সাবলেট থাকতে গিয়ে যে অদ্ভুত সব নিয়ম মানতে হয়!
প্রথম যেবার ঢাকায় থাকতে এসেছিলেন তৃণা (ছদ্মনাম), তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, হলে সিট পাননি তখনো। প্রথম বর্ষের অন্যান্য নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হলের গণরুমে ওঠার সুযোগ ছিল, কিন্তু তাতেও ছিল রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা। পরিবার থেকে সায় মেলেনি তাই। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই অচেনা এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেট নিয়ে থাকতে শুরু করেন তৃণা।
ছোট্ট একটা রুমে দুটো সিঙ্গেল খাটে দুইজনের থাকার জায়গা। আর কোনো আসবাবপত্র রাখার উপায় নেই। মাসে প্রত্যেককে চার হাজার টাকার উপর ভাড়া গুনতে হয়। তবু ক্যাম্পাসের কাছে বলে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তৃণা। কিন্তু সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই শুরু হয় সাবলেটের বিপত্তি। বাসার কর্ত্রীর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে রান্নাঘরে যাওয়া যাবে না, রাত ১০টার পর ফোনে কথা বলা যাবে না, জোরে হাসাহাসি করা যাবে না, ১২টার পর ঘরে লাইট জ্বালিয়ে পড়া যাবেনা- এমন নানা বিধিনিষেধে ব্যাহত হচ্ছিল সাধারণ জীবন। এসব থেকে বাঁচতে দিনের বেশিরভাগ সময় বাসার বাইরে কাটাতে শুরু করলেন তৃণা। কিন্তু বাসায় ঢোকার সময় নিয়েও ছিল কড়াকড়ি। আরো নানা বিষয় নিয়ে গৃহকর্ত্রীর মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ভাড়ার অগ্রিম টাকা ফেরত না নিয়েই এক মাস পর বাসা ছেড়ে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন তৃণা।
তার ভাষ্যে, "সাবলেট নিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সবার আমার মতো সুযোগ থাকে না। আরো গুরুতর সমস্যার মধ্যে থেকেও একই বাসায় মাসের পর মাস থাকতে বাধ্য হয় অনেকেই। এই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করার মতো জায়গাও নেই নারী শিক্ষার্থীদের।"
ঢাকা শহরে আজকাল বাসা খুঁজতে গেলে 'টু-লেট'এর চেয়ে 'সাবলেট' ভাড়ার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে কয়েকগুণ বেশি। বাড়ি ভাড়ার খরচ কমাতে অনেক পরিবারই ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে এক বা দুই রুম সাবলেট দেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। শিক্ষার্থীদের আনাগোনা যেসব এলাকায় বেশি সেখানে সাবলেট দেওয়ার প্রবণতাও বেশি। শিক্ষার্থীদের সাবলেট নেওয়ার জন্য সুবিধাজনক জায়গাগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি নীলক্ষেত, আজিমপুর, চানখারপুল এলাকা, পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকা, ফার্মগেটের আশেপাশে ইন্দিরা রোড, রাজাবাজার এলাকা, মহাখালী ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা উল্লেখযোগ্য।
বেশিরভাগ পরিবার নানা দিক বিবেচনায় নারী শিক্ষার্থীদের কাছে বাসা সাবলেট দেওয়াকে সুবিধাজনক মনে করেন। কিন্তু অপরিচিত পরিবারের সঙ্গে সাবলেট থাকতে গিয়ে প্রতিনিয়তই অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সাবলেট থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের।
বড় সমস্যা নিরাপত্তাহীনতা
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীরা জানান, যেকোনো ফ্ল্যাট সাবলেট নেওয়ার আগে তাদের প্রধান চিন্তা থাকে সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে। ফ্ল্যাটে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ থাকলে সে বাসায় ওঠার ব্যাপারে অতিরিক্ত ভাবনা থাকে সবার। কারণ সাবলেট বাসায় পুরুষ সদস্যদের যৌন হয়রানির ঘটনা অনেক পরিচিত তাদের কাছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, "গতবছর পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকার একটা ফ্ল্যাটে এক ছোট পরিবারের সঙ্গে সাবলেট নিয়েছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যেই সেই বাসার মধ্যবয়সী পুরুষটির আচার-আচরণে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। রান্নাঘরে আমি একা কাজ করতে গেলে প্রায়ই পুরুষটি এসে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকত। গায়ে পড়ে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো এমনকি মাঝরাতে আমার ঘরের দরজায় নক করতেও ছাড়েনি সে!"
"বাধ্য হয়ে প্রথম মাসের মাঝামাঝিতেই সেই বাসা ছেড়ে এক বান্ধবীর মেসে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ছিল এটা। অনেকদিন ট্রমাটাইজড ছিলাম। ঢাকার বাইরে থাকায় নিজের পরিবারের কারো সঙ্গে শেয়ারও করতে পারিনি। সাবলেটে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে," বলছিলেন তিনি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইশা জানান, মহাখালীতে সাবলেট বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে তিনি নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলেন যে বাসায় কোনো পুরুষ থাকবেনা। কর্মজীবি মা তার দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন এমন পরিবার দেখে নির্ভাবনায় সেখানে ওঠেন মাইশা। কিন্তু বাসায় ওঠার পরের মাসেই দেখেন সেই পরিবারের বড় ছেলেও তাদের সঙ্গে স্থায়ীভাবে থাকতে এসেছে। বন্ধুদের কাছে সাবলেটে যৌন হয়রানির ভয়ানক কাহিনী শুনে আসা মাইশা নিজের ক্ষেত্রে আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি। তাই দেরি না করে বাসাটি ছেড়ে দেন তিনি।
মাইশা বলেন, "সাবলেট মানেই অপরিচিত পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে একসাথে থাকা। কিন্তু আগে থেকে সেই পরিবারটি কেমন হবে তা পুরোপুরি বোঝার তো কোনো উপায় নেই। তাই প্রতি পদেই তটস্থ থাকতে হয় মেয়েদের।"
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কেয়া রায়ের সাবলেট বাসায় থাকার অভিজ্ঞতা ২০০৮ সাল থেকে। প্রথম বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট পাওয়ার আগে এবং মাস্টার্স শেষে হলের সিট ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে সাবলেট বাসাতেই থাকছেন কেয়া। এ পর্যন্ত মোট চারবার বাসা পরিবর্তন করেছেন তিনি। বর্তমানে কাটাবন এলাকায় যে ফ্ল্যাটটিতে থাকছেন সেটির মোট তিন বেডরুম আর ড্রয়িং-ডাইনিং রুম মিলিয়ে ভাড়া ২৫ হাজার টাকার মতো। সেখানে এক বেডরুম সাবলেট নিয়ে কেয়ার ভাড়া গুণতে হচ্ছে ১১ হাজার টাকা। সাবলেট নেওয়া সব বাসাতেই ভাড়ার এমন অসামঞ্জস্যতার শিকার হয়েছেন তিনি। বেশিরভাগ ফ্ল্যাটেই আসল ভাড়া গোপন করে সাবলেট দেওয়া হয় বলে জানান কেয়া। অগ্রিম জামানত হিসেবেও কয়েকমাসের ভাড়া দাবি করা হয় অনেক বাসায়। যা শিক্ষার্থীদের পক্ষে দেওয়া অনেকটাই কষ্টকর।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হামীম ইসরাত হিরক নীলক্ষেত এলাকার এক কোয়ার্টারে সাবলেট থাকতেন। সেখানে ছোট এক বেডরুমে দুই বন্ধু মিলে ভাড়া দিতেন নয় হাজার টাকা। সাথে বাথরুম পরিষ্কার করার খরচ হিসেবে যোগ হত আরো ৩০০ টাকা। সরকারি কোয়ার্টারে বাইরের কাউকে বাসা ভাড়া দেওয়াই যেখানে বেআইনি, সেখানে এমন চড়া ভাড়ায় নিয়মিত সাবলেট দেওয়া হচ্ছে এলাকাটিতে- জানালেন তিনি।
সাবলেটের ভাড়া নিজেদের ইচ্ছা মতোই ঠিক করেন শুরুতে যারা পুরো বাসা ভাড়া নিয়েছেন তারা। এক রুমের ভাড়া হিসেবে অনেকসময় পুরো বাসা ভাড়ার অর্ধেকেরও বেশি অংকের টাকা খরচ করতে হয় সাবলেটে থাকা ভাড়াটিয়াদের। বিনা নোটিশে যখন তখন ভাড়া বাড়ানোর ঘটনাও খুবই স্বাভাবিক এক্ষেত্রে।
অদ্ভুত সব নিয়ম
সাবলেট থাকতে গিয়ে নানা ধরনের অদ্ভুত নিয়মের সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রায় সব নারী শিক্ষার্থীকেই। হিরক জানান, বাসার কর্ত্রীর রান্না শেষ না হলে রান্নাঘরে যাওয়ার নিয়ম নেই তার। ছুটির দিনে প্রায়ই সকাল থেকে দুপুর দুইটা-তিনটা পর্যন্ত রান্না করেন কর্ত্রী। হিরকের তাই রান্নার সুযোগ হয় না বিকেলের আগে। বাথরুমে গোসলের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। বাসার সেই পরিবারের বাসিন্দাদের বাথরুম ব্যবহার শেষ হলে তবেই সুযোগ পাওয়া পান হিরক বা তার বন্ধু। এমন স্বেচ্ছাচারিতা প্রায় সব সাবলেট বাসিন্দাদেরই সহ্য করতে হয়।
কেয়া বলেন, "সাবলেট দেওয়ার পর বাসার কর্ত্রীরা এমন একটা ভাব করেন যেন আমাদের দয়া করে থাকতে দিচ্ছেন। অথচ আমরা না থাকলে সেই বাসার পুরো ভাড়া হয়ত বহনই করতে পারতেন না তারা। হিন্দু হওয়ার কারণেও অনেক বাসাতে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ মানতে হয়েছে আমাকে। নিজের ঘরেও পূজা করা বা কোনো দেবতার মূর্তি-ছবি রাখার অনুমতি ছিল না আগের বাসায়।"
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঐশি বলেন, "সাবলেটের একটা বড় সমস্যা হলো নিজেদের সুবিধা মতো বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুটহাট প্রেশার দেয় অনেক বাসাতেই। আমি আগে যে বাসায় থাকতাম সেখানে তাদের আত্মীয় আসবে বলে এক মাসের নোটিশেই আমাকে বাসা ছাড়তে বলা হয়। সে মাসে আমি বাসা খুঁজতে শুরু করার পর আবার জানানো হয় তাদের আত্মীয় আসবে না, তাই বাসা ছাড়তে পারব না। এমন অনিশ্চয়তা নিয়ে কোথাও থাকা অনেক কষ্টকর।"
এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর বাসায় ফেরার বাধ্যবাধকতা, বেশিক্ষণ বাসার বাইরে থাকলে জবাবদিহিতা, বাসায় কোনো মেহমান আসার অনুমতি না থাকার মতো অনেক নিয়মের কথা জানিয়েছেন সাবলেট থাকা শিক্ষার্থীরা। নতুন বাসা খোঁজার ঝামেলা এড়াতে বেশিরভাগ সময়ই সব নিয়মকানুনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে থাকার চেষ্টা করেন এই নারী শিক্ষার্থীরা।
আছে কিছু সুবিধা
সাবলেটের কি শুধুই নেতিবাচক দিক রয়েছে? ভালো কোনো দিক কি নেই? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আসমা সুলতানা প্রভা বলেন, "আমার মাস্টার্স শেষ হলো পাঁচ মাস আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সিট ছেড়ে দিতে হয়েছে সাথে সাথেই। কিন্তু চাকরির প্রস্তুতির পড়াশোনা করার জন্য ঢাকায় থাকা জরুরী ছিল। আমার পরিবার চট্টগ্রামে থাকে, তাই বাসা ভাড়া নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ঢাকায় ভালো এলাকায় একটা ফ্ল্যাটের ভাড়া কতটা ব্যয়বহুল তা তো জানেনই! তাছাড়া একা মেয়ের জন্য বাসা খুঁজে পাওয়াও খুব ঝামেলা। নিরাপত্তার প্রশ্ন তো আছেই। এই অবস্থায় মনমতো সাবলেট বাসা খুঁজে পাওয়া একটা বিরাট স্বস্তির বিষয় ছিল।"
তবে প্রভার মতে, সাবলেট নেওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা যায়। পরিচিত কারো মাধ্যমে বাসা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে শুরুতেই। একদম অপরিচিত কোনো পরিবারের সঙ্গে বাসা সাবলেট নেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে ফ্ল্যাটে সাবলেট নিতে চান সেখানে বসবাসরত সব সদস্যের বিষয়ে আগে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত। বাসার সকল খুঁটিনাটি নিয়ম-কানুন প্রশ্ন করে জেনে নিলে সবার জন্যই সুবিধা হয়। কোনো কিছু সন্দেহজনক বা অপছন্দ হলে সে বাসায় সাবলেট না নেওয়াই ভালো।
হিরক বলেন, "সাবলেট থাকতে গিয়ে কিছু সমস্যা হলেও সেগুলো মানিয়ে নেওয়ায় সবমিলিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বেশ ভালোই। জেলা শহর থেকে ঢাকায় এসে কোনো পরিবারের সঙ্গে থাকায় একটা নিরাপদ বাসস্থান পেয়েছিলাম। কিছুদিন আগে হলে সিট পেলেও আমার বাবা-মা বলেছিলেন সাবলেট বাসাতেই থেকে যেতে।"
অপরপক্ষেরও আছে অভিযোগ
সাবলেট থাকা নারী শিক্ষার্থীদের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা আর অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল যারা সাবলেট দেন তাদেরকেও। নিউমার্কেট এলাকায় ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এক রুম সাবলেট দিয়েছেন গৃহিণী নীলুফার (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, "বাসা সাবলেট দিতে গিয়ে আমাদেরও অনেক সমস্যা হয়। আজকালকার দিনে কাউকেই ভরসা করা যায় না। আমার বাসায় দুইটা মেয়ে সাবলেট উঠেছিল যারা অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল। তাদের জন্য আমাদেরও থানা-পুলিশের ঝামেলা সহ্য করতে হয়েছে। এখন আর পরিচিত কারো রেফারেন্স ছাড়া সাবলেট দেই না। আসলে দুই পক্ষেই ভালো-খারাপ মানুষ থাকে। কাউকে এক তরফা দায়ী করার উপায় নেই।"
কাটাবন এলাকায় বাসা সাবলেট দেওয়া আরেক গৃহিণী মিতা বলেন, "আমরাও তো অন্যের বাসায় ভাড়া থাকি। যারা সাবলেট থাকেন তাদের সাথে তো বাড়িওয়ালার যোগাযোগ থাকে না। তারা আমাদের দায়িত্বেই থাকেন। এখানে কোনো অঘটন ঘটলে আমাদেরই দায় নিতে হবে। তাই সবসময় অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলতে হয়।"
নিরাপদ বাসস্থানের দাবী
দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা ও ভালো কর্মক্ষেত্রের খোঁজে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান হাজার হাজার নারী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব হল বা হোস্টেলে থাকার সুযোগ হয়না তাদের অধিকাংশেরই। অবিবাহিত নারীদের পুরো বাসা ভাড়া না দেওয়া, হোস্টেলের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নতুন জায়গায় পরিচিত মানুষের অভাব- ইত্যাদি নানা কারণে বাধ্য হয়ে সাবলেট বাসায় থাকতে হয় অনেকেরই। কিন্তু সাবলেট থাকতে গিয়ে উল্লিখিত নানা ধরনের সমস্যার কবলে পড়ে প্রায়ই শিক্ষা ও কর্ম উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়তে হয় নারীদের।
কেয়া রায়ের ভাষ্যে, "নারীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ বাসস্থান তৈরিতে সরকারের অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। নিরাপদ থাকার জায়গার অভাবে উচ্চশিক্ষা থেকে প্রতিবছরই ঝড়ে পড়ে অনেক নারী। এই অবস্থার উন্নতি না হলে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর অগ্রগতি সম্ভব নয়।"