৪৭ বছর পর ফের দেখা শতবর্ষী দুই বোনের
৪৭ বছর পর দেখা হলো দুই কম্বোডিয়ান বোনের। এদের মধ্যে বুন সেনের বয়স এখন ৯৮, বুন চিয়ার ১০১ বছর। তারা দুজনেই এতদিন ভেবে এসেছিলেন, ১৯৭০ দশকে খেমার রুজ শাসনামলের নৃশংস গণহত্যায় আরও অসংখ্য মানুষের মতো প্রিয় বোনটিও মারা গেছেন।
স্থানীয় এক এনজিও সূত্রে জানা যায়, শুধু বড়বোন নয়, ৯২ বছর বয়সী ছোটভাইয়ের দেখাও বুন সেন পেয়েছেন আবার। তিনি এতদিন ভেবেছিলেন, ভাইটিও বোধহয় মারা গিয়েছেন তখন। খবর বিবিসির।
কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা খেমার রুজ নেতা পল পট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দুই বছর আগে, ১৯৭৩ সালে এই দুই বোনের শেষ দেখা হয়েছিল। খেমার রুজের শাসনামলে দেশটিতে ২০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এ সময়ে ছত্রখান হয়ে যায় অসংখ্য পরিবার। বাবা-মা-ভাই-বোন থেকে চিরতরে আলাদা হয়ে যায় অনেক শিশু।
গণহত্যার সেই দিনগুলোতেই নিজের স্বামীকে হারিয়ে বুন সেন রাজধানী নমপেনের বিরাট এক আবর্জনার স্তূপের কাছে জীবন কাটাতে থাকেন। এরপর বেশির ভাগ দিন ময়লা সরিয়ে, বিক্রয়যোগ্য জিনিসপত্র কুড়িয়ে, আর হতদরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের লালন-পালন করে কেটেছে তার।
নমপেন থেকে মাত্র ৯০ মাইল পূর্ব দিকে, কম্পংচাম অঞ্চলে থাকা নিজের জন্মগ্রামে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন বুন সেন সবসময়ই বুনেছেন। তবু বয়সের ভার, হাঁটার অক্ষমতা ছাড়াও নানা ঝামেলার কারণে তার ফেরা হয়নি।
স্থানীয় এনজিও কম্বোডিয়ান চিনড্রেন’স ফান্ড ২০০৪ সাল থেকে এই প্রবীণ নারীর দেখভাল করছে। এবার নিজ গ্রামে তার ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তারা। এত বছর পর গত সপ্তাহে সেখানে গিয়েই বুন সেন জানতে পারেন, তার বোন ও ভাই এখনও বেঁচে আছেন; সেই গ্রামেই থাকছেন।
এভাবেই প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর বড়বোন বুন চিয়া ও ছোটভাইটির (নাম জানা যায়নি) সঙ্গে আবারও দেখা হলো বুন সেনের।
তিনি বলেন, ‘সেই যে কবে গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিলাম, এতদিন আর ফিরতে পারিনি। সবসময়ই মনে হয়েছে, আমার ভাই-বোন আর বেঁচে নেই। বড়বোনকে আবারও জড়িয়ে ধরতে পারা আমার কাছে অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। ছোটভাইয়ের হাতটা ছুঁতেই কান্না আটকে রাখতে পারিনি।’
খেমার রুজ আমলে খুন হয়েছেন বুন চিয়ার স্বামীও। চিয়ার কাঁধে তখন ১২ সন্তানের বোঝা। তিনিও ধরেই নিয়েছিলেন, তার ছোটবোনটি মরে গেছে।
বুন চিয়া বললেন, ‘পল পটের লোকেরা আমার ১৩ জন আত্মীয়-স্বজনকে মেরে ফেলেছে। ভেবেছিলাম, বোনটিও বেঁচে নেই। কতদিন পর দেখা পেলাম ওর!’
এতকাল পর দেখা পাওয়া দুই বোন এখন একে অন্যের সঙ্গ ছাড়তে বারাজ। এ সপ্তাহে রাজধানীতে ঘুরতে এসেছিলেন তারা।