আপনি কি কাজপাগল? কীভাবে বুঝবেন আপনি কর্মে আসক্ত?
টুইটার কিনে নেওয়ার কয়েক বছর আগে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কোনো পার্কে হাঁটতে যাওয়ার মতো কাজ নয়। আরও বিশদে বলতে গেলে, কাজ করা অবকাশ যাপন কিংবা বিনোদন নয়।
মাস্কের মতে, কোনো কাজ ভালোবেসে, খুব আগ্রহের সঙ্গে করলে সেটিকে 'কাজ' বলে মনে হয় না। কাজের প্রতি আকর্ষণ বা ভালো লাগার কারণে তখন কোনো বিরতি ছাড়াই কাজ করা সম্ভব, এমনকি কোনো বেতন ছাড়াই দিনের প্রতিটি ঘণ্টায় কাজ করা সম্ভব!
তিনি ওয়ার্কহোলিকদের অর্থাৎ কাজপাগল ব্যক্তিদের কথাই বলছেন! নিজের মানসিক বা শারীরিক সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ ছাড়াই কঠোর এবং দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত কাজ করার নেশা যাদের রয়েছে তারাই কাজপাগল।
দীর্ঘ সময় বলতে ঠিক কত ঘণ্টা বোঝায়? এর উত্তরে কানাডার মনোবিদ মাইকেল পি. লেইটার-এর ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে এল পাইস-এর এক প্রতিবেদনে।
সহকর্মীদের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা বেশি কাজ করছেন বলে তারা আপনাকে কাজপাগল বলছে? কিংবা বসের ঝাড়ি শুনতে চান না বলে কেবল অফিসের সময়ে কাজ করেও সঙ্গীদের কাছ থেকে কাজপাগল তকমা পেতে হচ্ছে? শোনার পর মনে হতেই পারে, আপনি বুঝি সেই ওয়ার্কহোলিকদের কাতারে পড়েন। কিন্তু আদৌ কি তাই?
মাইকেল পি. লেইটার ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি জানান, সাধারণভাবে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার নেশাকে ওয়ার্কহোলিজম বলা হলেও, এ ধারণাটা আরেকটু জটিল। কে আপনাকে কাজপাগল বলছে সেটিও দেখার বিষয়।
উদাহরণস্বরূপ, লেইটার বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করেন, এবং এতে যদি বাকি সহকর্মীরা বসের চোখে খারাপ হয়ে যান, তাহলে অনেক সময় সেই ব্যক্তিকে তারা কাজপাগল বলে খেতাব দিতেই পারেন। কিংবা কেউ কেউ যথাসম্ভব বেশি কাজ করতে চান। ফলে হয়তো বাড়িতে কিংবা সন্তানদের পেছনে কম সময় দিতে পারেন। এক্ষেত্রেও সঙ্গীর কাছ থেকে কাজপাগল শব্দটি শুনতে হতে পারে।
আবার এমনও ব্যক্তি আছেন যারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে বোঝাতে কাজপাগল হওয়ার দাবি করেন।
মজার ব্যাপার হলো, এমন তকমা পাওয়ার জন্য যত ঘণ্টা কাজ করা প্রয়োজন, সে সংখ্যাটা গত কয়েক দশকে বেড়েই চলেছে। ১৯৭১ সালের প্রথম সংজ্ঞানুযায়ী, সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার আসক্তিকে ওয়ার্কহোলিজম বলা হতো। বর্তমান শ্রমবাজারে এই সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টায় কাজ করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তাই পরবর্তীতে গবেষকরা নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ না করেই এর সংজ্ঞায় বলেছেন, 'তারাই ওয়ার্কহোলিক যারা প্রয়োজনাতিরিক্ত সময় ও শক্তি ব্যয় করে কাজ করেন।'
আধুনিক সংজ্ঞায়নে কর্মঘণ্টার চেয়ে কাজের প্রতি মনোভাবটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আবার প্রেক্ষাপটভেদেও কর্মঘণ্টার তারতম্য হতে পারে। যেমন, কোনো ব্যক্তি নতুন ব্যবসা শিখছেন এবং একেই ভবিষ্যতে তার পেশা হিসেবে নিতে ইচ্ছুক। তাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে অনেক বেশি কাজ শিখতে বা করতে হতে পারে, যা তার জন্য প্রয়োজনাতিরিক্ত নয়, বরং খুবই দরকারি।
কেউ কাজপাগল কি না, তা যাচাইয়ের একটি পন্থা হলো বার্গেন ওয়ার্ক অ্যাডিকশন স্কেল ব্যবহার করা। ২০১৪ সালে নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব বার্গেন-এর গবেষকরা এই স্কেল উদ্ভাবন করেন।
তাই নিজেই যাচাই করে নিন, আপনি কাজপাগল ব্যক্তিদের কাতারে পড়েন কি না। নিচে কিছু বাক্য দেওয়া আছে, সেগুলো মিলিয়ে নিন আপনার আচরণের সাথে। বাক্যগুলোকে এক থেকে পাঁচের মধ্যে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে এক হবে 'কখনোই না', দুই 'কম', তিন 'নিরপেক্ষ', চার 'প্রায় সময়ই' এবং পাঁচ হবে 'সবসময়'।
- কাজ করার জন্য কীভাবে সময় বের করবেন, আপনি তা নিয়ে ভাবেন।
- প্রাথমিকভাবে যতক্ষণ কাজ করতে চান, কাজ করতে করতে তার চেয়ে বেশি সময় করে ফেলেন।
- অপরাধবোধ, উদ্বেগ, অনুপায় এবং হতাশা কাটাতে আপনি কাজ করেন।
- অন্যরা আপনাকে কম কাজ করতে বলেন।
- কাজ করতে না পারলে অস্বস্তিবোধ করেন।
- আপনি আপনার শখ, অবসরের কার্যকলাপ কিংবা ব্যায়ামের চেয়ে কাজকে বেশি অগ্রাধিকার দেন।
- আপনি এত বেশি কাজ করেন যে তা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উপরোক্ত বাক্যগুলোর অন্তত চারটিতে আপনার উত্তর যদি 'প্রায় সময়ই' অথবা 'সবসময়' (চার এবং পাঁচ) হয়, তবে আপনি কাজপাগল ব্যক্তি।