সুকাত্রার ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ, সরীসৃপ প্রজাতির ৯০ শতাংশ এবং স্থল শামুক প্রজাতির ৯৫ শতাংশই বিশ্বের অন্য কোথাও নেই।
টিবিএস ডেস্ক
22 December, 2022, 01:45 pm
Last modified: 22 December, 2022, 03:17 pm
রহস্যঘেরা এক দ্বীপের নাম সুকাত্রা। কল্পকাহিনীর ভিনগ্রহের মতোই অদ্ভুত সব উদ্ভিদ আর লতাপাতায় ছেয়ে আছে এখানকার প্রকৃতি। আরব সাগরের মাঝে জেগে ওঠা ইয়েমেনের এই দ্বীপকে 'মধ্যপ্রাচ্যের গালাপাগোস' ও 'আরব রত্ন' নামেও ডাকা হয়। চোখ ধাঁধানো এই ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য শুধু ভ্রমণপিপাসুদেরই নয়, বিজ্ঞানীদের কৌতূহলেরও অন্যতম জায়গা।
দেখে নেওয়া যাক বিচিত্র দ্বীপটির বর্ণনা ও অন্যান্য ছবি-
ইউনেস্কোর মতে, ভিন্নধারার স্বতন্ত্র উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ থাকায় সুকাত্রা দ্বীপ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় সুকাত্রা শব্দের অর্থ হলো স্বর্গীয় আনন্দ।
জাতিসংঘের সংস্থাটির অনুমান অনুযায়ী, সুকাত্রার ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ, সরীসৃপ প্রজাতির ৯০ শতাংশ এবং স্থল শামুক প্রজাতির ৯৫ শতাংশই বিশ্বের অন্য কোথাও নেই।
সুকাত্রা দ্বীপকে 'ভিনগ্রহের মতো দেখতে বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত জায়গা' বলা হয়ে থাকে। ২০০৮ সালে দ্বীপটি ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সুকাত্রি সংস্কৃতিও সেখানকার প্রাণী ও উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতির মতোই বিপন্ন। ভারত মহাসাগরে ইয়েমেনের উপকূলে অবস্থিত এই রহস্যময় দ্বীপটি গার্দাফুই চ্যানেল ও আরব সাগরের মাঝে অবস্থিত।
সুকাত্রা দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ ড্রাগন ব্লাড ট্রি। অদ্ভুত আকৃতির এই গাছ থেকে লাল রঙের আঠালো পদার্থ বের হয়।
সুকাত্রিয়ানরা গাছটিকে দাম-আল-আখওয়াইন নামে ডেকে থাকে। আরবি এই নামের অর্থ দুই ভাইয়ের রক্ত। সুকাত্রার প্রত্যন্ত হাগির পর্বতমালার স্থানীয় এই গাছ থেকে উদ্ভূত আঠালো পদার্থ কখনো ঔষধি মলম আবার কখনো লিপস্টিক হিসেবেও বিক্রি করা হয়ে থাকে।
রক্তের মতো তরল নিঃসৃত হওয়ার কারণেই গাছের নাম ড্রাগন ব্লাড। বাকলের কোনো ফাটল থাকলে বা আঘাত করলেই এই রস বেরিয়ে আসে। ড্রাগন ব্লাড ট্রি স্থানীয় চিরসবুজ প্রজাতি হিসেবেও সুপরিচিত।
খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীর দিকে সুকাত্রা থেকে সারা বিশ্বে সুগন্ধি সরবরাহ হতো বলে প্রচলিত আছে।
দ্বীপটিতে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সাকুলেন্ট প্ল্যান্ট মিলে। এখানকার শসা ও ডালিমের প্রজাতিও বিশ্বের অন্য কোথাও জন্মায় না।
দ্বীপটিতে প্রায় ৫০ হাজার স্থানীয় মানুষ বাস করে। এখানকার বাসিন্দাদের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনেকাংশেই অবহেলিত। আদি সুকাত্রি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত ঐতিহ্যবাহী সংরক্ষণ কৌশল, প্রাকৃতিক ওষুধ, মাছ ধরার পদ্ধতি এবং সুকাত্রি ভাষা এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
সুকাত্রার আদিবাসীদের কোনো লিখিত ভাষা নেই। আর তাই দ্বীপটি সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায় হলো বিদেশিদের রেকর্ড করা স্থানীয়দের বিভিন্ন বক্তব্য।
এসব রেকর্ড অনুসারে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি সুকাত্রা শাসন করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয়, গ্রীক, পর্তুগিজ, ওমানি সালতানাত এবং ব্রিটিশরা। তাদের অনেকেই দ্বীপটিতে থাকতে আসত।
প্রাচীন সময়কালে বিশ্বে সুকাত্রা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে ছিল। ভারত মহাসাগর পাড়ি দেওয়া নাবিকদের থামার জন্য এটি বেশ জনপ্রিয় জায়গা ছিল। এখান থেকে নাবিক ও বণিকরা বিভিন্ন রেজিন এবং ঔষধি গাছ নিয়ে দূর-দূরান্তের অন্যান্য সাম্রাজ্যে বিক্রি করত। হক গুহাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় শিলালিপিতে এর প্রমাণ মিলে।
ঐতিহ্যবাহী সুকাত্রি সংস্কৃতিতে দৈনন্দিন জীবনে গান ও কবিতার মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের চল ছিল। এটি তাদের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কবিতার মতো মৌখিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম সুকাত্রি ভাষায় নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকাহিনীর গল্প শুনে আসছে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরোনো সুকাত্রি কবি ৯ম শতাব্দীর ছিলেন বলে জানা যায়। ফাতিমা-আল-সুকুত্রিয়া নামের এই কবি স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তিনি হিজরি তৃতীয় শতাব্দীতে সুকাত্রায় জন্ম নেন বলে ধারণা করা হয়।
কবিতাগুলোতে স্থানীয় লোককাহিনী ছাড়াও সুকাত্রার প্রাচীনতম কিংবদন্তিগুলিগুলো মিলে। সুকাত্রি কবিতার সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ হল টেলিমেথেল। এই ধারার কবিতাগুলোতে মাত্র চার লাইনের স্তবকে ছোট ছোট মজার লোককাহিনী উঠে আসে।
পুরো সুকাত্রা দ্বীপজুড়ে গোলাপী ফুল দেখতে পাওয়া যাবে।
দ্বীপজুড়ে বিস্তীর্ণ সমতল মরুভূমি আগতদের মন্ত্রমুগ্ধ করবে।
সুকাত্রা দ্বীপের বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অনন্য উদ্ভিতগুলো নিয়ে নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম চলে আসছে।
একুশ শতকে এসেও অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুকাত্রা দ্বীপটি সারাবিশ্বের কাছে রহস্যমণ্ডিত হয়েই রয়ে গেছে।