উচ্চশিক্ষার জন্য রাশিয়ার পথে ছুটছেন কারা?
ঢাকার ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে তা ভাবছিলেন মাহিন মাহমুদ। ভবিষ্যত ইচ্ছা একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বাংলাদেশে হাতে-কলমে ব্যবসা প্রক্রিয়ার আগাগোড়া শেখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ বেশ খানিকটা সীমিত। তাই এ বিষয়ে বিষদ কোথায় পড়া যায়, তা নিয়ে খোঁজখবর করতে থাকেন তিনি। তালিকায় ছিল রাশিয়ার নামও।
এরপর আবেদন, যাচাই-বাছাই, ফলাফল এবং শেষমেশ রুশ সরকারের আমন্ত্রণে পূর্ণবৃত্তি (ফুল-ফান্ডেড) নিয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন রাশিয়ার মস্কো পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরু করলেন বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা। ইচ্ছা আছে ব্যাচেলরের পর 'ইঞ্জিনিয়ারিং বিজনেস ম্যানেজমেন্ট' নিয়ে করবেন মাস্টার্সও।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় রাশিয়া অনেকটাই পিছিয়ে। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে পড়তে গিয়েছেন মোট ৪৯,১৫১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের নাম। তালিকায় রাশিয়া রয়েছে ১৮ নম্বরে, ২০২২ সালে দেশটিতে পড়তে গিয়েছেন মাত্র ২৩৩ জন। তবে অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়াতেও প্রতি বছর বাড়ছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।
মাহিনের মতো শিক্ষার্থীরা কেন রাশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন, রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পদ্ধতি, রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা আর সেখানে কী কী সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোই জেনে নেওয়া যাক।
কেন রাশিয়ায় পড়াশোনা?
রাশিয়ায় পড়াশোনার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা যায় এর পেছনে অর্থ বিনিয়োগের পরিমাণ। আর এর সাথে আছে পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগের বিষয়টিও। রাশিয়ার বাউমান স্টেট টেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড কন্ট্রোল অনুষদের ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গরীবে নেওয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, 'বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা থাকে, ফলে আপনি আপনার পছন্দমতো বিষয়ে পড়তে পারবেন না। আপনি যে বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, সে বিষয় নিয়েই পড়তে হবে।'
'অন্যদিকে যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দানুযায়ী বিষয় পড়তে যাওয়া হয়, সেক্ষেত্রে গুণতে হয় প্রচুর অর্থ। ঐ একই পরিমাণ টাকা খরচ করে রাশিয়ার ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব। আর যদি বৃত্তির সুযোগ থাকে, তবে সে খরচ আরও অনেকখানিই কমে আসে।'
ব্যাচেলর বা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় রাশিয়ায় বৃত্তি পাওয়া বেশ সহজ। কারণ, এতে আবেদন করার প্রতিযোগী কম। বর্তমানে রুশ সরকার প্রতিবছর ১২০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ বা পূর্ণবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। একইসাথে প্রতিমাসে বেশ খানিকটা অর্থ দেওয়া হয় স্টাইপেন্ড হিসেবে। এর মাধ্যমেও ডর্ম ফি বা থাকার খরচটিও উঠে আসে। ফলে পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রাশিয়ায় খাবার বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচটিই নিয়ে ভাবতে হয়। আর সেটি যে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম, তা সহজেই অনুমেয়।
ফুল-ফান্ডেড বৃত্তি ছাড়াও রাশিয়ার আরও দুই ধরনের বৃত্তি আছে। প্রথমত, ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিয়ের বেশ খানিকটা মওকুফ করা হয়। অন্যদিকে, প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় বা অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েই বিভিন্ন অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এই অলিম্পিয়াডগুলোতেও ভালো ফলাফল করে বড় অঙ্কের বৃত্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও রাশিয়াতে শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে বিশ ঘণ্টা পার্ট-টাইম কাজের সুযোগও রয়েছে।
নেওয়াজের মতে, 'যখন একই পরিমাণ বা তারচেয়েও কম খরচ করে ভালো র্যাংকিংয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা যায়, তখন রাশিয়াতে পড়াশোনার সুযোগ ভালো বলেই মনে হবে। হ্যাঁ, এখানে পড়াশোনার বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, তবে তুলনা করা হলে সেটি খুব বড় কিছু নয়। তাছাড়া এর ফলে পরবর্তীতে আরও সুযোগ পাওয়ার দরজা খুলে যায়।'
এছাড়াও রাশিয়ার প্রতিটি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়েই স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম রয়েছে, যার মাধ্যমে রাশিয়ায় এক বা দুই বছর পরেই ইউরোপের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী বছরগুলো পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের তুলনায় রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে এই এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের পরিমাণ ও সুযোগ অনেক বেশি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরাও এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদেরকে রেকমেন্ডেশন লেটার থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য করেন বলে জানান নেওয়াজ।
রাশিয়ায় পড়াশোনা
অন্যান্য দেশের তুলনায় রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ খানিকটা পার্থক্য আছে। দেশটির উচ্চশিক্ষা একটু বেশিই বিশেষায়িত, যা অন্যান্য দেশে খুব একটা চোখে পড়ে না। যেমন: কেউ হয়তো মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যন্ত্রকৌশল নিয়ে পড়ছেন। এখানে কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জানানোর পরেই কোনো বিশেষায়িত দিক, যেমন: ওয়েল্ডিংয়ের দিকে আপনাকে এগোতে হবে। চার বছর পর যখন পড়াশোনা শেষ হবে, তখন ওয়েল্ডিং নিয়ে তিনি হয়ে উঠবেন বিশেষজ্ঞ।
তাছাড়া রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো 'জাশিতা (защита)' বা নেগোসিয়েশন পর্ব। আর এ পর্বের কারণেই রাশিয়াতে পরীক্ষার খাতায় কোনোরকমভাবে লিখেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। বরং বিষয়টিকে ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হয়।
পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখার পর জাশিতা পর্বে শিক্ষকের কাছে উত্তরগুলো ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হয়। বাউমান মস্কো স্টেট টেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেসক্র্যাফট অ্যান্ড আপার স্টেজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাফিল আলী জানান, 'সার্টিফিকেটসর্বস্ব গৎবাঁধা পড়াশোনার চিন্তা করে রাশিয়ায় পড়তে এলে ভুল হবে। এখানে পরীক্ষার খাতায় কোনোরকমভাবে লিখে এসে পরীক্ষায় পাশ করার কোনো উপায় নেই। খুব ভালোভাবে লিখেও এখানে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হওয়া সম্ভব। আবার গড়পড়তা লিখেও যদি ভালোমতো শিক্ষককে বোঝানো যায়, তবে ভালো ফলাফলও করা সম্ভব।'
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাশিয়ার শিক্ষার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এখানে শারীরিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়। প্রতিটি সেমিস্টারেই সাঁতার, টেবিল টেনিস বা স্কিইংয়ের মতো খেলাধুলার কোর্স থাকে। অন্যান্য বিষয়ের মতো এই কোর্সগুলোতেও উত্তীর্ণ হতে হয়। তবে অন্যান্য বিষয়ের মতো খুব একটা কড়াকড়ি থাকে না।
গ্র্যাজুয়েশনের পর রাশিয়াতে ফলাফলের ভিত্তিতে সার্টিফিকেট হিসেবে দুইটি আলাদা রঙের ডিপ্লোমা দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট শতাংশ পরিমাণ কোর্সে (বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ৭৪ থেকে ৮৪ শতাংশ) জিপিএ ৫-এর মধ্যে ৫ পেলে সম্মানজনক 'রেড ডিপ্লোমা' পায় শিক্ষার্থীরা। বাকিদেরকে দেওয়া হয় 'ব্লু ডিপ্লোমা'। 'গ্র্যাজুয়েশনের সময় ডিপ্লোমার রঙ দেখেই তাদের ফলাফল সম্পর্কে ধারণা করা যায় যে তারা হায়েস্ট ডিস্টিংকশন পেয়েছেন নাকি পাননি। রেড ডিপ্লোমা পাওয়ার ইচ্ছাও শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে,' বলে জানান নেওয়াজ।
চ্যালেঞ্জ
সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি রাশিয়াতে পড়াশোনার বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে ভাষা। আর এর পরেই রয়েছে 'জেনারেল উইন্টার'। যে শীতে কাবু হয়ে পড়েছিল ইউরোপের বড় বড় জেনারেল, সেই শীতে উষ্ণ অঞ্চলে অভ্যস্ত বাঙালি স্বাভাবিকভাবেই পর্যুদস্ত হয়ে পড়বে।
রাশিয়াতে শীতকাল অনেক দীর্ঘ, প্রায় ছয় মাস। তাপমাত্রা প্রায়ই কমতে কমতে মাইনাস বিশ-পঁচিশ ডিগ্রি ছাড়িয়ে আরও নিচে নেমে যায়। সে সময় বাইরে চলাফেরা করাটা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে পড়ে।
তবে ঠাণ্ডাকে মোকাবেলা করতে পারলেও ভাষা হয়ে দাঁড়ায় মূল সমস্যা। কেবল অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা করতেও এই ভাষা শেখার আর কোনো বিকল্প নেই। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার প্রথম বছরে মৌলিক কিছু বিষয়ের পাশাপাশি রুশ ভাষা শেখা অপরিহার্য। কারণ পরীক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছুই হয় রুশ ভাষায়। অন্যদিকে, বাজার করা কিংবা ব্যাংকে যাওয়া, সেখানেও রুশ ভাষা একমাত্র পথ। এমনকি রাস্তা বা দোকানের সাইনবোর্ডেও সিরিলিক বর্ণমালার একচ্ছত্র আধিপত্য চোখে পড়বে।
নেওয়াজ জানান, 'প্রথমদিকে ভাষার কারণে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে দোকানদারকে মোবাইল বাড়িয়ে কী প্রয়োজন তা বলতে হতো। তবে এখন ভাষাটি অনেকটাই আয়ত্তে চলে এসেছে।'
রাশিয়ান অন দ্য গো
২০১৭ সালে যখন রাশিয়ার বাউমান মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম অনুষদে মাইক্রোইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন মহিউদ্দিন রেসালাত, তখন এই সমস্যাগুলোতে তাকেও পড়তে হয়েছিল। এরপর অবশ্য সেগুলো খুব ভালোভাবেই উৎরে গিয়েছেন, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বাউমান থেকে শেষ করেছেন ব্যাচেলর ডিগ্রি। পেয়েছেন সম্মানজনক রেড ডিপ্লোমা।
তবে বিদেশে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সবসময়েই মাথায় গেঁথে ছিল তার। এগুলো সমাধানের উপায় ভাবতে ভাবতেই পরিকল্পনা করেন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার, যেখান থেকে রাশিয়ায় পড়তে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা রাশিয়ায় পড়াশোনা থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ ও সুবিধা পাবে। এই আইডিয়া শেয়ার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আন্না বুখারস্কায়ার সাথে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় 'রাশিয়ান অন দ্য গো' প্ল্যাটফর্মের যাত্রা।
শুরু থেকেই রেসালাত আর আন্না চেয়েছিলেন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। রেসালাত জানান, "রাশিয়ায় এসে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় তথ্য পেতে, আর এর একটি বড় কারণ ভাষা। ভাষা না জানায় তথ্যগুলো পেতেও সমস্যা হয় শিক্ষার্থীদের। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য আমাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রাশিয়ার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি থেকে শুরু করে রাশিয়ার জীবন সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় এক জায়গায় পেয়ে যাওয়া।"
রাশিয়ায় এসে হঠাৎ করে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সময় 'রাশিয়ান অন দ্য গো' বেশ খানিকটা সাহায্য করেছে বলে জানান নেওয়াজ। "রাশিয়ায় আসার পর শিক্ষার্থীদেরকে বেশ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। ধরা যাক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কথাই। কীভাবে খুলতে হবে, কোথায় যেতে হবে, তার একেবারে বিস্তারিত বিবরণ প্ল্যাটফর্মটি থেকে পাওয়া যায়। আর যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হলেই 'রাশিয়ান অন দ্য গো'-তে জানালেই তার একেবারে বাস্তব উদাহরণসহ সমাধান পাওয়া যায়।"
এ ধরনের সমস্যার সমাধান ছাড়াও ভাষা নিয়ে কাজ করে রাশিয়ান অন দ্য গো। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য রুশ ভাষার কোর্স চালু করেছে তারা। একইসাথে রাশিয়ার সংস্কৃতি, পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিও সিরিজও রয়েছে তাদের।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যাত্রা আরো সহজ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও একত্রে 'রাশিয়ান অন দ্য গো' প্ল্যাটফর্মটি কাজ করছে বলে জানান প্ল্যাটফর্মটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং জেনারেল ডিরেক্টর আন্না বুখারস্কায়া। বর্তমানে মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ আর কাজানের বিশটিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করছে রাশিয়ান অন দ্য গো। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে ভিসা পাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পরও রুশ জীবনে অভ্যস্ত হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াতেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে সহযোগিতা করা হয়।
আন্না এ প্রসঙ্গে বলেন, "এজেন্সিগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা যেকোন এক দেশ থেকে কাজ করছে। কিন্তু আমরা দুই দেশ থেকেই পুরো বিষয়টি দেখভাল করে থাকি। ঢাকাতে আমাদের অফিস রয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াগুলোতে সাহায্য করা হয়। আর রাশিয়ায় আসার পর মস্কো অফিস থেকে বাকিটুকু দেখা হয়।"
রেসালাত বাংলাদেশি হওয়ার কারণে 'রাশিয়ান অন দ্য গো'-এর মূল লক্ষ্য আপাতত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের রুশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পথকে সহজ করা। ইতিমধ্যেই তারা চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), গ্রিন ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেলটা বিশ্ববিদ্যালয় সাথে শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট ট্রান্সফারসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেছে। কাজ চলছে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে। তবে তারা ভারত ও নেপালের শিক্ষার্থীদেরকেও একইভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।
রেসালাত জানান, "আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদেরকে আরও বেশি রাশিয়ামুখী করা। মূলত রাশিয়ার সুবিধাগুলো না জানার কারণেই শিক্ষার্থীরা এ ধরনের সুযোগগুলো হারায়। খরচ আর পড়াশোনার মান বিবেচনায় আনলে রাশিয়া প্রথম সারিতেই থাকবে।"