শেয়ারবাজার সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারে চ্যাটজিপিটি: গবেষণা
সংবাদ পর্যালোচনা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি শেয়ারের দাম সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারে! ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্সের অধ্যাপক আলেহান্দ্রো লোপেজ-লিরার গবেষণায় সম্প্রতি এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা হলেও মূলত সকল এআই চ্যাটবটের ক্ষেত্রেই 'বৃহৎ ল্যাংগুয়েজ মডেল' মূল কাজটি করে থাকে। এক্ষেত্রে এই ল্যাংগুয়েজ মডেল ব্যবহার করেই শেয়ার বাজার সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়া সম্ভব বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
শেয়ারের সাথে সংশ্লিষ্ট সংবাদের হেডলাইন ইতিবাচক কি-না নেতিবাচক সেটি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করেছেন আলেহান্দ্রো। এরপর গবেষণার ফলাফলে চ্যাটজিপিটির দেওয়া সম্ভাব্য ধারণার সাথে পরবর্তী দিনের শেয়ারের মূল্যে বেশ সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়।
চ্যাটজিপিটি তৈরির সময় হয়তো এত সূক্ষ্ম বিষয়গুলো অনেকেরই ভাবনার বাইরে ছিল। কিন্তু প্রতিনিয়ত প্ল্যাটফর্মটিতে ডেটাসেটের পরিমাণ বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার ফলে শেয়ারবাজার সম্পর্কে আগাম ধারণার মতো নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
যদিও অধ্যাপক আলেহান্দ্রোর এ গবেষণাটি এখনও রিভিউ করা হয়নি। তবে চ্যাটজিপিটি সত্যিকার অর্থেই শেয়ারবাজার সম্পর্কে যথার্থভাবে আগাম ধারণা দিতে পারলে সেটি আর্থিক খাতের বহু মানুষের চাকরিকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২৬ মার্চ প্রকাশিত গোল্ডম্যান স্যাকসের তথ্যমতে, শতকরা ৩৫ শতাংশ আর্থিক চাকরি এআইয়ের দখলে চলে যেতে পারে।
অন্যদিকে আর্থিক খাতে বৃহৎ ল্যাংগুয়েজ মডেল ব্যবহারের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও গবেষণায় ফুটে উঠেছে। গবেষণার ফলাফলটি কোনো গাণিতিক হিসাব-নিকাশ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়নি। এমনকি গবেষণায় শেয়ারের টার্গেট প্রাইজ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
অবশ্য গবেষণার ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অধ্যাপক আলেহান্দ্রো বলেন, "আর্থিক বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত চাকরিতে অবশ্যই এই ধারণা প্রয়োগ করা হবে। কেননা স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শেয়ারবাজার বিশ্লেষণের জন্য টাকা খরচ না করে মডেলে তথ্য ইনপুট দিয়ে আগাম ধারণা নিতে চাইবে।"
গবেষণায় নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ সম্পর্কে আগাম ধারণা পেতে অধ্যাপক আলেহান্দ্রো ও তার সহযোগী ইউয়েহুয়া মোট ৫০ হাজার সংবাদের হেডলাইন বেছে নেন। এরপর এসব হেডলাইনকে চ্যাটজিপিটি ৩.৫ ভার্সন ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়।
পরবর্তীতে শেয়ারবাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় সকল শেয়ারের ক্ষেত্রেই হেডলাইন পর্যালোচনা করে এ মডেলটি কার্যকর ফলাফল দিয়েছে। এমনকি আপাতদৃষ্টিতে একটি সংবাদকে কোনো কোম্পানির জন্য নেতিবাচক মনে হলেও, ঐ খবরটি যে উল্টো শেয়ারের মূল্য বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে সেটিও ঠিকঠাক বিশ্লেষণ করতে পেরেছে চ্যাটজিপিটি।
আলেহান্দ্রো সিএনবিসিকে জানান, হেডজ ফান্ডের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই তার কাছে গবেষণাটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে, শেয়ারবাজারের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তিটি নিজেদের সিস্টেমে যুক্ত করতে থাকলে চ্যাটজিপিটির আগাম ধারণার নির্ভুলতার পরিমাণ কমে আসতে পারে।
এ সম্পর্কে আলেহান্দ্রো বলেন, "যেহেতু বহু মানুষ টুলটি ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে শেয়ারবাজার এই পদ্ধতিটির সাথে অনেকটা মানিয়ে নেবে। ফলে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে লাভ করার সম্ভবনাও ধীরে ধীরে কমে আসবে।"
"আমার ধারণা, এভাবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে থাকলে আগামী পাঁচ বছর পর মার্কেট সম্পর্কে টুলটি আর যথাযথ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবে না," বলেন তিনি।