মৃত্যুর এক ঘণ্টা পর পুনরুজ্জীবিত করা হলো শূকরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ!
মৃত্যুর এক ঘণ্টা পেরোনোর পর শূকরের কয়েকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আংশিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়েছে বলে সম্প্রতি মার্কিন গবেষকেরা জানিয়েছেন।
তাদের মতে, এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য বিরাট অগ্রগতি নিয়ে আসবে। এ কৌশল ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গের সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করবে। চিকিৎসকেরাও রোগীর জীবন রক্ষায় আগের চেয়ে বেশি সময় পাবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ফলাফল 'সত্যিই অসাধারণ' এবং 'অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ'।
হৃৎপিণ্ড যখন তার স্পন্দন বন্ধ করে দেয়, তখন দেহ অক্সিজেন হীনতায় এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিবঞ্চিত হয়। দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ফুলেফেঁপে যায়, রক্তনালী ভেঙ্গে পড়ে এবং দেহ গঠনকারী কোষসমূহের মৃত্যু হতে থাকে।
এই সেলুলার ডেথ বা কোষীয় মৃত্যু খুব দ্রুত ঘটে। এ প্রক্রিয়াকে এতোদিন স্থায়ী হিসেবেই ভেবে আসা হচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা কোষীয় ক্ষতি সারিয়ে মৃত্যুর এক ঘণ্টার মধ্যে প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবি করেছেন।
"আমরা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কোষীয় ফাংশন পুনরুদ্ধার করতে পারি, যেগুলো আদতে মৃত", বলেন গবেষণার সাথে জড়িত অধ্যাপক নেনাদ সেস্তান।
"যখন আসলে কার্যক্ষম থাকার কথা না, তখনও কোষগুলো সজীব," যোগ করে তিনি।
২০১৯ সালেও আরেকটি গবেষক দল শূকরের মস্তিষ্ক নিয়ে এমনই এক গবেষণা করেছিল। অর্গান এক্স- নামের সেই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবারও।
নেচার জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ এক্সপেরিমেন্টের জন্য প্রায় ১০০টি শূকর লেগেছিল; পরীক্ষাটি এগিয়ে নিতে নৈতিক অনুমোদনও প্রয়োজন ছিল।
বিজ্ঞানীরা প্রাণীগুলোতে অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের হৃদস্পন্দন বন্ধ করিয়ে দেন। এক ঘণ্টা পর মৃত প্রাণীগুলোকে অর্গানএক্স সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ছয় ঘণ্টা যাবত রেসটোরেটিভ ককটেল প্রয়োগ করা হয়। পরীক্ষার পুরোটা সময় চেতনানাশক বজায় রাখা হয়েছিল।
ছয় ঘণ্টা পর, বিজ্ঞানীরা শূকরের হৃদপিণ্ড, যকৃত এবং কিডনির মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ছেদন করেন। তখনই তারা দেখেন যে, কিছু ফাংশন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।
হৃৎপিণ্ডের ইলেকট্রিক্যাল একটিভিটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল; একাধিক হৃদপেশীও সংকুচিত হতে দেখা যায়। যদিও অঙ্গগুলো মৃত্যুর আগে যেভাবে সক্রিয় ছিল, স্বাভাবিকভাবেই পরে সেই একই রকম সক্রিয়তা দেখা যায়নি।
গবেষক ডঃ জভোনিমির ভারসেলজা বলেন, "আমরা যেমনটি অনুমান করেছিলাম, এগুলো ততোটা মৃত নয়। আমরা এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, মলিক্যুলার লেভেলে আমরা কোষ বা সেলের পুনর্গঠন শুরু করতে পারি। কোষগুলো যেন মারা না যায়, সেটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।"
এমনকি একপর্যায়ে শূকরের মাথা ও ঘাড় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নড়তে শুরু করে। এটি হয়তো একটি নির্দেশক হতে পারে যে, তারা কিছু মোটর ফাংশন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে; তবে এর জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।
আপাতত এই গবেষণার প্রাথমিক লক্ষ্য, প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গগুলো সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ান, যেন প্রয়োজনের সময় তাদের রোগীদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়।
- সূত্র- বিবিসি