দুধরাজ, লাউডগা, গোলবাহার অজগর...সুন্দর যত সাপ!
আজ ১৬ জুলাই বিশ্ব সাপ দিবস। প্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সরীসৃপ অনেকক্ষেত্রেই মানুষের অহেতুক ভীতি ও কুসংস্কারের কারণে মারা পড়ে। অথচ প্রকৃতিতে সাপেরও রয়েছে কিছু অপরিহার্য ভূমিকা।
সাপ অন্যান্য সরীসৃপের থেকে অনেক বেশি সহনশীল, তাই অনেক ভিন্নমুখী আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তবে বর্তমানে নগর উন্নয়ন, গাছ-বন উজার ও যান্ত্রিক সভ্যতার বহুমুখী আগ্রাসনে অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো সাপও ঝুঁকির মুখে।
দেশে সাপ রক্ষায় নিয়োজিত অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন-এর প্রচারণা কার্যনির্বাহী বাপ্পী খান জানান, সাপ শিকারি প্রাণী হিসেবে খাদ্যশৃঙ্খলে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ক্ষতিকর রোডেন্ট জাতীয় প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণে ফসল রক্ষা করে, প্রাণীবাহিত সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমায়। সাপের বিষ থেকে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করা হয়।
সাপের এসব অবদান সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষ সাপকে ভয় পায়, সাপ দেখলেই মেরে ফেলে। যদিও বিষধর সাপের সংখ্যা খুবই কম। এভাবে নির্বিচারে সাপ হত্যার ফলে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ইঁদুর ও ক্ষতিকর কীট বাড়ছে, ফসলের অপচয় হচ্ছে। এসব কীট বা ইঁদুর দমনে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
কাজেই এখন প্রয়োজন সাপকে ভয় না পেয়ে বরং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধমেই মানুষ ও সাপসহ অন্যান্য প্রাণীর প্রাকৃতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ও বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দেশের কিছু পরিচিত-স্বল্পপরিচিত সাপ। তার ছবি ও কলমেই এসব সাপ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক দু-চার কথা।
দুধরাজ সাপ। ইংরেজি নাম Copper-Headed Trinket Snake.
এরা নির্বিষ। তবে ভয় পেলে বা উত্তেজিত হলে শরীরটাকে ইংরেজি এস (S) অক্ষরের আকার ধারণ করে আক্রমণ করে। এরা ইঁদুর, ব্যাং,পাখি সহ বিভিন্ন প্রাণী খায়।
গোলবাহার অজগর। ইংরেজি নাম Reticulated Python.
এরা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সাপ। পার্বত্য অঞ্চলে দুর্লভ এই সাপের কদাচিৎ দেখা মেলে। বুনো শুকর, বড় হরিণসহ অনেক প্রাণীই এর খাদ্য তালিকায় আছে।
খয়রি ফনিমনসা। ইংরেজি নাম Tawny Cat Snake.
বিড়ালের মতো সুন্দর চোখের এই সাপটি সিলেট বিভাগীয় বনাঞ্চল ও পার্বত্য বনাঞ্চলে দেখা যায়। টিকটিকি, গিরগিটি ও ছোট পাখি এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে।
দাঁড়াশ সাপ। ইংরেজি নাম Indian Rat Snake.
সারা দেশে এদের দেখা যায়। অত্যন্ত নিরীহ ও নির্বিষ এই সাপ ইঁদুর খেয়ে আমাদের অনেক শস্য বাঁচায়।
বেত আঁচড়া। এদের ইংরেজি নাম Painted Bronzeback Tree Snake.
নির্বিষ সুন্দর এই সাপটিকে সারা দেশেই দেখা যায়। বন থেকে বাগান সবখানেই এর সমান বিচরণ। টিকটিকি, গিরগিটি ও ছোট ব্যাঙ এর মূল খাবার।
দাগি লেজি সবুজ বোড়া। এদের ইংরেজি নাম Redtail Bamboo Pit Viper.
বাংলাদেশ প্রাপ্ত তিন প্রজাতির সবুজ বোড়ার ভেতরে এরাই বেশি সহজলভ্য। সিলেট বিভাগীয় বনাঞ্চল, পার্বত্য বনাঞ্চল ও সুন্দরবনে এদের দেখা যায়। হোমো টক্সিন বিষের বাহক এই সাপের শিকারের তালিকায় পাখি, কাঠবিড়ালি, ইঁদুরসহ আরও অনেক প্রাণী রয়েছে।
এরা হেলে/ইনি সাপ নামেই বেশি পরিচিত। এদের ইংরেজি নাম Buff Striped Keelback.
হেলে/ইনি সাপ সারা দেশে দেখা যায়। নির্বিষ এই সাপের শিকারের তালিকায় রয়েছে ব্যাঙ, ইঁদুর, গিরগিটি, মাছসহ আরও অনেক প্রাণী।
ঢোড়া সাপ। এদের ইংরেজি নাম Checkered Keelback.
এরা দেশের সর্বাধিক পরিচিত সাপ। সারা দেশে দেখা যায়। মাছখেকো এই সাপ মাছ ছাড়াও ইঁদুর, গিরগিটি, টিকটিকি, পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী শিকার করে।
অজগর সাপ। এদের ইংরেজি নাম Burmese Python.
দেশের অনেক বনাঞ্চলেই অজগর দেখা যায়। এরা ওত পেতে শিকার করে। হরিণ, শুকর, বানরসহ অনেক প্রাণীই এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে।
রঙিলা ঢোড়া সাপ। এদের ইংরেজি নাম Painted Keelback.
নির্বিষ সুন্দর এই সাপটিকে সচরাচর জলাশয়ে দেখা যায়। এর মূল খাদ্য মাছ।
লাউডগা সাপ। এদের ইংরেজি নাম Green Vine Snake.
মৃদু বিষযুক্ত এই সাপটি সারা দেশেই দেখা যায়। দেখতে অনেকটা লাউ গাছের ডগার মতো বলে এর নাম লাউডগা সাপ। গেছো এই সাপটির খাদ্য তালিকায় রয়েছে গিরগিটি, টিকটিকি, ইঁদুর, পাখি, ব্যাঙসহ আরোও অনেক ছোট প্রাণী।
লালঘাড় ঢোড়া সাপ। এদের ইংরেজি নাম Red Necked Keelback.
এরা একই সঙ্গে বিষধর এবং বিষাক্ত। লালঘাড় ঢোড়া বনাঞ্চলের সাপ। এদের খাদ্যতালিকায় ইঁদুর, টিকটিকি, গিরগিটি, আচিলাসহ অনেক প্রাণী রয়েছে।