আমাদের শরীর বেশ খরুচে, তাই বুঝেশুনে শক্তি ব্যয় করতেন আদিম মানুষেরা
আমাদের প্রতিটি নিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মকাণ্ড। মাথা, কিডনি, যকৃত; এরকম প্রতিটি অঙ্গই তাদের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করার প্রয়োজনীয় শক্তিটুকু পাচ্ছে আমাদের নিশ্বাসের জন্য। এমনকি আমরা স্রেফ 'অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা'র জন্যও যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালরি খরচ করি। কেবল মস্তিষ্কের কাজ করার জন্যই আমাদেরকে দৈনিক ৩০০-৫০০ ক্যালির খরচ করতে হয়।
আমাদের শরীরের পেশিগুলোর নিরবচ্ছিন্ন শক্তির প্রয়োজন হয়। এমনকি এগুলো ব্যবহার করে বাহ্যিকভাবে কোনো শারীরিক পরিশ্রম না করলেও এগুলো নিয়মিত ক্যালরি খরচ করে। এভাবেই শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতিনিয়ত ক্যালরি ব্যয় করছে।
অর্থাৎ আমাদের বেঁচে থাকার ব্যাপারটিই শরীরের জন্য বেশ খরুচে একটি প্রক্রিয়া। কেবল মৌলিক শরীরবৃত্তীয় কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য একজন গড়পড়তা মানুষ দৈনিক ১৩০০ থেকে ১৬০০ ক্যালরি খরচ করে।
কোনো ব্যক্তি শারীরিকভাবে কতটা সক্রিয় তা মাপার অনেক উপায় আছে। এর সহজ একটি পদ্ধতি হচ্ছে 'ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি লেভেল'। আপনি দিনে যে পরিমাণ শক্তি খরচ করেন তাকে মৌলিক শরীরবৃত্তীয় কাজগুলো করার জন্য যে পরিমাণ শক্তি খরচ হতো তার পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে এটি মাপা হয়।
ধরা যাক আপনি হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছেন, কোনো কাজ করছেন, এমনকি খাবারটাও সরাসরি খাচ্ছেন না। সেক্ষত্রে আপনার ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি লেভেল হবে ১.২। আবার অন্যদিকে আপনি যদি সাইকেলে লম্বা পথ পাড়ি দেন, তাহলে এ মান হবে তিনের ওপরে। আর আপনার কাজ যদি ডেস্কে বসে হয়, তাহলে এটি হবে ১.৬-এর মতো।
এ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি ছাড়াও প্রজাতির সক্রিয়তাকেও পরিমাপ করা যায়। কারণ এটির আদর্শীকরণ করা হয়েছে মানুষের শরীরের আকারের ওপর। আর শরীরের আকার ঠিক করে দেয় কোনো ব্যক্তির 'বেসাল মেটাবলিক রেট' (বিএমআর) কেমন হবে তা। আপনি মৌলিক শরীরবৃত্তীয় কাজগুলো করার জন্য কী পরিমাণ ক্যালরি খরচ করেন তা জানা যায় বিএমআর থেকে।
আর দেখা গেছে পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ তার মেটাবলিজমের (বিপাকীয় কাজ) তিন ভাগের দুই অংশ খরচ করে বিআমএর-এর ওপর। অর্থাৎ, আপনি যদি পূর্ণবয়স্ক হন, তাহলে কেবল বেঁচে থেকেই আপনি দিনে ১৬০০ ক্যালরি খরচ করছেন।
এই যে আমাদের শরীর এত খরুচে, এটা দ্বারাই আসলে বোঝা যায় আমরা কেন অপ্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের কাজগুলো করতে চাইনা। এখন না হয় আপনি চাইলেই ফ্রিজ খুলে বা বাড়ির পাশের টং দোকানে গিয়ে কিছু একটা খেতে পারেন। কিন্তু আদিম মানুষদের কথা ভাবুন।
হুট করে তাদেরকে কিছু একটা খেতে চাইলে কিন্তু অনেক কসরত করতে হতো। হয়তো শিকারে যেতে হতো বা ফলমূল সংগ্রহের জন্য বনবাদাড়ে ঘুরতে হতো। তখন শক্তি ছিল সীমাবদ্ধ। আর যখন শক্তি এরকম সীমাবদ্ধতার চক্রে পড়ে, তখন তা বুঝেশুনে খরচ করতে হয়।
ভালো অ্যাথলেটরা অনেক পরিশ্রম করেন বলেই আমরা জানি। তাদের নৈপুণ্যে আমরা মুগ্ধ হই। অনেকে তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি। এ অ্যাথলেটরা তাদের জীবনের দীর্ঘ একটি সময় ব্যয় করে কেবল ওই একটি কাজই শিখেছেন। অন্যদিকে বেশিরভাগ মানুষ চেষ্টা করেন কীভাবে বেশি করে ব্যায়াম বা শরীরচর্চার মতো কাজগুলো করবেন।
তবে এখানে যা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, এবং সেটা করতে গিয়েও অনেক সীমাবদ্ধতার মুখে পড়েন; সেক্ষেত্রেও একেবারে কিছু না করার চেয়ে অল্পকিছু করাটাই ভালো। আপনাকে ম্যারাথনে দৌড়াতে হবে না, দিনে কয়েক হাজার ডনবৈঠক দিতে হবে না। কেবল সপ্তাহে এক ঘণ্টা শরীরচর্চাও একেবারে কিছু না করার চেয়ে শ্রেয়।
পারফেক্ট ডোজ, পারফেক্ট টাইপ বলে কিছু নেই। আর মানুষ সেটা বুঝলে তা-তে তাদের ঘাড় থেকে দুশ্চিন্তা কিছুটা কমবে।
সূত্র: বিগ থিংক