যেভাবে আপনি চ্যাটজিপিটির সাথে কথা বলবেন
একটি হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে প্রায় ১০ কোটিরও বেশি ব্যক্তি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছেন, যেটি ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক হিসাব করলে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে চলছে। কিন্তু, যখনই আমি মানুষের সাথে কথা বলতে যাই, তাদের কেউই চ্যাটজিপিটি সম্পর্কে তেমন আশাবাদী নন। এর ভুল এবং কৃত্রিমতার কথা উল্লেখ করে তারা একে কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন।
তবে, এর বিপরীতে কীভাবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা উচিৎ সে সম্পর্কে আমি একটি সংক্ষিপ্ত দিকনির্দেশনা দিতে চাই। চ্যাটজিপিটি আপনার হয়ে নানা কাজ করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে আপনার নোট সাজানো, ব্যাকরণ সংশোধন করা, বিভিন্ন গাণিতিক বিষয় নিয়ে কাজ করা। তবে আমি সবচেয়ে সাধারণ বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা ফিতে চাই: একে কীভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে। এটি ভালোভাবে ব্যবহার করার আগে আপনার মাথায় রাখতে হবে, এটি মানুষ নয়, এটি একটি এআই বট।
যখন আপনি কোনো মানুষের সাথে কথা বলেন এবং তারা আপনাকে বুঝতে না পারে, তখন আপনি প্রশ্নকে আরও সহজভাবে উপস্থাপন করেন। চ্যাটজিপিটির কাছে প্রশ্ন করার সময় এই জিনিসটিই সবাই ভুল করে বসে। আপনি চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে আরও ভালো ফলাফল পাবেন, যদি আপনি প্রশ্নটি আরও জটিল ও বিস্তারিতভাবে করেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি এই বটটিকে জিজ্ঞাসা করেন, 'মার্কসবাদ কী?', তবে আপনি মধ্যম মানের একটি জবাব পাবেন, যেটিক আপনি সহজেই গুগল অথবা উইকিপিডিয়ায় পেয়ে যাবেন। এর বদলে, আপনি প্রশ্নটিকে আরও নির্দিষ্ট করুন, "উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসি মার্কসবাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কোনগুলো?" চ্যাটজিপিটি এই প্রশ্নের উত্তর আরও ভালোভাবে দিতে পারবে। এবং একইসাথে এটি এমন এক ধরনের প্রশ্ন যেটির উত্তর গুগল বা উইকিপিডিয়ায় সহজে পাওয়া যাবে না।
চ্যাটজিপিটি আরও ভালো করবে, যদি আপনি এই প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন একের পর এক জুড়তে থাকেন। যেমন, জিজ্ঞাসা করুন, যে যে ফরাসি মার্কসবাদীদেরকে সেটি উল্লেখ করেছে, তাদের কী কী উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে, এবং জার্মান মার্কসবাদীদের সাথে তাদের কী কী পার্থক্য রয়েছে। এভাবে একের পর এক করতেই থাকুন।
চ্যাটজিপিটি 'তুলনা'র ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ করে। এর সারকথা হলো, চ্যাটজিপিটিকে কোন পথে নিয়ে যেতে চান, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে তাকে জানাতে হবে। একটি সুচিন্তিত বিস্তারিত প্রশ্ন একে আরও ভালোভাবে তথ্য খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া প্রশ্নটি করার ধরন, ভঙ্গি এবং বুদ্ধিমাত্রিক স্তরও ঠিক করে দিতে হবে। এর কাছে ডিনার পার্টিতে খোশগল্প করার মতো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে হবে না। চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করা অনেকটা কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো।
চ্যাটজিপিটির সক্ষমতাকে আরেকটু ঝালিয়ে নেওয়ার উপায় হলো একে তৃতীয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে প্রশ্ন করা। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, 'মুদ্রাস্ফীতির ফলে কী কী ক্ষতি হবে?', তাহলে এমন উত্তর পাওয়া যাবে, যেটি ভুল নয়, আবার তেমন অসাধারণ কিছুও নয়। এর বদলে এভাবে প্রশ্ন করা যায়, 'মুদ্রাস্ফীতির ফলে কী কী ক্ষতি হবে? দয়া করে মিল্টন ফ্রিডম্যানের ধারণার আলোকে উত্তর দিন।'
ফ্রিডম্যানের নাম উল্লেখ করার মাধ্যমে আপনি একটি নির্দিষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরের উত্তর চাইলেন। যদি ফ্রিডম্যানকে সঠিক মানুষ বলে মনে না হয়, তবে তার বদলে অন্য কোনো অর্থনীতিবিদকেও ঠিক করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হলো, দুইজন অর্থনীতিবিদের বলা বক্তব্যের তুলনা করে উত্তর চাওয়া।
এই অস্বাভাবিক আচরণের কারণ বুঝতে হলে চ্যাটজিপিটির মডেলটি কীভাবে কাজ করে সেটি সম্পর্কে জানতে হবে। চ্যাটজিপিটি উত্তর দেওয়ার সময় কোনো যুক্তি প্রয়োগ করে না, ইন্টারনেটের সাহায্যও নেয় না (যদিও তারা এর আগে ইন্টারনেটের তথ্য পড়ে নিয়েছে)। এর বদলে, চ্যাটজিপিটি কোনো শব্দের পর কোন শব্দ আসলে একটি সন্তুষ্ট করার মতো উত্তর দেওয়া যায়, সেই শব্দ খুঁজতে থাকে।
একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যাক: যদি বলা হয়, 'দ্য স্টার স্প্র্যাঙ্গেলড [ফাঁকা জায়গা]', তাহলে সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায়, ফাঁকা জায়গায় 'ব্যানার' শব্দটি বসবে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতকে 'দ্য স্টার স্প্র্যাঙ্গেলড ব্যানার' বলা হয়। এবং সর্বদাই এই ধারা মেনেই শব্দগুলো পরপর লেখা হয়। এই চ্যালেঞ্জটি বেশ সহজই। তবে বেশিরভাগ প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো এত সহজ হয় না। এ কারণেই চ্যাটজিপিটির সঠিক দিক দেখিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। কুকুরের প্রশিক্ষক হিসেবে নিজেকে চিন্তা করে একে জানান আপনি ঠিক কোন জিনিসটি চাইছেন।
আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বেশি চেষ্টা করতে গেলেই চ্যাটজিপিটি ভুল করবে। এটি মাঝেমধ্যে এমন কিছু তথ্য প্রদান করে, যার কোনো অস্তিত্বই নেই। আমি কয়েকদিন আগে ব্লুমবার্গের অপিনিয়ন কলামিস্ট এবং আইন বিশেষজ্ঞ ক্যাস সানস্টাইনের সাথে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছিলাম। আমি প্রশ্ন করি আমরা দুজনে মিলে কোনো বই লিখেছি কিনা। চ্যাটজিপিটি আমাদের দুজনের জ্ঞান ও গবেষণার আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে একটি কাল্পনিক বইয়ের তথ্য দেয়, যেটি কস্ট-বেনেফিট অ্যানালাইসিসের দর্শনগত ভিত্তি নিয়ে।
সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এ ধরনের কোনো বই আমরা লিখিনি। সম্ভবত চ্যাটজিপিটিকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে সবকিছুর উত্তর 'হ্যাঁ-বাচক' দিতে। আর এ কারণেই শব্দ নির্ধারণের কাজ ঠিকভাবে কাজ করার জন্য এটি কাল্পনিক তথ্য তৈরি করে। ফলে আইডিয়া তৈরি করা কিংবা আপনার কাজে সাহায্য করার জন্য চ্যাটজিপিটি কার্যকর হলেও ফ্যাক্ট-চেকার হিসেবে এটি তেমন কার্যকর নয়।
আমি এই কলামটি লেখার জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করিনি। তবে যদি আমাকে লিখতে হতো, তবে আমি জানি ঠিক কীয়াভবে চ্যাটজিপিটিকে নির্দেশনা দিতে হবে। এবং আমি নিশ্চই একে বলতাম টাইলার কোয়েনের মতো উত্তর দেওয়ার জন্য।