পৃথিবীর সেরা স্বাদের চকলেটকে টিকিয়ে রাখার লড়াই
চিত্রগ্রাহক জোহিস এলার্কনের সাথে দক্ষিণ আমেরিকায় পৃথিবীর সেরা স্বাদের চকলেটের উৎপাদনস্থলে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন হেইডি ব্রান্ডেস। চমৎকার সে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিনি স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনে; ঈষৎ পরিমার্জিত আকারে টিবিএসের পাঠকদের জন্য যা তার বর্ণনামতে তুলে ধরা হলো–
ইকুয়েডরের মান্টা শহরের এক বাইরে আছে এক শান্ত পাহাড়ি বসতি, সেখানেই একটি পরিবারকে খুঁজে পাই আমরা। বংশ পরস্পরাসূত্রে যাদের কাছে আছে বিভিন্ন দুর্লভ কোকোয়া ফলের সংগ্রহ। ঘরের মধ্যে একটি কাঠের টেবিলের ওপর নানান জাতের কোকোয়া ফল রেখে তারা আমাদের দেখাচ্ছিলেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুখ্যাতি যার, সেই দুর্লভ ন্যাশনাল কোকোয়া ফলকে কিন্তু প্রথম দর্শনেই চেনার উপায় ছিল না। চিনিয়ে দেওয়ার পরও বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এর হলুদ আবরণের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ ও লোভনীয় কাকাউ বীজ (যা চকলেট তৈরির মূল উপাদান)।
অবিশ্বাসীকে বিশ্বাসী বানাতে চাই চক্ষুকর্ণের বিবাদ-ভঞ্জন; অতপর আমিও তাই করলাম। ফলটির একটি কোয়া মুখে পুরলাম। কোয়াটি বেশ মাংসল ও উজ্জ্বল, জিভে ঠেকতেই এক সুবাসিত মিষ্টি স্বাদ পাওয়া গেল। কিন্তু, আসল জাদু তো লুকিয়ে বীজে। আর সেটা পাওয়া যায়, যখন বীজ শুকানোর পর, সেগুলোকে ভেজে এবং সবশেষে পিষে তৈরি করা হয় চকলেটের পেস্ট। সেখান থেকে বিশুদ্ধ ডার্ক চকলেটের এমন সমৃদ্ধ সুবাস আসে, যা রীতিমতো জাদুকরি এক অনুভূতি জাগায় দেহমনে, উদগ্রীব করে তোলে একবার চেখে দেখতে।
আমাদের সাথে ছিলেন বিশ্বের অন্যতম একজন কাকাউ বিশেষজ্ঞ সার্ভিও পাচার্ড। একটি বাটিতে চকলেটের সেই পেস্টের সাথে চিনি ও অন্য কিছু উপকরণ মেশালেন তিনি। এরপর সেই ঘন তরল আমাদের পান করতে দিলেন ছোট ছোট শট গ্লাসে। উত্তেজনা নিয়েই আলতো করে জিভে ছোঁয়ালাম সে ঘন তরল, মনে হলো যেন নিজের অজান্তেই 'আহা, উহু' বেড়িয়ে গেল মুখ থেকে। এ যে অদ্ভুত, অপার্থিব! জীবনে চকলেট খেয়েছি ঢের, কিন্তু কখনো এমনটা খাইনি। আমার খাওয়া সবচেয়ে সেরা চকলেটও এর ধারেকাছেও নয়।
স্বাদটা কেমন তবে বলি, অনেকটাই মসৃণ ও রেশমী একটা ভাব তাতে, তবে সুগন্ধ বেশ কড়া। চকলেটের এই ধরন নিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চকলেটপ্রেমীদের কেন এত আগ্রহ, তা যেন এবার সহজেই উপলদ্ধি করলাম। ঠিক একারণেই এই চকলেটের একটি বারের জন্য শত শত ডলার খরচ করতেও আধুনিক চকলেটপ্রেমীরা কার্পণ্য করেন না।
গবেষকদের অনুমান, আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে 'ন্যাশনাল' নামের এই কাকাউ গাছ প্রথম চাষাবাদ করা হয় ইউকুয়েডরের জামোরা-চিনচিপে প্রদেশে। প্রাচীন বণিকেরা ন্যাশনাল কাকাউ রোপণ করেছিলেন দেশটির উপকূলের কাছাকাছি অংশে।
২০১২ সালের এক গবেষণায় জানা যায়, কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের মাত্র এক শতাব্দী পর থেকেই ইউরোপীয় উপনিবেশিকরাও ন্যাশনাল কাকাউ রোপণ করতে শুরু করেছিল। জোরালো সুগন্ধের কারণে খুব শিগগিরই এর কোকোয়া ফল ও তা থেকে তৈরি চকলেট বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করে। ১৯ শতকে মূলত চকলেট বাণিজ্যের মাধ্যমেই বিশ্ব অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয় ইকুয়েডর। ইউরোপে চকলেট ভোজন জনপ্রিয়তা পেলে, ১৮ শতকের শেষদিকে বা ১৯ শতকের শুরুতে ন্যাশনাল চকলেটের চাহিদাও হু হু করে বাড়তে থাকে। যেমন ইউরোপে চকলেট বাণিজ্যের তৎকালীন কেন্দ্র– জার্মানির হামবুর্গে এই চকলেটের দারুণ কদর ছিল।
কিন্তু, ১৯১৬ সালে ফ্রস্টি পড নামের এক ক্ষয়রোগ কাকাউ গাছে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এতে গাছের ব্যাপক মড়ক শুরু হয়। এই রোগে সব ন্যাশনাল কাকাউ গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বলেই মনে করা হয়েছিল। মহামারির পর ইউকুয়েডরে কোকোয়ার ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়, তখন চাষিরা হ্রাইব্রিড ও নতুন বিদেশি জাতের আবাদ শুরু করেন। এক সময় মনে করা হয়েছিল, অনন্য স্বাদ ও গন্ধ নিয়ে নাশনাল কাকাউ চিরতরে হারিয়ে গেছে। ডোডো পাখির বিলুপ্তির মতোই করুণ এক ইতিহাস হিসেবে চকলেটের জগতে স্মরণ করা হতো ন্যাশনালকে।
কিন্তু, বিস্ময়ই অপেক্ষা করছিল। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ পেরু-ভিত্তিক একটি মার্কিন কোম্পানি – ফরচুনাতো চকলেট- এর সাথে একটি যৌথ গবেষণা করে জানায়, ন্যাশনাল কোকোয়ার ডিএনএ রয়েছে এমন কাকাউ গাছের অস্তিত্ব তারা পেরুতে আবিষ্কার করেছে। প্রসঙ্গত, এই জাতের চাষ ইউকুয়েডরে বেশি হলেও, পেরুতেও মূল্যবান এই বৃক্ষের উপস্থিতি ছিল।
চকলেটের জগতে এই আবিষ্কার ছিল যুগান্তকারী। তাই সঙ্গে সঙ্গেই উঠেপড়ে লাগেন ইকুয়েডরের পরিবেশ সংরক্ষণবিদ ও চাষিরা। তাদের প্রচেষ্টায় বিলুপ্তির কিনার থেকে আবারো উঠে আসছে এই জাত।
অলাভজনক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা থার্ড মিলেনিয়াম অ্যালায়েন্স (টিএমএ)-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেরি টোথ জানান, পেরুর পর ইকুয়েডরের যে অঞ্চলে পরে ন্যাশনাল কাকাউ গাছের সন্ধান পাওয়া যায় – ' ওই অঞ্চলকে আমরা নূহের নৌকা বলি।'
জেরি তো-য়াক চকলেট নামক একটি বেসরকারি কোম্পানিরও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। কোম্পানিটি ইকুয়েডরে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা সেরা কাতের কাকাউ থেকে চকলেট উৎপাদন করে।
স্থানীয় কৃষকদের থেকেই তারা কোকোয়া বীজ সংগ্রহ করে। বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত ন্যাশনাল কাকাউ গাছ পুনঃবনায়নে ৩০টি চাষি পরিবারের সাথে কাজ করছেন জেরি তোহ।
তার মতে, বিলুপ্তির কিনার থেকে এককালের হারিয়ে যাওয়া এই গুপ্তধনকে ফিরিয়ে আনা – শুধু চকলেট দুনিয়ারই এক বিস্ময় নয় – একইসঙ্গে তা ইকুয়েডরের একদা সমৃদ্ধ উপকূলীয় বন ও চাষাবাদকে পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রেও এক মাইলফলক। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া গাছগুলোকে ফিরিয়ে আনতে এই পদক্ষেপ আশার আলো দেখাবে।
যেভাবে সন্ধান মেলে
২০০৭ সালে থার্ড মিলেনিয়াম অ্যালায়েন্স (টিএমএ) প্রতিষ্ঠার সময়ে কিন্তু হারিয়ে যাওয়া এই বৃক্ষ পুনঃআবিষ্কার করবেন এমন উদ্দেশ্য ছিল না জেরির। তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল – অনুর্বর হয়ে পড়া জমিতে পুনঃবনায়ন। এজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্নাতক ২০০৬ সালে ইকুয়েডরে এসে বসবাস করতে থাকেন।
ইকুয়েডরের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের পাহাড়ি বনভূমিকে কীভাবে টেকসই উপায়ে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে প্রথমে গবেষণা করতে থাকেন। এক কালের এই গহীন অরণ্য তখন কাঠ কাটা ও বন উজারের ফলে – প্রায় শূন্যের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছিল। টিএমএ তাদের গবেষণায় দেখে, এই অরণ্য পুনরুদ্ধারের সহযোগী হবে কাকাউ গাছ। কারণ তারা নিম্ন সূর্যালোকেও বাড়তে পারে। তাছাড়া, এখান থেকে স্থানীয় মানুষের আয়ের সুযোগও তৈরি হবে। ফলে অবৈধ বন উজাড় ঠেকাতে অবদান রাখবে।
প্রকৃতি সংরক্ষণে – সময় ও অর্থ– দুইই ব্যয় করতে হতো জেরিকে। একসময় উপলদ্ধি করলেন একাজে যুক্ত থাকতে তার একটা আয়ের উৎসও থাকা দরকার। সেজন্য ২০১৩ সালে তার অস্ট্রিয় সহকর্মী ডেনিস ভ্যালেন্সিয়ার সাথে প্রতিষ্ঠা করেন তো-য়াক চকলেট কোম্পানি। ডেনিস ছিলেন ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটোতে বেড়ে ওঠা একজন- যিনি পরে অস্ট্রিয়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। তো-য়াক ইকুয়েডরের দুটি আদিবাসী ভাষার শব্দের সমন্বয়ে দেওয়া নাম, যাদের অর্থ হলো – মাটি ও গাছ। বর্তমানে তার কোম্পানি ন্যাশনাল কাকাউ'কে একটি ব্রান্ডে পরিণত করার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞ সার্ভিও পাচার্ডকে সঙ্গে নিয়ে প্রাচীন কাকাউ গাছের সন্ধান করতে থাকেন জেরি। ইকুয়েডরের প্রাচীন বনের বিষয়ে পাচার্ডের জ্ঞান সুগভীর। চার প্রজন্ম ধরে তিনি কাকাউ চাষের সাথেও যুক্ত। আর 'সিড গার্ডিয়ান নেটওয়ার্ক' নামের বীজ সংরক্ষণকারীদের একটি জোটেরও সদস্য। থার্ড মিলেনিয়াম অ্যালায়েন্স গঠনের পর থেকেই এর অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন তিনি।
তাই জেরি যখন প্যাচার্ডকে বললেন তিনি ইকুয়েডরের প্রাচীন কাকাউ গাছগুলো খুঁজে বের করতে চান, সঙ্গেসঙ্গেই তাকে প্রত্যন্ত পিয়েদ্রা ডে প্লাটা উপত্যকায় অনুসন্ধানের পরামর্শ দেন প্যাচার্ড। ছোটবেলায় এই উপত্যকার অরণ্যে বর্ষীয়ান অনেক গাছ দেখেছেন তিনি।
এদিকে কৃষকদের মুখে ন্যাশনাল কাকাউ গাছের কিংবদন্তি শুনেছিলেন জেরি, তাই প্যাচার্ডকে এটি খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না তা জিজ্ঞেস করেন। প্যাচার্ড তাকে জানান, পিয়েদ্রা ডে প্লাটা উপত্যকায় এ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যাবে বলেই তার বিশ্বাস। ক্ষয়রোগ থেকে বেঁচে যাওয়া এই গাছগুলো খুঁজে বের করাও হয়তো যাবে। একথায় দারুণ উৎসাহী হন জেরি, শুরু হয় খোঁজ।
এরপর পিয়েদ্রা ডে প্লাটা উপত্যকায় গিয়ে সেখানকার কিছু উদ্যানচাষিকে খুঁজে পান জেরি ও প্যাচার্ড। এই চাষিরা বংশ পরস্পরায় বাগান করছেন। তারাই তাদের পূর্বপুরুষদের লাগানো কিছু কাকাউ গাছ দেখান অনুসন্ধানীদের। আর সেখানেই লুকানো ছিল গুপ্তধন।
এ অভিযান সহজ ছিল না মোটেই। অঞ্চলটি ছিল বেশ প্রত্যন্ত ও দুর্গম। ভ্যাপসা গরমের মধ্যে পথ পাড়ি দিয়ে খোঁজ করতে হয়েছে। তবে শেষপর্যন্ত বিফলে যায়নি সে চেষ্টা। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে।
অভিযাত্রীদের বিশ্বাস ছিল, দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় এখানে মহামারির হাত থেকে অবশ্যই কিছু না কিছু ন্যাশনাল কাকাউ গাছ রক্ষা পেয়েছে। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য গাছগুলোর ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল, এজন্য তারা কিছু নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবটরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
'হেয়ারলুম প্রিজার্ভেশন ফান্ড' নামক একটি সহায়তা তহবিল এবং ইকুয়েডরের কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা সংস্থা 'ইনিআপ'- এর সহায়তা নেন তারা। তাদের সহায়তায়, পিয়েদ্রা ডেল প্লাটা উপত্যকার ৪৭টি গাছের ডিএনএ নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। এরমধ্যে নয়টি গাছই একেবারে বিশুদ্ধ প্রাচীন ন্যাশনাল কাকাউ গাছ বলে প্রমাণিত হয়। খুব সম্ভবত এগুলোই ছিল ইকুয়েডরে টিকে থাকা এ প্রজাতির সবশেষ প্রজন্ম।
কিন্তু, এই আবিষ্কারের অর্থ ছিল আরও ব্যাপক। এর অর্থ হচ্ছে, বিশ্বের সেরা চকলেট আজো ইকুয়েডরে টিকে আছে।
কিন্তু, সুসংবাদের সাথে নতুন সমস্যাও দেখা দিল। এই গাছগুলো অনেক প্রাচীন। অন্তত শতবর্ষী তো হবেই, ফলে তারা আয়ুস্কালের শেষ পর্যায়ে। হয়তো শিগগির মারাও যাবে। অনেক গাছে হয়তো ফলও জন্মাবে না।
২০১৮ সালে ইকুয়েডরের জামা-কোয়াক সংরক্ষিত অরণ্যের কাছে ২ হাজার একর জমিতে এক বীজতলা প্রতিষ্ঠা করে থার্ড মিলেনিয়াম অ্যালায়েন্স (টিএমএ)। রোপণের আগে কাকাউ গাছের চারাগুলোর সবল বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতেই করা হয় এ নার্সারি। এই নার্সারির কাকাউ চারাগুলোর সঙ্গেই প্রাচীন ন্যাশনাল কাকাউ গাছের কলম জুড়ে দেন গবেষকরা। একাজে সহায়তা দেয় স্থানীয় এগ্রিকালচারাল পলিটেকনিক স্কুল অব মানাবি।
কাকাউ এর প্রাচীন কিছু প্রজাতির বীজ যেগুলো বংশপরস্পরায় চাষিরা পেয়েছেন– তেমন কিছু বীজের চারা জামা-কোয়াক সংরক্ষিত নার্সারিতে কয়েক দশক আগে রোপণ করা হয়েছিল। কলম জোড়ার জন্য সেই গাছগুলোকেই বেঁছে নেওয়া হয়। এসব গাছের কাণ্ডের সাথে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে ন্যাশনাল কাকাউ গাছের ডাল কলম হিসেবে জুড়ে দিলে– সেগুলোতে একসময় গজায় শেকড়। এভাবে একেকটি কলম থেকেই পাওয়া যায় ন্যাশনাল কাকাউয়ের নবীন চারা। প্রাচীন বৃক্ষের হুবুহু ক্লোন এমন ১৮৯টি চারা পরে নার্সারিতে রোপণ করা হয়।
জেরি তোথ অনুমান করেন, তিন বছরের মধ্যে এসব চারাগাছ ফল দেওয়ার মতো যথেষ্ট বড় হবে, তখন এগুলো থেকে ৫ হাজার ন্যাশনাল কাকাউয়ের বীজ পাওয়া যাবে প্রতিবছর। সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়নি।
এখন সেই বীজগুলো চাষিদের নিজ জমিতে রোপণের উৎসাহ দেয় টিএমএ। তবে এখানেও একটি সমস্যা আছে। গাছগুলো বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো ফলবান হতে অন্তত বছর পাঁচেক লাগে। অথচ শঙ্কর বা হাইব্রিড গাছ থেকে আরও আগেই ব্যাপক ফলন পাওয়া যায়। তাই চাষিদের আর্থিকভাবে উৎসাহ দিতে পাঁচ বছরে তাদের ১,৮২১ ডলার করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে টিএমএ। শর্ত হলো, বিনিময়ে তারা হাউব্রিড ও আদি ন্যাশনাল কাকাউ – দুয়েরই চাষ করবে।
এরমধ্যে হাইব্রিড থেকে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে, তবে এর বীজ থেকে তৈরি চকলেট অতটা দামি বা সুস্বাদু হয় না। অন্যদিকে, ন্যাশনালের আদি ও বিশুদ্ধ প্রজাতির গাছ বড় হলে– সেখান থেকে খুবই দামি চকলেটের বীজ পাওয়া যাবে।
এ উপায়ে ইতোমধ্যেই চকলেট উৎপাদন শুরু করেছে তো-য়াক কোম্পানি। এই চকলেটের ১.৭৬ আউন্স ওজনের একটি বার তারা বিক্রি করে ৪৯০ ডলারে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে অর্ডার করেও কেনা যাবে এই চকলেট বার। এছাড়া, হ্যারোডস এবং ক্যাপুটোর মতো বিশেষায়িত খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানও এটি বাজারজাত করছে।