কেমন আছে হালখাতা?
'পুরোনো দিনে হালখাতায় যা হতো, এখন তো সেসব নেই। হালখাতার দিন আমাদের গনেশ পূজা হয়। পূজা শেষে খাতার মধ্যে সিঁদুরের ফোটা, ধান, দূর্বা, তুলশি দেওয়া হয়। এরপর সারাদিন লোকজন আসে, তাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। পুরোনো টাকা-পয়সা যা বাকি থাকে, সেগুলো দেয়। আমাদের এখানকার সরকার এসে খাতাপত্রে লিখে দিয়ে যায়। হালখাতার হালচাল এখন ভালো না। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাই তো ভালো না। এখন আমি বার্ধক্যে পড়ে গেছি, এজন্য আগেরমতো উদ্দীপনা এখন আর নাই'- বলছিলেন তাঁতিবাজারের অশীতিপর স্বর্ণ বন্ধক ব্যবসায়ী মনিমালা বুলিয়ানের কর্ণধার প্রদীপ কুমার গাঙ্গুলী।
প্রদীপ কুমার গাঙ্গুলির বয়স ৮০ পেরিয়ে গেছে আরো বছর তিনেক আগে। আগের মানুষগুলো ও আড়ম্বরের অভাবে হালখাতার উৎসব উপভোগও যেন অনেকটা মিইয়ে গেছে বলে আক্ষেপ তার। এ শুধু ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার গাঙ্গুলির কথা নয়, তাঁতিবাজারের আরেক স্বর্ণ বন্ধক ব্যবসায়ী পিপলু গাঙ্গুলির গলাতেও বিষণ্ণতার সুর। পহেলা বৈশাখ ও দূর্গা পূজার দশমীতে দু'বার হালখাতা করলেও কোথায় যেন অতীতের উদযাপনের জৌলুস হারিয়ে গেছে।
শাঁখারিবাজারের পথ ধরে হাঁটতে থাকলে দেখা যাবে বামে ডানে অজস্র দোকান। একেক ব্যবসায়ী একেক পণ্যের পসার সাজিয়ে বসেছেন। তবে, শাঁখারিবাজার কিংবা তাঁতিবাজারের সকল ব্যবসায়ী হালখাতা করেন না। স্বর্ণ, পোশাক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশেষ করে হালখাতার প্রসার দেখা যায় বেশি। আর যারা বিভিন্ন শিল্পের সাথে ব্যবসায়ে যুক্ত তারা হালখাতার পরিবর্তে বিশ্বকর্মা পূজা করেন। বলাই বাহুল্য, শাঁখারিবাজারে হিন্দু ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখ ও দূর্গা পূজার বিজয়া দশমীতে হালখাতা করেন। বিজয়াতেও একইভাবে ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে করান মিষ্টিমুখ।
হালখাতা কী?
আপামর বাঙালির প্রাণের উৎসব বলতে যে উৎসবের নাম সর্বাগ্রে উঠে আসে সেটি হলো নববর্ষ। আর নববর্ষ অর্থাৎ বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিতে ব্যবসায়ীরা যে অনুষ্ঠানটি ধুমধামে পালন করে থাকেন- সেটি হলো হালখাতা। হালখাতা আসলে ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন বছরের নতুন সূচনার নাম।
পুরোনো খাতার হিসাব চুকিয়ে পঞ্জিকা অনুসারে বছরের প্রথমদিনে তারা খোলেন ব্যবসায়ের নতুন খাতা। লাল সালুতে মোড়ানো বিগত বছরের খাতাটিকে শিকেয় তুলে সূচনা করেন নতুনের। বিগত বছরে যত পাওনা ছিল তা আদায় করে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেন তারা। ক্রেতাদের লক্ষ্মী মনে করে ব্যবসায়ীরা আদর আপ্যায়ন করে থাকেন তাদের।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান তার 'বাংলা নববর্ষ' পাঠ্যে উল্লেখ করেছেন হালখাতার কথা। সেখানে তিনি বলেছেন, "পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল 'হালখাতা'। এ অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান। তাই ফসলের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকা হাতে না এলে কৃষকসহ প্রায় কেউই নগদ টাকার মুখ খুব একটা দেখতে পেত না। ফলে সারাবছর বাকিতে প্রয়োজনীয় জিনিস না কিনে তাদের উপায় ছিলো না।"
তিনি আরো লিখেন, "পয়লা বৈশাখের হালখাতা অনুষ্ঠানে তারা দোকানীদের বাকির টাকা মিটিয়ে দিতেন। অন্তত আংশিক পরিশোধ করেও নতুন বছরের খাতা খুলতেন। হালখাতা উপলক্ষ্যে দোকানীরা ঝালর কাটা লাল নীল সবুজ বেগুনি কাগজ দিয়ে দোকান সাজাতেন। ধূপধুলো জ্বালানো হতো। মিষ্টিমুখ করানো হতো গ্রাহক-খরিদ্দারদের। হাসি-ঠাট্টা, গল্পগুজবের মধ্যে বকেয়া আদায় এবং উৎসবের আনন্দ উপভোগ দুই-ই সম্পন্ন হতো। হালখাতাও এখন আর তেমন সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় না। এখন মানুষের হাতে নগদ পয়সা আছে। বাকিতে বিকিকিনি এখন আর আগের মতো ব্যাপক আকারে হয় না।"
একইভাবে আবুল কালাম মঞ্জুর মোরশেদ সম্পাদিত 'নববর্ষ ও বাংলার লোক-সংস্কৃতি' বইয়ের 'বাংলা নববর্ষ: ঐতিহ্যে ও স্মৃতিতে' পাঠ্যে কাজী ফজলুর রহমান উল্লেখ করেছেন, "মহাজন, পাইকার, বড় কোম্পানি নতুন বছরের হিসাব রাখার জন্য নতুন খাতায় দেনা-পাওনা, বেচা-কেনার হিসাব লেখা শুরু করত। বেশ লম্বা খাতা, লাল কাপড়ের মলাট, লালু সুতার বাঁধন খুলে হিন্দু ব্যবসায়ীরা হয়ত লিখত শ্রী শ্রী গনেশয় নম। মুসলিম ব্যবসায়ী শুরু করত 'বিসমিল্লাহ' লিখে।"
"সকাল থেকে শুরু হয়ত খদ্দের, খাতক, ছোট খুচরা প্রত্যশায়ীদের আগমনের পালা। গত বছরের পাওনাটা একেবারে শোধ করা না গেলেও যা যা পারে সাধ্যমত দিয়ে তার পুরাতন দেনার ভার লাঘব করতো। পাইকার মহাজন তাদের আপ্যায়ন করতো মিষ্টি দিয়ে, যাবার সময় বাড়ির জন্য মিষ্টির পোঁটলা হাতে তুলে দিত। অনেকে আসত বাড়ির ছেলে পুলেকে সাথে নিয়ে। আমিও এমন হালখাতায় গেছি আমার পিতার সাথী হয়ে। টাকা-পয়সার ব্যাপারটা আসল উদ্দেশ্য হলেও তার কথাবার্তা উহ্যই থাকতো। হিসাব পত্র নিয়ে বিরোধ বাঁধতো না, নতুন করে দরাদরি হতো না। আর্থিক সম্পর্কের অতিরিক্ত যে একটা মানবিক সম্পর্কও আছে দুই পক্ষের মাঝে সেটাই প্রাধান্য পেত।"
হালখাতার 'হাল' শব্দটি সংস্কৃত ও ফারসি উভয় ভাষার সমন্বয় বলে মনে করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় হাল শব্দের অর্থ 'লাঙল'। অপরদিকে ফারসি ভাষায় হাল অর্থ 'নতুন'। লাঙল বা হালের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর কৃষকেরা উৎপাদিত দ্রব্য বিনিময়ের হিসাব যে খাতায় হিসাব লিখে রাখতো সেটাই হালখাতা হিসেবে পরিচিত ছিল।
প্রাচীনকালে হালখাতাকে অনুকরণ করে জমিদারদের কাছ থেকে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য পুণ্যাহ চালু করেন সম্রাট আকবর। একই নিয়ম মেনে বাংলার নবাব মুর্শীদকুলি খাঁ পুণ্যাহ প্রচলন করেন। খাজনা বা রাজস্ব আদায়ের জন্য আয়োজন হতো এই উৎসবের।
হালখাতার হাল-হকিকত
ঢাকায় হালখাতা আসলে কোথায় তৈরি হয় এই প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই থাকে। তাই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলে গেলাম বাংলাবাজারে। সেখানে পেলাম লোকনাথ বুক এজেন্সি নামক এক দোকান। লোকনাথ বুক এজেন্সি 'লোকনাথ ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা'-এর জন্যই বেশি বিখ্যাত। তবে তারা হালখাতা, জাবেদা খাতা, খতিয়ান খাতা সহ ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় আরো অনেক খাতা ছাপান।
লোকনাথ বুক এজেন্সির কর্ণধার সাইদুজ্জামান বলেন, 'সারা বাংলাদেশ থেকেই মহাজনরা আমাদের এখান থেকে হালখাতা কেনেন। এখন হালখাতার পাশাপাশি হালখাতা কার্ডও চলে। তবে এখনো হালখাতাই বেশি চলে।'
বাংলাবাজারে কেবল লোকনাথ বুক এজেন্সিই নয়, আরো কিছু প্রতিষ্ঠানও হালখাতা ছাপায়। তবে হালখাতার প্রকৃত আখড়া খুঁজতে যেতে হয়েছে বাবুবাজারের সৈয়দ হাসান আলী লেনে। পুরান ঢাকার ইসলামপুর পেরিয়ে কিছুদূর এগোলেই সৈয়দ হাসান আলী লেন। সেখানেই মূলত হালখাতা, হালখাতা কার্ডের ছাপাখানা ও বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকারি মূল্যেই সেখানকার ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকেন এগুলো। সৈয়দ হাসান আলী লেনের সরু রাস্তা দিয়ে হাঁটলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি দোকানে লাল মলাট মোড়ানো খাতা রয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা এই খাতাগুলোকে হালখাতার পরিবর্তে 'টালি খাতা' হিসেবে অভিহিত করে।
সৈয়দ হাসান আলী লেনের দোকানগুলোও মহাজনের হিসেবে চলে। একেজন মহাজনের অধীনে কর্মচারী থাকে অনেক।
হালখাতায় মোড়ানো লাল কাপড়টি স্থানীয় বাজার থেকেই কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। খাতার মাপ অনুযায়ী কাগজ কাটেন আগে। এরপর দিস্তার উপর দিস্তা দিয়ে তৈরি করেন একেকটি খাতা।
ঢাকার বাইরেই হালখাতার চাহিদা থাকে অনেক বেশি। ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া সহ সারা বাংলাদেশেই পৌঁছে যায় সৈয়দ হাসান আলী লেনের হালখাতা। ঢাকার ভিতরে কাপড় ব্যবসায়ী, স্বর্ণ ব্যবসায়ী, চালের ব্যবসায়ীরা খাতা সংগ্রহ করেন বেশি। ঢাকার ভেতরে শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, নবাবপুর, উত্তরা, মিরপুরের ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন পাইকারিমূল্যে খাতা কেনার জন্য।
কাগজের দাম বৃদ্ধির ভুক্তভোগী ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই
মেসার্স ইউসুফ এন্ড কোং এর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার প্রায় ৪৫ বছর ধরে ব্যবসায়িক হিসাবের বিভিন্ন খাতা, ফাইলের ব্যবসায় করে আসছেন। তিনি বলেন, 'বৈশাখের সময় টালি বা লালসালু খাতা বিক্রি হয়। তবে আগে মানুষ যেরকম খাতা কিনতো এখন সেভাবে কিনছে না। আগে মানুষ দশটা খাতা কিনলে এখন কেনে চারটা বা পাঁচটা।'
লোকনাথ বুক এজেন্সির কর্ণধার সাইদুজ্জামানের গলাতেও ছিল একই সুর। তিনি বলেন, 'কাগজের প্রচুর দাম হওয়াতে আজ একজন ক্রেতা বলে গেল যে গতবার ২০০০ টাকার খাতা কিনেছিলেন আর এবছর তার দাম ৪০০০ টাকা। একই মাপ এবং একই পরিমাণের খাতা কিনেছেন তিনি। মহাজনদের তো হিসাব আলাদা, প্রতিবছর যে হিসাব ঐটাই। তার দুই দিস্তার টালি লাগবে, এবারও তাই লেগেছে। তার তো ব্যবসায় বাড়েনি।'
হালখাতার দাম কেমন হয় জানতে চাইলে সৈয়দ হাসান আলী লেনের ব্যবসায়ীরা সাধারণ কাগজ ও অফসেট কাগজ ভেদে দাম ভিন্ন হওয়ার কথা জানান।
হালখাতার কাগজ মূলত জিএসএম (গ্রাম পার স্কয়ার মিটার) অনুযায়ী বিক্রি হয়। একেক জিএসএমে দেখা যায় দামের ফারাক। যেসব কাগজের জিএসএম বেশি সেগুলোর দামও বেশি হয়। আবদুর রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্সের ম্যানেজার মোহাম্মদ সৈয়দ আহম্মেদ বলেন, 'অফসেট কাগজ অর্থাৎ ৭০ জিএসএম (গ্রাম পার স্কয়ার মিটার) সেটা ৮৫ টাকা দিস্তা। ৫৫ জিএসএমের কাগজ ৭৫ টাকা দিস্তা। আরেকটা কাগজ আছে রয়্যাল কাগজ নাম, সেটার দাম একটু কম- ৬৫ টাকা দিস্তা।'
২৫০-৩০০ পাতার একেকটি খাতার দাম হয় ২২৫ টাকা, তবে সেগুলো আকারে ছোট। সে তুলনায় লম্বা টালি খাতার দাম কিছুটা কম হয়। এখানে দিস্তা অনুযায়ী খাতা বিক্রি হয় বেশি আর সেভাবেই দাম নির্ধারিত হয়।
হালখাতার দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ক্রেতার মধ্যেও রয়েছে। বৈশাখ উপলক্ষ্যে নেত্রকোণা থেকে ব্যবসায়ী জামিলুর সৈয়দ হাসান আলী লেনে এসেছেন খাতা কেনার জন্য। তিনি বলেন, 'এখন দাম আগের থেকে অনেক বেশি। দামের সাথে মিলাতে পারলে কিনবো। নতুন বছরে এসব খাতা বেশি চলে। এজন্য কিনতে এসেছি।'
হালখাতার পাশাপাশি চলে হালখাতা কার্ড
হালখাতা ছাড়াও সৈয়দ হাসান আলী লেনের বড় আকর্ষণ হালখাতা কার্ড। বাহারি রং এবং ডিজাইনের হালখাতা কার্ড এখানে পাওয়া যায়। ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে সেলিম প্রিন্টার্স হালখাতা কার্ড, বিয়ের কার্ড তৈরির কাজ করছে সৈয়দ হাসান আলী লেনে।
সেলিম প্রিন্টার্সের কর্মচারী মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, 'হালখাতা কার্ডের চাহিদা আগে অনেক বেশি ছিলো। এখন মানুষ কম নিতে আসে। এখন ঢাকার থেকেও মফস্বল শহরে হালখাতা কার্ড চলে বেশি। ঢাকার বাইরে একজন পান দোকানদারও হালখাতা করে, ঢাকায় যেটা হয় না।'
হালখাতা কার্ড এখানে বিক্রি করা হয় ১০০ পিস থেকে ১০০০ পিস হিসেবে। মান অনুযায়ী দামের ফারাক দেখা যায়। ১০০ পিস কার্ড ১৫০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্তও হতে পারে। এখানে যেমন প্রতি পিস ১ টাকা দরের হালখাতা কার্ড পাওয়া যায় তেমনি ৩০ টাকা দরের কার্ডও শোভা পায় এখানে। যে কার্ডে ডিজাইন বেশী তার দামও বেশি হয়।
বাংলাবাজারের মা প্রোডাক্টের হালখাতা কার্ড ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, 'এখন হালখাতার কার্ড বেশি চলে না। ৫, ১০ বা ২০ জন নেন; এর থেকে বেশি কেউ নিতে চায় না। কিছু দোকান ছাড়া এখন তো হয়ই না বলতে গেলে।'
কার্ডের জন্য দোকানগুলোতে গিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলেই তারা প্রস্তুত করে রাখে হালখাতা কার্ড। ১০০০ পিস কার্ড ছাপাতে তাদের সময় সৈয়দ হাসান আলী লেনের ব্যবসায়ীদের সময় লাগে ২ থেকে ৩ দিন।
বৈশাখ ছাড়াও এই টালি খাতাগুলো জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিক্রি হয়। হালখাতা ছাড়াও এখানকার দোকানে স্কুল কলেজের প্র্যাক্টিক্যাল খাতাও বিক্রি হয়।
কেন কমছে গ্রাহক?
হালখাতার গ্রাহক কমে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাগজের মূল্য বৃদ্ধিকেই দুষছেন লোকনাথ বুক এজেন্সির কর্ণধার সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, 'কাগজের দাম এখন দ্বিগুণ নয়, আরো অনেক বেশি বেড়েছে। ৩০০ টাকার কাগজের দাম এখন ১২০০ টাকা। প্রচুর বেড়েছে দাম। এতেই ক্রেতা কমে গেছে।'
এবছরের ব্যবসা নিয়ে বিপুল আক্ষেপ রয়েছে আবদুর রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্সের মহাজন বাচ্চু মিয়ার। তিনি বলেন, 'ব্যবসা এখন আর আগের মতো নাই। আগে মানুষের বিক্রি ভালো ছিল, মানুষ লিখতো বেশি। আর এখন মানুষ লেখে কম তাই বেচাকেনাও কম হয় আর খাতাও কম হয়। ৮৫ টাকা দিস্তায় খাতা বিক্রি করলে লাভ হয় দুই টাকা। দুই টাকা দিস্তা প্রতি লাভে কেমনে পোষায় বলেন?'
তবে হালখাতার উদযাপন কমে যাওয়ার পেছনে 'জেনারেশন গ্যাপ'ও ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তাঁতিবাজারের বর্ষীয়ান ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার গাঙ্গুলি। চারপাশের সবকিছু ধীরে ধীরে ডিজিটালাইজড হয়ে যাওয়া এবং প্রজন্মের মধ্যে ফারাকের কারণে উদযাপনে ভাটা পড়েছে বলে ধারণা তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ীদের।