স্কুল ছাড়লে ব্র্যানসনকে শিক্ষক বলেছিলেন, ‘হয় জেলে যাবে নাহয় মিলিয়নিয়ার হবে’, হলেন বিলিয়নিয়ার
ব্রিটিশ উদ্যোক্তা ও বিলিয়নিয়ার রিচার্ড ব্র্যানসন যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ভার্জিন গ্রুপের মালিক। এয়ারলাইনস, ক্যাসিনো, হোটেলসহ বিশাল এক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের অধীশ্বর তিনি। বিলাসবহুল জীবনযাপনের সব রকম উপায়ই রয়েছে তার হাতের নাগালে। সম্প্রতি 'আর্মচেয়ার এক্সপার্ট' নামক একটি পডকাস্টে এই বিলিয়নিয়ার জানিয়েছেন, মাত্র ১৫ বছর বয়সে একটি ম্যাগাজিন চালানোর জন্য স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর সেজন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হুঁশিয়ারিও শুনতে হয়েছিল তাকে।
ব্র্যানসন জানান, স্কুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ছিল একটাই—তিনি জানতেন ম্যাগাজিন প্রকাশের কাজে তিনি অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।
বিভিন্ন কোম্পানিকে নিজের 'স্টুডেন্ট ম্যাগাজিনে' তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে পেছনে ফেলার মতো বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ডলারের মতো আয় করেছিলেন ব্র্যানসন। কিন্তু ব্র্যানসনের এহেন কর্মকাণ্ডে খুশি হতে পারেননি তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ছাত্রটিকে কড়া হুঁশিয়ারি ও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন তিনি।
ব্র্যানসনের ভাষ্যে, 'আমি জানতাম, কাগজ ছাপানো ও ম্যাগাজিন বের করার কাজটা আমি চালিয়ে নিতে পারব। তাই স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলাম... আর প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন—তুমি হয় জেলে যাবে আর নাহয় মিলিয়নিয়ার হবে,' পডকাস্টে এসে কথাগুলো বলেন ৭২ বছর বয়সী ব্র্যানসন।
তবে ব্র্যানসন সম্পর্কে প্রধান শিক্ষকের শেষোক্ত ভবিষ্যদ্বাণী বিফলে যায়নি। জেলে যাননি তিনি, মিলিয়নিয়ারও নন, হয়েছেন বিলিয়নিয়ার! থার্সডে মর্নিং সূত্র বলছে, এই মুহূর্তে ব্র্যানসনের সম্পদের পরিমাণ ৩.৫ বিলিয়ন ডলার।
ব্র্যানসন বলেন, তিনি 'স্টুডেন্ট ম্যাগাজিন' শুরু করেছিলেন, কারণ তার কাছে মনে হয়েছিল, গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা তাকে প্রয়োজনীয় বা আগ্রহোদ্দীপক কিছু শেখাতে পারছে না। স্কুলে বসে জ্যামিতি শেখার চাইতে সেসময় চলমান ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে জানার বেশি আগ্রহ ছিল তার।
'আমি অনেক কিছু শিখতে পছন্দ করতাম, কিন্তু স্কুলের গণিত বা ফ্রেঞ্চ শিক্ষকরা যা শেখাতেন সেগুলো আমার ভালো লাগতো না। সে কারণেই আমি ম্যাগাজিন নিয়ে কাজ করতে শুরু করি যা তরুণদের হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে,' বলেন ব্র্যানসন।
তাছাড়া স্কুলের পড়াশোনা নিয়ে ব্র্যানসনকে যে সংগ্রাম করতে হয়েছে, সে ব্যাপারে এটি এক ধরনের যুক্তিও হতে পারে। কারণ ব্র্যানসন এর আগেও অনেকবার বলেছেন যে ডিসলেক্সিয়া থাকার কারণে তিনি ক্লাসে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারতেন না।
২০১৯ সালে একটি ব্লগ পোস্টে ব্র্যানসন লিখেছিলেন, ডিসলেক্সিয়ার সাথে সৃজনশীলতা ও সমস্যা-সমাধানযোগ্যতার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, 'বিশ্বে যেভাবে নতুন নতুন কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে কিছু কিছু দক্ষতা থাকা জরুরি হয়ে উঠবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন প্রযুক্তির উত্থানের পাশাপাশি সমস্যা সমাধানযোগ্যতা, সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তির প্রয়োজন পড়বে।'
তবে কিনা, ১৫ বছর বয়সে স্কুল থেকে ঝরে পড়েও এত বড় একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তৈরি করতে তার চেয়েও বেশি কিছু দরকার হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে বুঝতে হবে মানুষ কোন ধরনের পণ্য বা পরিষেবা চায় এবং সেখান থেকে আয়ের উপায় বের করতে হবে।
গ্লোবাল অ্যাকাউন্টিং ফার্ম আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এর ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যবসায় হার্ড স্কিলের পাশাপাশি সফট স্কিলেরও দরকার রয়েছে। উচ্চ মানসিক বুদ্ধিমত্তা ও সমালোচনামূলক চিন্তা করতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্র্যানসনের ক্ষেত্রে, এ বিষয়গুলো তিনি কিশোর বয়সেই উপলব্ধি করেছিলেন বলে জানান।
পডকাস্টে প্রবীণ এ বিলিয়নিয়ার বলেন, 'আমি খুব অল্প বয়সেই বুঝে ফেলেছিলাম কীভাবে মানুষের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে হয়। অনুধাবন করতে পেরেছিলাম, ডিসলেক্সিয়ার কারণে আমার নিজের মধ্যে যেসব কমতি রয়েছে, ওই কাজগুলো ভালো পারে যারা তাদেরকেই আমার আশেপাশে রাখতে হবে।'
- সূত্র: সিএনবিসি