পৃথিবীর প্রথম মুরগি কোথায় পাওয়া গেছে
ডিম আগে না মুরগি আগে- উত্তরটা না জানলেও এই প্রশ্ন তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু যদি বলি কোথায় আগে মুরগি পাওয়া গেছে, তাহলে কি বলবেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর প্রথম মুরগি পাওয়া গেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাওস, থাইল্যান্ড , মায়ানমার ও চীনের কিছু অঞ্চলে।
এর আগের গবেষণাগুলো বলছে, আজ থেকে ৮০৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উত্তর চীনে বা ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিন্ধু সভ্যতার আশেপাশে প্রথম গৃহপালিত মুরগি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম ভারত, পাকিস্তান বা চীন- এই তিন দেশের কোথাও প্রথম মুরগি পালা শুরু হয়েছিল বলেই ধারনা করে আসছিলেন গবেষকরা।
কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী সেল রিসার্চ এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধ বলছে অন্য কথা। সারাবিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মুরগির ৮৬৩টি জিনোম পরীক্ষা করার পর বিজ্ঞানীরা অবশেষে জানালেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অর্থাৎ লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড আর দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের মানুষরাই প্রথম পোষ মানিয়েছে মুরগিকে।
আর এখন বিশ্বের সবচাইতে বেশিসংখ্যক পাখি হয়ে উঠেছে মুরগিই। সারা পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ২৩০০ কোটি মুরগি আছে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালফোর্নিয়ার গবেষক মিং শ্যান ওয়াং সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ঠিক কোথায় প্রথম মুরগি পাওয়া গেছে সেটা জানা জরুরি কারণ তাহলে মানুষ কখন এই পাখিটাকে পোষ মানাতে শুরু করে তা জানা যাবে। আর এটি প্রাগৈতিহাসিক মানুষ সম্পর্কে জানতে আমাদের সহায়ক হবে।
এর আগের গবেষণাগুলোতে অনেক কম সংখ্যক নমুনা নিয়ে কাজ করা হয়েছিল। তাই সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়নি বলেও জানান ওয়াং।
ওয়াংদের গবেষণা বলছে, আধুনিক মুরগি মূলত লাল রঙের বনমোরগের বিবর্তিত রূপ। গ্যালাস গ্যালাস বা এই লাল বনমোরগের দেখা পাওয়া যায় দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল আর মায়ানমারে। আজ থেকে ১২ হাজার ৮০০ বছর আগে মূল প্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে যায় আজকের গৃহপালিত মুরগি।
কোন ধরণের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এরা এসেছে তা নিয়ে কথা বলেন প্রত্নতাত্ত্বিক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডরিয়ান ফুলার। তিনি বলেন, মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অরণ্য যেখানে বাঁশের আধিক্য আছে, এমন প্রাকৃতিক পরিবেশেই আধুনিক মুরগির পূর্বসূরীরা বেড়ে উঠেছে। আর এমন পরিবেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়।
এই গবেষণাটি আরও একটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে এত বেশি সংখ্যক জিনোম নিয়ে গবেষণা করা হয়নি। কেননা আগে জিনোম সিকোয়েন্স প্রক্রিয়ায় গবেষণা ছিল অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এখন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যয় কমে এসেছে। ২ বছর ধরে ৬০ জন গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই গবেষণাটি করা হয়েছে।
সূত্র: সিএনএন