উন্নয়নশীল দেশের কৃষকদের মধ্যে চশমা বিতরণ করতে ১৫ মিলিয়ন ডলার দান করলেন ম্যাকেঞ্জি স্কট
বিলিয়নিয়ার মানবহিতৈষী ও আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের প্রাক্তন স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কট উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কৃষকদের মধ্যে চশমা বিতরণের জন্য একটি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজকে ১৫ মিলিয়ন ডলার দান করেছেন বলে খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ভিশনস্প্রিং নামক একটি সামাজিম প্রতিষ্ঠানের হাতে এ অর্থ তুলে দেওয়ার মাধ্যমে ম্যাকেঞ্জি স্কট একটি নতুন রেকর্ড গড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, চোখে ঝাপসা দেখার ফলে তারা কাজকর্ম করতে না পেরে আরও দরিদ্রে পরিণত হচ্ছেন। এ সমস্যাটি সমাধান করতে ম্যাকেঞ্জির এই দানের অর্থই সর্বোচ্চ একক ব্যক্তিগত সাহায্য।
বিশ্ব দৃষ্টি দিবসে এ দানের কথা ঘোষণা করেন ৫২ বছর বয়সী ম্যাকেঞ্জি স্কট। এ উদ্যোগের আওতায় ভারত, বাংলাদেশ, ঘানা, কেনিয়া ও উগান্ডার হাজার হাজার নিম্নআয়ের চা, কফি, কোকোচাষী ও কারুশিল্পীদের মধ্যে চশমা বিতরণ করা হবে।
ভিশনস্প্রিং বলছে, তাদের ৭০ মিলিয়ন ডলারের 'লিভলিহুডস ইন ফোকাস' ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের চা,কফি, কোকোচাষী ও কারুশিল্পীদের দৃষ্টিশক্তিজনিত সমস্যা দূর করার ফলে তারা এক বিলিয়ন ডলার বেশি আয় করতে পারবে।
ভিশনস্প্রিং এর প্রধান কার্যনির্বাহী এলা গুডউইন বলেন, "ম্যাকেঞ্জি স্কটের কাছ থেকে পাওয়া এই উপহার থেকে বুঝা যাবে একজোড়া সামান্য চশমা কিভাবে মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে এবং তাদের জীবিকা উপার্জনে ও দারিদ্র্য দূর করতে অবিশ্বাস্য ভূমিকা রাখতে পারে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "আর এই কাজের মাধ্যমে আমরা দক্ষিণ এশিয়া ও উপ-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের কৃষক ও কারুশিল্পী দৃষ্টিশক্তিজনিত সেবার যে অভাব এতদিন বোধ করেছে, তা দূর করতে চাই। সেজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর পাশাপাশি আমাদের আরও অনেক মানবহিতৈষী বিনিয়োগকারীও দরকার।"
অলাভজনক সংস্থা ভিশনস্প্রিং জানিয়েছে, তাদের 'ভিশন অ্যাকসেস প্রোগ্রাম' এর আওতায় চশমা নেওয়া কর্মীদের ৬৫-৮৫ শতাংশই আগে কোনোদিন দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করাননি এবং তাদের মাধ্যমেই এসব কর্মীরা প্রথমবারের মতো চশমা পরতে পেরেছেন।
ভিশনস্প্রিং এর ভাষ্যে, "৭০০ বছর পুরনো এই প্রযুক্তিটি যে সুবিধা দেয়, তাদের (কৃষক-কারুশিল্পী) কাছে এটির গুরুত্ব অনেক বেশি। চশমা নেওয়ার ফলে তারা আগের চেয়ে ভালো দেখতে পায়, আগের চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে এবং তাদের আয় বেড়ে যায়। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, চশমা পরার ফলে জীবনমান উন্নত হয়, হতাশা-উদ্বেগ কমে এবং পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায়।
উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালে জেফ বেজোসের সাথে বিচ্ছেদ থেকে ৩৮ বিলিয়ন ডলার লাভ করেন ম্যাকেঞ্জি স্কট। এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাওয়ার পরপরই তা বিলিয়ে দিতে শুরু করেন তিনি।
বিচ্ছেদের পর ম্যাকেঞ্জি জানান, 'নিজের সম্পদের ভাণ্ডার শূন্য না হওয়া পর্যন্ত' তিনি দান করে যাবেন। এযাবত ম্যাকেঞ্জি স্কট জনকল্যাণমূলক কাজে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দান করেছেন।
সম্প্রতি ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটসের গৃহীত মানবহিতৈষী উদ্যোগ 'গিভিং প্লেজ'কে দেওয়া এক চিঠিতে ১৫ মিলিয়ন ডলার দানের ঘোষণা দেন ম্যাকেঞ্জি।
১৯৯৩ সালে জেফ বেজোসকে বিয়ে করেছিলেন ম্যাকেঞ্জি স্কট। এর এক বছর পরেই আমাজনের যাত্রা শুরু হয় বেজোসের হাত ধরে। তবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী, জেফ বেজোস নিজে ১৩৬ বিলিয়ন ডলারের মালিক হলেও এখনো 'গিভিং প্লেজ'-এ সই করেননি।