পড়বে এন্টার্কটিকা মহাদেশের বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রের প্রাণীজগত এবং সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
সম্প্রতি নেচার ক্লাইমেট চেইঞ্জ সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বরফে ঘেরা মহাদেশ এন্টার্কটিকার উষ্ণতাও যে বাড়ছে তা বহু আগে থেকেই জানতেন বিজ্ঞানীরা। তবে এন্টার্কটিকার কেন্দ্রে অবস্থিত অতি দূরবর্তী স্থান দক্ষিণ মেরুতেও যে এর প্রভাব পৌঁছে যাবে তা বিজ্ঞানীদের ধারণায় ছিলো না।
এই গবেষণা দলের প্রধান এবং নিউজিল্যান্ডের ওয়ের্লিংটন ইউনিভার্সিটির ক্লাইমেট সাইন্সের অধ্যাপক কাইল ক্লেম বলেন, "বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়টি যে আসলেই বৈশ্বিক এবং সেটি যে নিজেই দূরবর্তী যে কোনো স্থানেই পৌঁছানোর পথ তৈরি করে নেয়, এটা তারই উদাহরণ।"
এন্টার্কটিকার অভ্যন্তরের উষ্ণতা পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানী ক্লেম ও তার দল দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন। তারা দেখেতে পান, ১৯৮৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত ৩০ বছরে দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। প্রতি এক যুগে তাপমাত্রা বেড়েছে গড়ে শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির গড়ের তিনগুণ।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ, দক্ষিণ মেরু থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে ক্রান্তীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। গত ৩০ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে নিরক্ষীয় অঞ্চল এবং পাপুয়া নিউ গিনির কাছাকাছি গ্রীষ্মমন্ডলীয় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ফলে ওই বাতাস দক্ষিণ মেরুতে প্রবাহিত হয়।
বিজ্ঞানী ক্লেম বলেন, "এটা বেশ দুর্গম। এটা এই গ্রহের সবচেয়ে প্রত্যন্ত একটা জায়গা। যেভাবে এন্টার্কটিকের অভ্যন্তরে এই চরম তাপমাত্রা পৌঁছে যাচ্ছে তার তাৎপর্য অত্যন্ত বেশি।"
এন্টার্কটিকা মহাদেশের আরও কয়েকটি অংশে সম্প্রতি কয়েক বছরের মধ্যে তাপমাত্রার বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়, যার ফলাফল হতে পারে ভয়ংকর। তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে এই মহাদেশের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বিশ্বজুড়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বসবাস করা কোটি কোটি মানুষ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এন্টার্কটিকার বরফ খন্ডে এতো বেশি পরিমাণ পানি আছে যা বিশ্বের সমুদ্রগুলোর পানির পৃষ্ঠতলের উচ্চতা ২০০ ফুট পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারবে।