প্রাণীদের কথা শিগগিরই বুঝতে শিখবে মানুষ, কিন্তু এই ক্ষমতা কি প্রকৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে?
প্রাণী জগতের পশুপাখি থেকে শুরু করে পোকামাকড় এমনকি জলজ প্রাণীদের সঙ্গেও শিগগিরই মানুষের যোগাযোগ স্থাপিত হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আর কিছুদিনের মধ্যেই মানুষ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) সাহায্যে মৌমাছি, হাতি ও তিমি মাছের কথা বুঝতে পারবে।
তবে নতুন এই বৈপ্লবিক উদ্ভাবন নিয়ে চিন্তিত অনেক বিজ্ঞানী। তারা মনে করছেন প্রাণীদের কথা বুঝতে পারলে মানুষ সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। তার ফলে হুমকির মুখে পড়বে বিভিন্ন প্রজাতি।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কারেন বেকার ভক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জার্মানির একদল গবেষক এআই ব্যবহার করে অন্যান্য প্রাণীদের শব্দ সৃষ্টির প্যাটার্নগুলো ধরার চেষ্টা করছেন। যেমন মৌমাছিদের উড়াউড়ি, হাতিদের তৈরি করা নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ইত্যাদি ডিকোড করার চেষ্টা করছেন তারা। এগুলো বুঝতে পারলে মানুষ শুধু তাদের কথাই বুঝতে পারবে না, বরং প্রাণীগুলোকে নিয়ন্ত্রণেও সক্ষম হবে।
বেকার ব্যাখ্যা করেন, এই এআই রোবটে ব্যবহার করে মানুষ যেকোনো প্রতিকূল অবস্থাতেও সহজেই অ্যাকসেস পাবে। ফলে অন্য প্রজাতির সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ স্থাপনে প্রতিবন্ধকতাও থাকবে না। কিন্তু এভাবে অন্য কোনো প্রজাতির বাস্তু ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করাটা কতটুকু নৈতিক হবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
'এর আগে মানুষ অন্য কোনো প্রজাতির সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। কিন্তু এবার সেই ক্ষমতা পেলে বন্য প্রজাতির ওপর মানুষের আধিপত্য আরও বেড়ে যাবে,' বলেন বেকার।
মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই পশুপাখিসহ অন্যান্য প্রাণীদের কথা বোঝার চেষ্টা করে আসছে। এসব নিয়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য কল্পকাহিনী ভিত্তিক চলচ্চিত্রও। কিন্তু কল্পকাহিনীর বহু গল্পের মধ্যে এটিও খুব শিগগিরই বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত 'দ্য সাউন্ডস অব লাইফ: হাউ ডিজিটাল টেকনোলজিস আর ব্রিংগিং আজ ক্লোজার টু দ্য ওয়ার্ল্ডস অব অ্যানিমেলস অ্যান্ড প্ল্যানেটস' বইয়ের লেখক কারেন বেকার বলেন, জার্মানের বিজ্ঞানীরা এখন বিভিন্ন মৌমাছির চাকে বিভিন্ন ধরলের এআই রোবট স্থাপন করে দেখবে তারা সেগুলো গ্রহণ করে কি না।
'এর পর আমরা এসব চাক নিয়ন্ত্রণের নজিরবিহীন ক্ষমতা পাব', বলেন তিনি।
তবে এই ক্ষমতা থেকে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠবে। তবে বেকার আশাবাদী নতুন এই প্রযুক্তি গড়পরতার মানুষকে প্রকৃতির শব্দের সঙ্গে তাল মেলানো শিখতে উৎসাহিত করবে।
হাতিকে সচরাচর খুব জোরে ডাকতে শোনা গেলেও তারা এমন সব শব্দ করে যা মানুষ শোনে না।
প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ ইনফ্রাসাউন্ডও বুঝতে পারবে। মৌমাছি ও হাতি ছাড়াও তিমি মাছের যোগাযোগ ব্যবস্থা বুঝতে আরেকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। সিইটিআই নামের প্রকল্পটির সাহায্যে তিমি মাছের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ সংকেত উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
বেকার বলেন, মানুষ এর আগে প্রাইমেটদের সাংকেতিক ভাষা শেখানোর মাধ্যমের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
তবে এআই ভাষার বিষয়টিই অন্যরকম। এখানে মানুষের সাংকেতিক ভাষা নয়, বরং প্রাণীদের নিজস্ব ভাষাই হয়ে উঠবে যোগাযোগের মাধ্যম।