হাতে তৈরি চশমার লেন্সে তাহাদের জীবন!
চারপাশে মেশিনের ভোঁ ভোঁ শব্দ। অন্ধকার এই ছোট্ট ঘরটিতে সূর্যের আলো প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। ঘরের ভিতর যে দুটি বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা আছে, তা-ও টিম টিম করে জ্বলছে। তবে ইউসুফ এই আলোতেই দিব্যি কাজ করে যাচ্ছেন। চোখে চশমা, আর হাতে তার চশমার লেন্সের একটি গোল গ্লাস। টেবিলের উপর রাখা আছে একটি লেন্সের পাওয়া যাচাইয়ের কাগজ। তাতে চশমার বিভিন্ন মাপ গোলাকার করে দেওয়া। ইউসুফ হাতের গোল গ্লাসটিকে সেই গোলাকার অংশের ওপর বসালেন। এরপর পাওয়ার যাচাই করে নিয়ে গ্লাসের ওপর সেই পাওয়ার বসিয়ে দিলেন। হয়ে গেল চশমার লেন্স বানানোর প্রথম পর্বের কাজ।
আজ ২২ বছর ধরে চশমার লেন্স তৈরি করছেন মোহাম্মদ ইউসুফ। তবে, প্লাস্টিকের গ্লাস নয়, আমাদের দাদা-নানাদের যে ভারী কাঁচের গ্লাস পরতে দেখেছি, ইউসুফ সে গ্লাসের লেন্স তৈরি করছেন এত বছর ধরে।
জুতো তৈরির কাজ ছেড়ে চশমার লেন্স তৈরির কাজে
এর আগে কাজ করতেন জুতো তৈরির কারখানায়। তবে সে কাজে সম্মান নেই বলে চলে আসেন চশমার কাজে। একে তো চশমা, তার ওপর গ্লাস বানানোর এই কাজে শিল্পীকে হতে হয় অনেক নিখুঁত আর সতর্ক। তা-ই এই কাজ করতেও ভালো লাগে ইউসুফের। তার কাছে টাকা না, বরং সম্মানটুকুই বড়।
তবে, টাকা যে ছিল না এই রাস্তায় তা কিন্তু না। সালের হিসেব ঠিক করে বলতে পারেন না। জানালেন, বিশ বছর বয়সে যখন এই কাজে আসেন তিনি, তখন এই গ্লাসের ব্যবসা বেশ রমরমাই ছিল। তখনও প্লাস্টিক লেন্সের চাহিদা শুরু হয়নি। তাই ভারী হলেও তখন কাঁচের গ্লাসই পরতো সবাই।
'যে চশমাটা পইর্যা আছেন, এটা কিন্তু আসলে চাঁচ, এটা প্লাস্টিক না। আগুনে ধরলে সাদা গুঁড়া বাইর হবে। প্লাস্টিক চোখ গরম কইর্যা ফেলে। চোখের ভিতরে থাকা পানি শুইষ্যা নেয়। তাও মানুষ এডিই পরে এখন।'
ভিতরে জমে থাকা কষ্ট থেকেই মনে হয় কথাগুলো সেদিন বলে ফেলেন ইউসুফ।
যে পথে তিনি হাঁটছেন, তা যে নিঃশেষ হতে আর দুয়েক বছরও বাকি নেই তা জানেন ইউসুফ। তবু এই জায়গা থেকে সরে আসার কথা ভাবতে পারেন না।
প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক প্লেট ভাত খেয়ে আসেন কাজে। সকাল দশটা থেকে বিকেল ছয়টা অব্দি থাকেন এখানে। কাজ তেমন নেই। তবু নিজের কাজ চলাকালীন অন্য কিছুতে সময় নষ্ট করতে চান না। একমনে কাজ করতে থাকেন শুধু। প্রথমে গ্লাসগুলোর পাওয়ার যাচাই, এরপর সেগুলোকে কেটে সমান করা, এরপর গ্লাসগুলোকে স্বচ্ছ ও মসৃণ করা এবং সবশেষে ডাইস দিয়ে পাওয়া বসানো। মূলত চারটি প্রক্রিয়ায় এই লেন্সগুলো তৈরি হয়। তবে, হাত বদল হয় অনেকবার, জানান তিনি।
ইউসুফের সঙ্গে এই কারখানায় কাজ করেন আরও তিনজন। কারখানার নাম ফরহাদ গ্রাইন্ডিং। চশমার কাঁচের গ্লাস যেখানে তৈরি হয়, তাকে বলা হয় গ্রাইন্ডিং। ইউসুফের মতো বাকিরাও প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে কাজ শুরু করেন, আর বাড়ি ফিরে যান বিকেল ছয়টায়। তবে, এ রুটিন আগে ছিল না। আগে সকাল সকাল এসে রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত কাজ করতে হতো। তখন অবশ্য চশমার দোকান আর এই কারখানাগুলো একসঙ্গে কাজ করতো এবং প্রতিটি বড় দোকানের সঙ্গে একটি করে কারখানা থাকতো।
ইউসুফ যখন কাজ শুরু করেন এই কারখানায়, তখন এখানে আরও ১৮-১৯ জন কারিগর ছিল। তখন কারখানাটিও ছিল এলিফ্যান্ড রোডে। ২০১০ সাল থেকে চাহিদা কমতে শুরু করলে পাটুয়াটুলিতে চলে আসে কারখানাটি। পাটুয়াটুলির পুরোনো দুটি চশমার দোকান- কামাল অপটিক্যাল আর মেহবুব অপটিক্যালসের সঙ্গেও তাদের নিজস্ব কারখানা ছিল। এলিফ্যান্ড রোড, নিউমার্কেটেও ছিল সাত-আটটা কারখানা। এই কারখানাগুলোতে কাঁচের গ্লাস বানানো হতো একসময়।
এখন হাতেগোনা চার পাঁচটা কারখানা আছে দেশজুড়ে
কিন্তু চায়না থেকে চশমার প্লাস্টিকের গ্লাস আসা শুরু করলে এই কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। বন্ধ হতে হতে এখন হাতেগোনা চার পাঁচটা কারখানা আছে দেশজুড়ে (যেখানে কাঁচের লেন্স বানানো হয়)। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় কারখানা হলো পাটুয়াটুলীর এই ফরহাদ গ্রাইন্ডিং।
পাটুয়াটুলির পাঁচ নাম্বার দোকানের পাশ ঘেঁষে একটা সরু গলি, সেই গলি থেকে এগোলেই সামনে পড়বে একটি ঘুপচি ঘর। এখানেই কাজ চলে এখন ফরহাদ গ্রাইন্ডিংয়ের। আগে যেখানে এই কারখানায় ৫০ জোড়া গ্লাস বানানো হতো, এখন সে সংখ্যা চার পাঁচে নেমে এসেছে। কারিগরও আছে মোটে চারজন। এরমধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যাষ্ঠ আব্দুল কাদের। চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন চশমার গ্লাসে। একসময় দাপিয়ে কাজ করতে পারতেন।
চশমার পাওয়ার এঁকে দেওয়া, মসৃণ করা, ডাইস দিয়ে পাওয়ার বসানো এসবই ছিল তার নখদর্পণে। কিন্তু এখন চশমার গ্লাস মসৃণের কাজ করেন শুধু। বয়স হয়ে যাওয়ায় সব কাজ করতেও পারেননা। দীর্ঘদিন কারখানায় মেশিনের কাজ করতে করতে কানেও বুঝি কম শোনেন। কাজও বেশিক্ষণ করতে পারেন না বলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেন। আর বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে কারখানার পুরোনো দিনগুলোর কথা ভাবেন।
'একসময় এইহানে অনেক মানুষ কাজ করতাম। হাসাহাসি, হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করতো সবাই। কাজের মাঝে গান ধইরতাম, এত কাজ থাকতো যে বিশ্রামের সময় পাইনাই। আর এখন তো কাজই নাই। বইস্যা বইস্যা অবসর সময়ে চা বিস্কুট খাই।'
বুঝলাম, সোনালী অতীত শুধু তাকে তাড়া করে বেড়ায় এখন। তবে ছেলেদের নিয়েও অনেক গল্প করেন। তিন ছেলে তার। তিন ছেলের কেউই লেখাপড়ার গণ্ডি পার করতে পারেনি তেমন। তবে এক ছেলে তুলনামূলক ভালো চাকরি করছে। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আরেকজন এখনও বাকি। তবে, ছেলেরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে বলে, দায়িত্বের ভারটা ভাগাভাগি হয়ে গেছে। নিজের পেশায় ছেলেদের ইচ্ছে করেই আনেননি তিনি। লেখাপড়া করাতে না পারলেও, সবাই যে নিজের কর্মসংস্থানের জায়গা খুঁজে পেয়েছে তাতেই নিশ্চিন্ত আব্দুল কাদের।
কাঁচামালগুলোও আসে ভারত থেকে…
এদিকে দশ বছর বয়সে কাজে আসেন শহীদুল ইসলাম। শুরু থেকে এই লাইনেই কাজ করছেন তিনি, তবে আগে অন্য কারখানায় কাজ করতেন। স্বল্পভাষী এই মানুষটি শুরু থেকেই তার সহকর্মীদের অভিজ্ঞতা শুনে আসছিলেন। কারণ এই গল্পগুলো তো তার নিজেরও। তাই তার দিকে মোড় ঘুরতেই তিনি বলে বসেন, 'আমাদের সবার অবস্থা একইরকম। সরকার যদি শুধু একটু বইলতো যে চায়না থেকে মাল আসবেনা, তাহলেই আমরা বাইচ্যা যেতাম। এই মালগুলো আসার আগে তো মানুষ ঠিকই আমাদের বানানো দেশীয় কাঁচের গ্লাসই পরতো।'
ব্যাস, এটুকুই। আর কথা বাড়াননি শহীদুল।
একটা সময় যখন চশমার ধারণা সেভাবে শুরু হয়নি তখন বয়স্করা লেখার উপরে জলভর্তি কাঁচের পাত্র রেখে পড়ার চেষ্টা করতেন। আবার শোনা যায় রাজা নীরো চোখের সামনে পালিশ করা পান্না রেখে তার সৈন্যদের যুদ্ধ দেখতেন। এরপর এলো এক টুকরো উত্তল কাচ। একে রিডিংস্টোন বলা হতো। ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা তখন চোখের সামনে ঐ রিডিংস্টোন ধরেই পড়াশুনার কাজ চালাতেন।
এরপর এক চক্ষু চশমা এবং তারপর ধীরে ধীরে বাইফোকাল লেন্সের যুগ শুরু হলো। প্রথমদিকে অভিজাত, বয়স্ক বা গণ্যমান্য ব্যক্তিরাই চশমা ব্যবহার করতেন। এরপর ধীরে ধীরে তা হয়ে ওঠে জনসাধারণের। আর এখন তো একদম ছোট্ট শিশুদেরও চশমার দ্বারস্থ হতে হয়।
তাই চশমা এখন আর বিলাসিতা বা নৈমিত্তিক কোনো ব্যাপার নয়। যেহেতু দৈনন্দিন ডাল-ভাতের মতোই এর ব্যবহার বেড়েছে, তাই মানুষও চশমার জন্য সহজ বা সাধ্যের মধ্যে থাকা চশমাই ব্যবহার করতে চায়। তাই কাঁচের লেন্সের বাজার পড়ে গেছে। কাঁচের গ্লাস যেমন ভারী তেমন ভঙ্গুর। সহজে বহনযোগ্যও নয়। দামটাও বেশি। তাই ব্যবহারকারীরা প্লাস্টিকেই বেছে নিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য। তাছাড়া প্লাস্টিকের চশমায় ফ্রেম বসানো যায় নানা ডিজাইনের। যেখানে গ্লাসের চশমার ফ্রেম থাকে হাতে গোনা কয়েকটি।
আবার, প্লাস্টিকের লেন্সগুলো যেহেতু একেবারে চায়না থেকেই প্রস্তুত হয়ে আসে তাই খরচও কম পড়ে। চশমা ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশে এখন যে কয়টা চশমা বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে ৯৮% চশমাই আমদানিকৃত। আর বাকি দুই ভাগ দেশে উৎপাদিত। কিন্তু সে উৎপাদনের কাঁচামাল অর্থাৎ বিভিন্ন রকম পাউডার, মেডিসিন, মেশিনগুলোও আসছে সেই ভারত থেকেই।
৩৩ বছর ধরে কাজ করছেন লিটন
এ নিয়ে আক্ষেপের সুরে আরেক কারখানার চশমাশিল্পী মোহাম্মদ লিটন বলেন, 'আমাগো দেশে কিছুই তো পয়দা হয়না। মুখে মুখেই কেবল দেশ বড়লোক হইসে, কাজের বেলায় নাই। সবই বাহিরের দেইশ থেকা আহে।'
লিটন নিজেও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত দশ বছর বয়স থেকে। তবে কারখানাটি তার নিজেরই। পাটুয়াটুলির ঘি পট্টিতেই নূরুক হক টাওয়ারের পাশেই তার কারখানা। কারখানার আরেক অংশীদার দেবাশীষ (ছদ্মনাম)। দেবাশীষ আর লিটন বাদে এই কারখানায় কাজ করেন আরও একজন। সবমিলিয়ে এখানে কাজ করছেন মোট তিনজন। আগে এ সংখ্যা ছিল সাত থেকে আটজন। তখন এই কারখানা দোতালা আর তিনতলা নিয়ে ছিল। এখন সবে একটি মাত্র ঘর। আগে এই ঘরেই দিনে ৪০ জোড়া গ্লাস তৈরি হতো। আর এখন হয় দুটো। মোট তিনজন কারিগর থাকলেও, সেই কাজ একজনই অনায়াসে করতে পারে। তবুও তিনজন আসেন, চা খান, ঘুরে বেড়ান যদি কোনো কাজ পাওয়া যায় এই আশায়।
সকাল বারোটায় শুরু করেন পাঁচটার মধ্যেই সব কাজ শেষ। মাসে এই কারখানা থেকে লিটনের হাতে উঠে আসে হাজার দশেকের মতো টাকা বাকিদের বেতন এবং নিজস্ব কারখানা বলে, কাঁচামালের খরচও পোহাতে হয় তাকে। আগে কাঁচ বাংলাদেশে তৈরি হতো মিটফোর্ডে কাঁচের দোকানগুলোতে। কিন্তু এখন সব জিনিস কলকাতা থেকে আনতে হয় বলে, সেখানেও অনেক খরচ পড়ে।
'দশ বছর বয়সে আমি যখন এই কাজে আসছি, তখন এই পাড়ার মধ্যেই ২২টা কারখানা ছিল। এখন কমতে কমতে দুইডা হইইয়া গেছে। এ-ই যে এখন দুপুর দুইডা বাজে, এই দুই ঘণ্টায় বানাইলাম দুই জোড়া গেলাস। তার মানে ২০০ টাকার কাজ করসি। এই হলো অবস্থা, ভাত খাওয়ার পয়সাও থাকেনা।' কথাগুলো বলতে বলতে চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসে লিটনের।
কাঁচের এই লেন্স তৈরিতে মোট চার ধরনের ওষুধ দিতে হয়। এসব ওষুধ আর মেশিন নিয়ে বিশ বাইশ বছর ধরে কাজ করতে করতে অনেকেরই হাতের নখ এবং চামড়া নষ্ট হয়েছে। গ্লাসগুলা মসৃণের জন্য একটা লোহার স্ট্যন্ডের সঙ্গে আটকে রাখতে হয় লেন্সগুলো। মাঝে মাঝে ঐ লোহার স্ট্যান্ডের সূচালো অংশ গেঁথে যায় হাতে।
এরকম দুর্ঘটনাগুলোতে খরচ মালিকপক্ষ থেকে দেওয়া হয় কিনা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে ইউসুফ বলেন, 'এ আর এমন কি! এডা কিছু না। আমরা নিজেরাই ঠিক কইর্যা ফেলি। এটিএস দিলেই ঠিক হইয়া যায় সব।'
তবে তাদের হাতের বিভিন্ন জায়গার সেই ক্ষত দেখলে বোঝা যায় হয়তো যেখান জীবনযুদ্ধের কাছে এ-সব ক্ষত অতি তুচ্ছই মনে হয় তাদের। তাই মালিক খরচ দিবে কি দিবেনা তা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার যেটুকু মাইনে পান, তাতেই খুশি তারা। অন্তত মাস শেষের আগেই টাকায় টান পড়ে না।
তাছাড়া, আগে তো দুপুরের খাবারও দেওয়া হতো মালিকের বাসা থেকে। এখন সে দিন নেই। কেবল একটাই চাওয়া, জীবিকার রাস্তাটি যেন পুরোপুরি বন্ধ না হয়ে যায়।
শিল্পীর তকমাটুকুও পান না…
চশমার লেন্স তৈরির জন্য প্রতিটা পাওয়ারের এক একটা ডাইস আছে। সে ডাইসে বসিয়েই পাওয়ার বসানো হয় এই কাঁচের গ্লাসগুলোতে। তাতে দাম পড়ে ১৩০-৬০০০ টাকার মধ্যে। কারণ এই চশমাগুলো দোকানে গিয়ে বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। যে গ্লাস এখানে ১০০ করে বানানো হয়, দোকানে গিয়ে তা হয়ে যায় ৩০০। আবার, ৬ হাজার টাকার গ্লাস বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকায়, জানান ইউসুফ। কিন্তু কারিগরদের এতে কোনো লাভ নেই। আর এখন তো কাঁচের লেন্সের চাহিদা কমে যাওয়ায়, সব দোকানেও বিক্রি হয়না এই লেন্সগুলো।
এমনকি কারিগরদের অভিযোগ, অনেক সময়ই চশমার দোকানগুলো থেকেই 'কাঁচের লেন্স' নেই বলে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে অন্যতম পুরোনো চশমার দোকান মেহবুব অপটিক্যালের কর্মচারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, 'গ্লাসের চশমা বানাতে কষ্টও বেশি, সময়ও লাগে বেশি। তাই দামটাও বেশি। তাই কাস্টমার এরচেয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের প্লাস্টিকের চশমাই কেনেন। আর আমরা তো চাহিদা যার বেশি তা-ই বিক্রি করবো।'
অনেকে কারখানা থেকেও সরাসরি লেন্স বানিয়ে নেন। তবে সে সংখ্যা খুবই কম।
তবে দোকানদার এবং কারিগর উভয়পক্ষেরই আফসোস, প্লাস্টিকের এই লেন্স চোখের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা বেশিরভাগই জানেনা। ফ্যাশন, দাম কম আর সহজে চলাফেরা করা যায় বলে চশমার বাজার এখন প্লাস্টিকের উপরেই নির্ভরশীল। তাই তরুণরাও কাঁচের লেন্স ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ পান না। তারপরও কাঁচের লেন্সের গুটি কয়েক যে কাস্টমার আসে তারাও বয়স্কই হয়ে থাকেন বেশিরভাগ সময়।
আসলে, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এবং নতুনদের আগমনে পুরোনো সবকিছুই বিলীন হতে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। একসময় পাটুয়াটুলি মানেই চশমার গুদাম আর মেশিনের ঘটাঘট আওয়াজ। এখন আর সে আওয়াজ নেই। সব এখন একবারে তৈরি হয়ে আসে দেশের বাইরে থেকে। তাই অন্যান্য শিল্পের মতো চশমাশিল্পও আজ বিলুপ্তপ্রায়। তবে আক্ষেপটা এখানেই। হারিয়ে যাওয়া অন্যান্য শিল্প লুপ্ত হয়ে গেলেও তা শিল্পের পরিচয় পায়। কিন্তু চশমাশিল্পীরা সে তকমাটুকুও পান না।