অল্প হাঁটা যেভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
স্পোর্টস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আহারের পর অল্প সময় হাঁটলে তা খাওয়ার পর গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়ার স্কুল অব মেডিসিনের ফিজিওলজির অধ্যাপক হোসে ভিনা ব্যাখ্যা করে বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থাভেদে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম করা, ওষুধ বা ইনসুলিন নিতে বলেন চিকিৎসকরা।
মাদ্রিদের কমপ্লুটেন্স ইউনিভার্সিটির সেল বায়োলজির অধ্যাপক কারমেন সানজের মতে, খাবার গ্রহণের পর পুষ্টি (গ্লুকোজ সহ) অন্ত্র থেকে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু ব্যায়াম করার সময়, এমনকি হাঁটার সময়ও পেশি এ ধরনের চিনি শোষণ করে 'কোষে শক্তি সরবরাহ করে এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা কমায়'।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেলায় কোষগুলো পর্যাপ্তভাবে ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেয় না।
কারমেন সানজ বলেন, শারীরিক কার্যকলাপ আরেকটি প্রক্রিয়া যা গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। গবেষণায়, একজন মানুষের দাঁড়িয়ে থাকার প্রভাবের সাথে খাবারের পরে হালকা হাঁটার প্রভাব তুলনা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা দেখতে পান, খাবারের পর দাঁড়িয়ে থাকলেও রক্তে শর্করার মাত্রা কমে, তবে হালকা হাঁটা এক্ষেত্রে আরো বেশি কার্যকর। দাঁড়িয়ে থাকা ৯.৫ শতাংশ শর্করা কমায় আর হাঁটা কমায় ১৭ শতাংশ।
স্প্যানিশ ন্যাশনাল সেন্টার ফর কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ (সিএনআইসি) এর মহাপরিচালক ভ্যালেন্টিন ফাস্টার উল্লেখ করেছেন, হাঁটার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ইতিবাচক প্রভাব আরও বাড়ে।
সিএনআইসির বৈজ্ঞানিক পরিচালক বোর্জা ইবানেজ বলেন, "প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো (ধমনীর গাত্রে কোলেস্টেরল বা ফ্যাট জমা হওয়া) রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আমরা বোঝার চেষ্টা করছি কোন কাজ অঙ্গগুলোকে ইনসুলিন প্রতিরোধী করে তোলে এবং এই প্রক্রিয়াগুলা কীভাবে এমন অবস্থার জন্য দায়ী।"
টাইপ ২ ডায়াবেটিস ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চ বংশগত উপাদান বহন করে এবং শারীরিক কার্যকলাপ এর বিকাশের ঝুঁকি কমাতে পারে।
স্প্যানিশ সোসাইটি অব এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন এর ম্যানেজমেন্ট কমিটি অব দ্য ডায়াবেটিস এরিয়ার সদস্য পেড্রো হোসে পাইনস বলেন, এই রোগ অতিরিক্ত ওজনের প্রভাবের সাথেও সম্পৃক্ত। রোগীর শারীরিক অবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে হাঁটা একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে।
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ডায়াবেটিস রোগী ছাড়াও সবার জন্যই হাঁটার পাশাপাশি প্লাঙ্কের মতো ব্যয়াম (এনডিউরেন্স এক্সারসাইজ) করা গুরুত্বপূর্ণ। যারা হাঁটার সুযোগ পান না, তাদের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে সপ্তাহে দুই বা তিন সেশন এনডিউরেন্স এক্সারসাইজ করা।
যারা খেলাধুলায় সময় দিতে পারেন না, তাদেরকে তিনি ১০ থেকে ৩০ মিনিট কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে ভারি ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। যারা ইতোমধ্যে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন, তাদের জন্যও ব্যায়াম উপকারী।
হোসে ভিনা বলেন, অন্তত ৩০ মিনিট পরপর বসা থেকে উঠে দাঁড়ানো টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়বেটিসে রোগীদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই বিষয়ে সিএনআইসির মহাপরিচালক ফাস্টার বলেন, "ব্যায়ামের অভ্যাস শুধুমাত্র শর্করার মাত্রা এবং ডায়াবেটিসের উপর প্রভাব ফেলে না, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল সহ কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে।"
উক্ত গবেষণায় রক্তচাপের উপর হাঁটার প্রভাবের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
গবেষকরা কর্মক্ষেত্রে হালকা হাঁটার জন্য বিরতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। তারা বিশ্বাস করেন, কর্মক্ষেত্রে মাঝারি বা ভারি ব্যায়ামের চেয়ে অল্প কিছু সময় হাঁটা বেশি উপকারি। আর যাদের জন্য ভারি ব্যায়াম নিষিদ্ধ তাদের ক্ষেত্রে এট একটি ভালো বিকল্প।
ভিনা ও ফাস্টার উভয়ই বলেন, কর্মক্ষেত্রে হালকা ব্যায়াম করার সুযোগ থাকলে তা অনেক সাহায্য করে। সারাক্ষণ বসে না থেকে ৫৫ মিনিট কাজের পর ৫ মিনিট হাঁটার পরামর্শ দেন তারা।
গবেষকরা দেখতে পান, প্রতিদিন ৩০ মিনিটের হালকা শারীরিক কার্যকলাপ মৃত্যুহার কমায় ১৭ শতাংশ।
গবেষণায় প্রতি ২০ মিনিটে বসা থেকে উঠে ২ মিনিট অথবা প্রতি আধা ঘণ্টায় ৫ মিনিট ব্যায়ামের কথাও তুলে ধরা হয়।
ইবানেজ বলেন, নিয়ম করে পালন করতে হবে এমন কঠোরতার দরকার নেই। তবে দিনে ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি শারীরিক কার্যকলাপ ভালো। তবে যেকোন ধরনের ব্যায়ামই রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতার জন্য উপকারী।