মক্কা: ১০০ বছরে পবিত্র নগরী যেভাবে বদলে গেছে
রোববার, ১৮ জুলাই। মক্কা। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো ইহরামের পোশাক পরা ৬০ হাজার হাজির আধ্যাত্মিক যাত্রা। আল্লাহর কাছে জীবনে কৃত সমস্ত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নতুনভাবে জীবন শুরু করার জন্য শুরু হয় তাদের পাঁচ দিনব্যাপী আধ্যাত্মিক সফর।
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভ বা রুকনের একটি হজ। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম সকল মুসলিমের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ। করোনা মহামারির আগে প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে প্রায় আড়াই কোটি মুসলিম মক্কায় হাজির হতেন হজ করার জন্য।
তবে এ বছরও ২০২০ সালের মতোই কোনো বিদেশি হাজি হজে অংশ নিতে পারবেন না। সৌদি আরব নিয়ম করে দিয়েছে, ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী টিকা নেওয়া ৬০ হাজার ব্যক্তি এবার হজ করতে পারবেন।
মক্কার বিবর্তন:
হজ্বের কেন্দ্রবিন্দু মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ। এখানেই আছে পবিত্র কাবা শরিফ। ঘনকাকৃতির কাঠামোটি সুদৃশ্য কালো রেশমে মোড়ানো। সেই রেশম সোনা ও রুপার সুতায় পবিত্র কোরআনের আয়াত খচিত।
ইসলাম ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, নবী ইব্রাহিম (আ.) ও তার ছেলে ইসমাইল (আ.) কাবাকে আল্লাহর ঘর হিসেবে তৈরি করেছিলেন। পবিত্র কাবা বেশ কয়েকবার নির্মিত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। কাবার ভিত মজবুত করার জন্য সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে এতে বড় সংস্কারকাজ চালানো হয়। বিশ্বের সকল মুসলিম কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়েন।
প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে আসা লাখ লাখ হাজির স্থান সংকুলানের জন্য গত কয়েক দশকে গ্র্যান্ড মসজিদের প্রাঙ্গণের আয়তন অনেক বাড়ানো হয়েছে। ২০১৯ সালে সৌদি আরব জানায়, গত ৫০ বছরে তারা সাড়ে ৯ কোটির বেশি হাজিকে আতিথেয়তা দিয়েছে। সৌদি আরব জানিয়েছিল, প্রতি বছর হজ ও উমরাহ করতে আসা ৩ কোটি আতিথেয়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা।
৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (স.) তার 'বিদায় হজে' যা যা করেছিলেন, হাজিরাও হজে সেই কাজগুলোই করেন। হজের মাধ্যমে মুসলিমরা অন্তরের কালিমা পরিষ্কার করেন, এবং স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করেন।
ইসলামী চন্দ্র ক্যালেন্ডারের দ্বাদশ ও সর্বশেষ মাস জিলহজের আট তারিখে হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়। হজ্ব পাঁচ দিন ধরে হয়ে থাকে। এ সময় মিনা, আরাফাত পর্বত, মুজদালিফা, জামারাত এবং গ্র্যান্ড মসজিদসহ মক্কার আশপাশের স্থানগুলোতে যেতে হয় হাজিদের।
শত শত বছর ধরে সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উটের পিঠে বা জাহাজে চেপে কয়েক সপ্তাহ সফর করে হজ করতে মক্কায় এসেছেন হাজিরা। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে তারা এখন বিমানে চেপে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় চলে আসতে পারেন হজ করতে।
সামাজিক দূরত্বের হজ্ব:
২০১২ সালে ১৯০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ৩২ লাখ হাজি মক্কায় হাজির হয়েছিলেন হজ করতে। এক বছর পর মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা মার্স করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে প্রায় দশ লক্ষ হাজি মক্কা সফর বাতিল করতে বাধ্য হন।
২০২০ সালে, কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের পর সৌদি কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, সৌদি আরবের মাত্র ১০ হাজার মানুষকে হজ করার অনুমতি দেওয়া হবে—বিদেশি হাজিরা হজ্ব পালনের অনুমতি পাবেন না।
এবছর ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ৬৫ হাজার সৌদি নাগরিক হজ করতে পারবেন। অবশ্য সবার টিকা নেওয়া থাকতে হবে।
২০২০ সালের ১৯ মার্চ সৌদি কর্তৃপক্ষ মক্কা ও মদিনার দুটি প্রধান মসজিদে সমস্ত নামাজ স্থগিত করে। সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পর সাত মাস বাদে মসজিদ দুটিতে আবার নামাজ পড়া শুরু হয়। ২০২০-এর ১ নভেম্বরে সৌদি আরবের বাইরে থেকে আসা সীমিত সংখ্যক মুসলিমকে উমরাহ ভিসা দেওয়া শুরু হয়।
ডিজিটাল বিশ্বে হজ:
এই বছর হজ করার সুযোগ না পাওয়া লাখ লাখ মানুষ ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র ভূমিতে যা যা হবে, তার ডিজিটাল স্বাদ পেতে পারেন।
২০১৫ সালে আল জাজিরার ৩৬০ ডিগ্রি ভিআর-এর কল্যাণে দর্শকরা হজের সময় মুসলিমদের পবিত্র ভূমির প্রধান প্রধান স্থানগুলো দেখতে পেয়েছিলেন।
ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ হজ্বের তৃতীয় দিনে উদযাপিত হয় এবং তিন দিন স্থায়ী হয়। এ বছর সারা বিশ্বে মুসলমানরা ২০–২২ জুলাইয়ের মধ্যে ঈদ উদযাপন করবেন।
- সূত্র: আল জাজিরা