আমরা কি কখনো বিগ ব্যাং-এর ছবি দেখতে পাব? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে 'টাইম মেশিন' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কারণ এটি কয়েকশ কোটি বছর আগের আলোর ছবি তুলতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে ঘটা মহাবিস্ফোরণ তথা বিগ ব্যাংয়ের ছবি কি তুলতে পারবে ওয়েব টেলিস্কোপ? এ প্রসঙ্গে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডক্টর ম্যাথু বথওয়েলের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এত দক্ষ কেন?
প্রথমত এটা ইনফ্রারেড (অবলাল)। দমকলকর্মীরা ইনফ্রারেড গগলস ব্যবহার করেন, কারণ এটি দিয়ে ধোঁয়া ও ধুলোর মধ্য দিয়ে ও দেখা যায়। একইভাবে অনেক নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি ধুলোর মেঘে ঢাকা থাকে।
এছাড়া অতি দূরবর্তী মহাজাগতিক উপাদান থেকে যে আলো আসে তার লোহিত সরণ বা রেড শিফট ঘটে। এর কারণ হচ্ছে আমাদের মহাবিশ্ব ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। আলো যখন এ ক্রমবর্ধমান মহাশূন্য দিয়ে ভ্রমণ করে, তখন এটি প্রসারিত ও লাল হয়ে যায়।
আর সবশেষ কারণ হলো, এ টেলিস্কোপটি এর উত্তরসূরি যেকোনো টেলিস্কোপের তুলনায় আকৃতিতে অনেক বড়।
মহাবিশ্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রসারিত হলে আমাদের পৃথিবী কেন হচ্ছে না? মানুষ কেন প্রসারিত হচ্ছে না?
আমরা সবাই স্থির তড়িৎ বলের কারণে একত্রিত আছি। এর অর্থ আমাদের শরীরের অণুগুলো একে অপরের সঙ্গে আটকে আছে। আমরা কেবল সে সব স্থানে প্রসারিত হবো যেখানে স্থির তড়িৎ বল ও মহাকার্ষ বল খুবই দুর্বল। আর এ ধরনের স্থানের উদাহরণ হলো গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যবর্তী বিশাল মহাবিশ্ব।
আচ্ছা, তাহলে মহাবিশ্ব কোথা থেকে প্রসারিত হচ্ছে? এ প্রসারণের কোনো কেন্দ্র আছে নাকি?
আমাদের এ মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে কিছু নেই। সময় ও স্থানকে একটি বাক্স হিসেবে ধরে তার ভেতরে মহাবিশ্ব অবস্থান করছে- এমন চিন্তা করলে ভুল হবে। সময় ও স্থান মহাবিশ্বের ভেতরেরই উপাদান। বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে মহাশূন্য সৃষ্টি হয়েছে। বিগ ব্যাং যেখানে ঘটেছিল সেখানে এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি অংশই ছিল।
ভবিষ্যতে কি কোনো টেলিস্কোপের পক্ষে বিগ ব্যাং দেখা সম্ভব?
না। কসমিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, আলোর গতি বেশ ধীর। সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে প্রায় আট মিনিট। অর্থাৎ আমরা যখন সূর্যকে দেখি তখন আমরা আট মিনিট আগের সূর্যকে দেখছি।
কয়েক মিলিয়ন আলোকবর্ষ আগের দিকে তাকালে আমরা যা দেখতে পাব তা কয়েক মিলিয়ন বছর পুরনো বস্তুই হবে। বিগ ব্যাংয়ের সময় মহাবিশ্বের সব বস্তু (ম্যাটার) একটি ছোট আয়তনে সংকুচিত ছিল। এটির ঘনত্ব এত বেশি ছিল যে, এটির ভেতর আলো প্রবেশ করতে পারত না। এরপর যখন ব্রহ্মাণ্ড প্রসারিত হতে থাকল, তখন এর ঘনত্ব কমার ফলে আলো এটির মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণ করতে পারল।
মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা দেখা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
যখন আপনি কঠিন কোনো সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করেন, তখন আপনি নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেন। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। কেমব্রিজের একদল বিজ্ঞানী দূরবর্তী অস্পষ্ট গ্যালাক্সি দেখার জন্য ছবির একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। পরে দেখা গেল, একই পদ্ধতি ব্যবহার করে শরীরের যেসব স্থানের টিউমার সরাসরি দেখা যায় না, সেগুলোও চিহ্নিত করা সম্ভব। এ পদ্ধতির ফলে ক্যান্সার ধরা পড়ার হার আগের চেয়ে বেড়েছে।