বিমানবন্দরের পিএ সিস্টেমে প্রেমিকের কণ্ঠ, তারপর এলো বিয়ের প্রস্তাব!
যশরাজ ছাবড়া যখন ভাবছিলেন কিভাবে তার গার্লফ্রেন্ড রিয়া শুক্লাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া যায়, তখন তার মন চলে গিয়েছিল প্রিয় বলিউড সিনেমার দিকে। বলিউডের ফিল্মি কায়দায় প্রেমিকাকে হাঁটু গেড়ে বসে প্রস্তাব দেওয়ার মতো একটা দৃশ্য হয়তো অনেকেই মনে মনে কল্পনা করেন; যশরাজও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।
কিন্তু রোমান্টিক গান-নাচের রুটিনের বাইরেও আরও একটি পরিকল্পনা ছিল যশরাজের, তা হলো: বিমানবন্দর।
"বলিউড সিনেমায়, আমার মনে হয় প্রতি দশটির মধ্যে আটটিতেই প্রেমিক-প্রেমিকা জুটিকে নিয়ে বিমানবন্দরে রোমান্টিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দেখা যায় নায়িকা চলে যাচ্ছে, নায়ক দৌড়ে বিমানবন্দরে এলো তাকে থামানোর জন্য; তারপর তারা মিলে যায় এবং সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করে।"
একইভাবে যশরাজ ও শুক্লার জীবনেও বিমানবন্দর একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।
অকল্যান্ডের নেটিভ শুক্লা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বসবাস করেন এবং সেখানে তিনি ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্য সরকারের হয়ে কাজ করেন। অন্যদিকে, যশরাজ তখনও নিউজিল্যান্ডেই রয়ে গিয়েছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা লং-ডিসট্যান্স সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন।
তাই যশরাজ একটা পরিকল্পনা করেন। শুক্লা যেদিন অকল্যান্ডে আসবেন, সেদিন তিনি তার প্রিয়জনদের অকল্যান্ড বিমানবন্দরে এনে জড়ো করেন। সেখানেই অপেক্ষা করবেন যশরাজ, হাঁটু গেড়ে বসে এক হাতে আংটি নিয়ে নিবেদন করবেন প্রেমিকাকে।
এছাড়াও, যশরাজের আরও একটি পরিকল্পনা ছিল যে- তিনি বিমানবন্দরের অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে শুক্লাকে প্রস্তাব দেবেন। প্রিয়জনদের বিমানে তুলে দেওয়া তো সহজই ছিল, কিন্তু বিমানবন্দরের কয়েক স্তরের কর্মী ও প্রটোকল পেরিয়ে কিছু করা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
যশরাজ বিমানবন্দরের যত কর্মীকে খুঁজে পেয়েছিলেন, সবাইকে কল করেন এবং লিংকডইনে ম্যাসেজ পাঠান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন তিনি অকল্যান্ড বিমানবন্দরের কমিউনিকেশনস ম্যানেজার লরা প্ল্যাটসের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন, তখনই সবকিছু সুসংগঠিতভাবে করা সম্ভব হয়ে ওঠে।
প্ল্যাটস তাকে লজিস্টিকসের দিকটা গোছাতে সাহায্য করেন; যেমন- কেক, ফুল আনা এবং দুই পরিবারের সদস্যদের বিমানবন্দরে নিয়ে আনা, আর একইসঙ্গে পুরো ঘটনা ভিডিও করার জন্য পেশাদার একটা টিম নিয়ে আসা।
এছাড়াও, যশরাজ তার প্রেমিকাকে প্রস্তাব দেওয়ার কথাগুলো রেকর্ড করা এবং বিমানবন্দরের পিএ সিস্টেমে সেটা প্লে করতে সক্ষম হন- কিন্তু নিজেকে শান্ত রেখে ওই কথাগুলো বলতে তাকে আটবার চেষ্টা করতে হয়েছিল!
সব মিলিয়ে যশরাজের 'বিগ ডে'র পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যশরাজ, প্ল্যাটস এবং বিমানবন্দরের অন্য কর্মীদের এক মাস সময় লেগে গিয়েছিল।
ফ্লাইটে বিলম্ব, লাগেজ হারিয়ে যাওয়া
শুক্লা ভেবেছিলেন অন্য সব সময়ের মতোই তিনি অকল্যান্ডে যাচ্ছেন, কিন্তু ওপারে কি অপেক্ষা করে আছে সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না।
যদিও তিনি খুব সহজেই অনেকটা নিত্যদিনের রুটিনের মতোই মেলবোর্ন থেকে অকল্যান্ডের কমিউটার ফ্লাইটে উঠে বসেছিলেন, কিন্তু ১৮ আগস্ট ভাগ্য তার জন্য অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছিল।
প্রথমে তার ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়ে যায় এবং দিনের অন্য সময়ে সেই ফ্লাইটের সময় নির্ধারণ করা হয়। তারপর রাস্তায় বাজে রকমের যানজটের কারণে সেই ফ্লাইটও প্রায় মিস হয়ে যাচ্ছিল তার; একেবারে শেষ মুহূর্তে দৌড়াতে দৌড়াতে তিনি বিমানে ওঠেন।
অকল্যান্ডে নামার পর শুক্লা বুঝতে পারেন যে তার লাগেজ আসেনি। তিনি সার্ভিস কাউন্টারে গিয়ে অভিযোগ করার কথাও ভেবেছিলেন, কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা বারবার কল দিচ্ছিলেন এবং তাকে বলছিলেন যেন ব্যাগ-লাগেজের চিন্তা ছেড়ে তাড়াতাড়ি চলে আসেন এবং অ্যারাইভাল হলে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
অবশেষে তিনি সেখানে গেলেন এবং পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করেন।
আর সেখানে ছিলেন তার প্রেমিক যশরাজ ছাবড়া, যিনি নিজের প্রিয়জনদের সামনে রেখে হাঁটু গেড়ে বসে শুক্লাকে বলেন, 'তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?' আর পিএ সিস্টেমে বাজতে থাকে তার আগে থেকে রেকর্ড করে রাখা প্রস্তাব।
আর এরকম মুহূর্তে যে শুক্লার আর নিজের ব্যাগপত্রের কথা মনে ছিল না, তা বলাই বাহুল্য!
সিএনএন ট্রাভেলকে শুক্লা বলেন, "আমি একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ওর চোখের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম, শুনতে রোমান্টিক হলেও আসলে ঐ মুহূর্তে এটাই হয়েছিল। এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল ওখানে আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। তারপর আমাদের পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা এগিয়ে আসেন এবং আমাদের জড়িয়ে ধরেন। পুরো ব্যাপারটা একদম জাদুকরী মনে হয়েছিল।"
আর যশরাজ ছাবড়ার জন্য তার দীর্ঘ এক মাসের পরিশ্রম সফল হয়েছিল নিজের প্রিয় মানুষদের সামনে একটি সুন্দর মুহূর্ত সৃষ্টি করার মাধ্যমে।
যশরাজ-শুক্লা জুটির পরিকল্পনা রয়েছে ভারতে বিয়ে করার। শুক্লা বড় হয়েছেন হিন্দু গুজরাটি পরিবারে, অন্যদিকে ছাবড়ার পরিবার শিখ এবং তাদের গুজরাটি-পাঞ্জাবি উভয় সংস্কৃতিই আছে।
আপাতত তারা দুজনে আলাদা দুটি দেশে বাস করলেও, তারা বিয়ের করবেন তৃতীয় আরেকটি দেশে এবং মধুচন্দ্রিমায় যাবেন চতুর্থ আরেকটি দেশে। কিন্তু সবশেষে যশরাজ এবং শুক্লা মনে করেন, যতদিন পর্যন্ত তারা একসঙ্গে আছেন তাদের দুজনের মনের ঠিকানা আসলেই একই।
"মেলবোর্নকে যেভাবে আমার নিজের ঘর মনে হয়, এখন যশরাজও আমার একটা ঘর", বলেন শুক্লা।