আবেগীয়ভাবে বুদ্ধিমানরা এই দুটি নিয়ম মেনে চলেন নেতিবাচক চিন্তা দূর করতে!
এখন কেন? কেন এখনই এরকম হতে হলো? এখনই কেন এসব সুযোগ সামনে এল?
নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করা থেকে বিরত রাখতে পারলাম না। কয়েক মাস ধরে ব্যবসায় মন্দা চলার পর হঠাৎ এতগুলো সুযোগ আমার সামনে আসতে লাগলো, যার সবগুলো আমার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। আমি বিহ্বল হয়ে গেলাম, নেতিবাচক চিন্তা আমায় ঘিরে ধরলো। আমি অভিযোগ করতে শুরু করলাম।
কিন্তু এই অভিযোগ করা আমার বা আমার ব্যবসার জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। আমার উচিত ছিল সুযোগগুলোকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা। এর বদলে আমি নিজেকে নেতিবাচক চিন্তার চক্রে বেঁধে ফেললাম। কিছু সুযোগ তো এমনিতে হারিয়ে গিয়েছিল, যেগুলো বাকি ছিল সেগুলো আমার হাত থেকে ফসকে যেতে লাগলো।
আমি নিশ্চিত, পাঠকদের মধ্যে অনেকেই ঠিক একই রকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন কখনো না কখনো। আপনিও কি নিজের আবেগ-চিন্তার প্রবল তোড়ে এতটাই উদ্বেল, হতবিহ্বল হয়ে পড়েন যে একটা জায়গায় আটকে যান এবং কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে পারেন না?
যদি তা-ই হয়, তাহলে 'ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স' বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে আপনাকে নিজের আবেগ বুঝতে হবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে তা নিজেরই প্রয়োজনে কাজে লাগাতে হবে। আর আবেগীয়ভাবে বুদ্ধিমান যারা, তারা কিছু 'নিয়ম' বা 'ফ্রেমওয়ার্ক' মেনে চলেন। এই নিয়মগুলো মেনে চললে আবেগের মুহূর্তে নিজেকে সামলে নেওয়া সহজ হয় এবং নিজের আবেগ-অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখা যায়।
এবার আসা যাক কিভাবে আপনি 'আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা'র নিয়মগুলো কাজে লাগাবেন?
ব্লু ডলফিন রুল
মনোবিজ্ঞানে 'হোয়াইট বিয়ার প্রবলেম' বলে একটি সমস্যার কথা বলা হয়, যেখানে আপনি নির্দিষ্ট কিছু চিন্তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয় না, বরং সেসব চিন্তা আরও বেড়ে যায়।
রুশ লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কির লেখা একটি শতবছরের পুরনো প্রবন্ধ থেকে এই সমস্যার নামটি নেওয়া হয়েছে। দস্তয়েভস্কি বলেছিলেন, আপনি যখন একটা হোয়াইট পোলার বিয়ার বা মেরু ভালুকের কথা চিন্তা করতে না চাইবেন, তখন ঘুরেফিরে সেটাই বারবার মনে আসবে।
তাহলে এই শ্বেত ভালুকের চিন্তা ঝেড়ে ফেলবেন কিভাবে? এর জন্য দরকার একটা 'নীল ডলফিন'।
এখানে 'নীল ডলফিন'কে একটি বদলি চিন্তা হিসেবে দেখা হয়েছে। অর্থাৎ, শ্বেত ভালুকের বদলে আপনি নীল ডলফিনের কথা ভাববেন, তাহলে মনের মধ্যেও দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।
আমার 'হোয়াইট বিয়ার' ছিল- 'এখন কেন? এখন তো আমি এই কাজটা করতে পারব না'। এই চিন্তার বদলে আমার ব্লু ডলফিন হলো- 'আগে দেখি কোনটা আমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তারপর একে একে কাজগুলো শেষ করবো'। আপনিও চাইলে অন্য একটি চিন্তার মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তাকে এভাবে হটিয়ে দিতে পারেন। যেমন:
ক) 'নার্ভাস হওয়া যাবে না'-এর বদলে 'আমি খুবই উত্তেজিত, এই কাজটা ভালো হবেই'
খ) 'আরেকটা ব্যর্থ আইডিয়া'-এর বদলে 'কিভাবে আমি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারি?'
গ)'আমি এটা করতে পারবো না'র বদলে 'আমাকে এটা করতেই হবে, অন্তত চেষ্টা তো করতে হবে' হতে পারে আপনার ব্লু ডলফিন।
মিল্ক কার্টন রুল
কোন কোন জিনিস পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তা নিয়ে চিন্তা না করে বরং কী কী করা সম্ভব সেদিকে মনোযোগী হন।
মনোবিজ্ঞানের একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক: এক স্বামী প্রতিদিন তার স্ত্রীর উপর বিরক্ত হয় কারণ সে দুধ ফ্রিজে রাখতে ভুলে যায়। ফলে গরম দুধ দিয়ে তাকে নাস্তা খেতে হয়। এই ব্যক্তির থেরাপিস্ট তাকে বোঝালেন যে, সম্পর্ক সুন্দর রাখার উপায় হচ্ছে স্ত্রীর অভ্যাস বদলে দেওয়া নয়, বরং সমস্যা সমাধানের অন্য উপায় খোজা। যেমন, তিনি চাইলে দুই কার্টন দুধ কিনতে পারেন।
যদিও আমার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল, আপনারও হতে পারে... আমার সামনে যা ছিল তা থেকেই সমাধান বের করতে হতো। আপনিও কি হতাশায় ভুগছেন? আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? কোনোভাবে মন অবশ-অসাড় হয়ে গেছে?
যদি তাই হয়, তাহলে নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন:
.১ কিসের উপর আমার নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই?
২. কিসের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আছে?
৩. যা জানলাম তা দিয়ে কিভাবে আমার সমস্যা সমাধান করতে পারি বা হতাশা কমাতে পারি?
এখানেই 'মিল্ক কার্টন রুল' আপনাকে বিকল্প সমাধান খুঁজতে, কার্যকরী চিন্তা করতে এবং জীবনকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
তাই আপনি যদি আবেগীয় দিক থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা হয়, তাহলে এই নিয়মগুলো মনে রাখুন। এসব পন্থা অবলম্বন করলে মাথায় যে নেতিবাচক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তা চলে যাবে এবং অভিযোগ করার বদলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে।