যুক্তরাষ্ট্র আর কোন কোন দেশে এ বছর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে?
যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর বিভিন্ন কারণে কয়েক দফা ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারমধ্যে সর্বশেষটি ছিল সোমবার (২৪ জুলাই)। কম্বোডিয়ায় প্রধান বিরোধী দল ছাড়াই আয়োজিত প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এদিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন।
এর আগে গত ২৪ মে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এই বছর প্রায় একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান এবং হাইতি।
নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়ায় সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময় 'গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন' করার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল। ২৫ ফেব্রুয়ারি নাইজেরিয়ার সাধারণ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘোষণা দেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন সতর্ক করে বলেন, যারা নাইজেরিয়াতে ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালীন কিংবা পরে 'গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে', তাদের মার্কিন ভিসা পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
১৫ মে একটি প্রেস বিবৃতিতে, ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ার ২০২৩ সালের নির্বাচনের সময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য জড়িত ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
''যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়া এবং সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে সমর্থন ও অগ্রসর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ (১৫ মে) আমি ঘোষণা করছি যে, নাইজেরিয়ার ২০২৩ সালের নির্বাচনের সময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য আমরা নাইজেরিয়ার নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কার্যকর। নাইজেরিয়া সরকার কিংবা দেশটির জনগণের উপর নয়।''
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিরা হুমকি এবং শারীরিক সহিংসতার মাধ্যমে ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোটের ফলাফলের হেরফের এবং নাইজেরিয়ার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন অন্যান্য কার্যকলাপে জড়িত ছিল। ভিসা বিধিনিষেধ কার্যকর করার সিদ্ধান্তটি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে এগিয়ে নিতে নাইজেরিয়ার প্রচেষ্টার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিফলন।
আফগানিস্তান
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের অধিকার হরণের অভিযোগে অভিযুক্ত বর্তমান এবং প্রাক্তন তালেবান সদস্য, অ-রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য এবং অন্যান্যদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তালেবান প্রশাসন এক মাস আগে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এবং বেসরকারি সংস্থার সাথে কাজ করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ব্লিঙ্কেন এই বিষয়গুলোকে নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, তালেবানের সাম্প্রতিক আদেশগুলো নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এবং বেসরকারী সংস্থার সাথে কাজ করতে বাধা দেয়। এর আগে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ করে দেয় এবং নারীদের কাজ করার ক্ষমতা সীমিত করে। সিদ্ধান্তগুলো মাধ্যমে তালেবানরা আবার আফগান জনগণের কল্যাণের প্রতি তাদের অবজ্ঞা দেখিয়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে এই পদক্ষেপের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ব্লিঙ্কেন বলেন, এখন পর্যন্ত, তালেবানের কর্মকাণ্ডে ১০ লাখের বেশি স্কুল-বয়সী আফগান মেয়ে এবং তরুণীকে শিক্ষা থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে না, এমনকি নারীদের কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এমন নারী ও মেয়ের সংখ্যা সময়ের সাথে সাথে বাড়বে। যা দেশটির অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটকে আরো খারাপ দিকে নিয়ে যাবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'তালেবানরা ততক্ষণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মান ও সমর্থন আশা করতে পারে না যতক্ষণ না তারা নারী ও মেয়েসহ সকল আফগানদের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান করে।
হাইতি
৫এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্র হাইতির জনগণকে সমর্থন জানাতে এবং দেশটিতে চলমান অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে সাবেক হাইতিয়ান চেম্বার অফ ডেপুটিজ প্রেসিডেন্ট গ্যারি বোডোর উপর ভিসা বিধিনিষেধ এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বোডোকে ধারা ৭০৯১ (সি) এর অধীনে তালিকাভুক্ত করে। যার অর্থ সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন বোডো।
একই সাথে, ট্রেজারি বিভাগ বোডোকে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের অধীনে তালিকাভুক্ত করে। ফলস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার আর্থিক সম্পদগুলো জব্দ করা হয়েছে।