ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করে নির্মল ঘুম এনে দিতে পারে যেসব ইনডোর প্ল্যান্ট
ঘরের ভেতরে বা বাইরে, গাছ লাগানোর উপকারিতা নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু ঘরের বাইরে গাছ লাগানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা কোথায় শহুরে অঞ্চলে। আবার ঘরের ভেতরে গাছ লাগাননোও আছে নানা ঝক্কি। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাবে ঘরের ভেতর গাছ লাগালেও তা বেঁচে থাকে না। এ কারণে শহুরে নাগরিক জীবনে ঘরের ভেতরেই স্বল্প আলো-রোদ-বাতাস পেলেই বাঁচে এমন ইনডোর প্ল্যান্ট লাগানো যেতেই পারে।
ছোট ছোট ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের ভেতর এক টুকরো সবুজ এনে দেয় শুধু তা নয়। গাছের সর্বজনবিদীত গুণাগুণ ছাড়াও কিছু ইনডোর প্ল্যান্টের এমন কিছু গুণ রয়েছে যা অনেকেই হয়তো জানি না।
এ ধরনের কিছু হাউজ প্ল্যান্ট দীর্ঘমেয়াদে আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক হতে পারে, ঘরের দূষিত বাতাস ফিল্টার করতে পারে, শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতাও কমে আসতে পারে। শুধু তাই না, প্রাকৃতিকভাবে ঘরের বাতাস থেকে দূষিত বস্তুকণা দূর করে বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।
আধুনিক প্রযুক্তির ক্লিনিং মেশিন, ডেকোরেশনের জিনিস, কুকার সবকিছুর কারণেই ঘরের বাতাস দূষিত হয়। ঘরের ভেতরের পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে। শীতকালে দরজা-জানালা কম খোলায় এ সমস্যা আরও বেশি হয়।
একারণেই ঘরে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখলে তা ঘরের ভেতরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে, ঘরের ভেতর এসব গাছ বেশি থাকলে তা ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে, এনে দিতে পারে প্রশান্তির ঘুমও। জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু ইনডোর প্ল্যান্টের কথা।
আরেকা পাম
সাধারণত ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজেই এ গাছটি ব্যবহার বেশি। এর পাতাগুলো দেখতে কিছুটা পাম গাছের পাতার মতো, বাড়িতে বসেই খানিকটা ছুটির দিনের আমেজ পাবেন গাছটি থাকলে। বাগান বিশেষজ্ঞদের মতে, রুমে গাছটি থাকলে নির্মল ঘুম হয়। যাদের সাইনাসের সমস্যা আছে শীতের সময়টা তাদের জন্য বেশ কষ্টদায়ক। এ গাছটি প্রাকৃতিক হিউমিডিফায়ার হিসেবে কাজ করে, তাই শোবার ঘরে গাছটি থাকলে কিছুটা আরামেই ঘুমুতে পারবেন।
তবে গাছটি আকারে মোটামুটি বড় হওয়ায় গাছটি লাগাতে রুমে কিছুটা বাড়তি জায়গার দরকার পড়বে।
পিস লিলি
এই গাছটিতে অদ্ভূত সুন্দর সাদা ফুল ধরে। পাতাগুলো দেখতে পাম গাছের পাতার মতো। তবে এই গাছটির বেশ যত্ন নিতে হয়, অনেকেরই কাছেই তা বেশ ঝক্কির মনে হতে পারে। গাছটির জন্য এমনতিতে প্রখর রোদ, খুব বেশি পানি বা দামী সারেরও প্রয়োজন নেই। আমেরিকার নিরক্ষীয় চিরহরিৎ বন পিস লিলির আদিনিবাস হওয়ায় উষ্ণ, আর্দ্র, আলোছায়াযুক্ত পরিবেশ গাছটি তড়তড় করে বেড়ে ওঠে।
একবার যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলো বুঝে গেলে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধিকরণের জন্য অসাধারণ হবে সাদা ফুলের গাছটি। মাঝারি থেকে মৃদু আলোতেই বাঁচতে পারে পিস লিলি। বাতাস দূষণমুক্ত রাখা ছাড়াও এর সাদা ফুল আপনার ঘরে এক টুকরো রোদের হাসির মতো শোভা বর্ধন করবে।
ইংলিশ আইভি
এ গাছটি যুক্তরাজ্যে অনেক বেশি দেখতে পাওয়া যায়। একটি কাটিং লাগালেই তা থেকে ধীরে ধীরে গাছ গজিয়ে যায়।
গাছটিতে প্রতিদিনই পানি দিতে হয়। রোদের উজ্জ্বল আলোযুক্ত স্থান যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না, এমন জায়গায় রাখতে হয় গাছটি। জানালার কার্নিশ হতে পারে আপনার ইংলিশ আইভি লাগানোর উপযুক্ত জায়গা।
অ্যালার্জি বা অ্যাজমা'র সমস্যা থাকলে তাদের জন্য এরচেয়ে ভালো ইনডোর প্ল্যান্ট আর হয়না। চলমান কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে বাতাসে জন্মানো মোল্ড ৭৮ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারে এই গাছটি।
এ কারণে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে গাছটির জনপ্রিয়তা সবখানেই। তবে সতর্ক হওয়ারও ব্যাপার আছে, গাছটির পাতা পোষা প্রাণীদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। তাই ঘরে পোষ্য বন্ধু থাকলে তাদের নাগালের বাইরে রাখতে ভুলবেন না।
স্নেক প্ল্যান্ট
স্নেক প্ল্যান্টের মতো জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্ট বোধহয় খুব কমই আছে। রান্নাঘর থেকে শুরু করে বাথরুম, বৃক্ষপ্রেমীদের ঘরে হরহামেশাই দেখা যায় এটি। মৃদু আলো আর কিছুটা উষ্ণ তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে স্নেকপ্ল্যান্ট। প্রতিদিন পানিও দিতে হয় না। এ কারণে এর রক্ষণাবেক্ষণও বেশ সহজ।
বাতাসের বিষাক্ত বস্তুকণা আর কার্বন-ডাই অক্সাইড দূর করে বাতাস বিশুদ্ধ রাখে গাছটি।
ড্রাকাইনা ফ্রেগরেন্স
উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ুর দেশগুলোতে খুবই জনপ্রিয় একটি গাছ ড্রাকাইনা ফ্রেগরান্স। ঘরের বাইরে বা ভেতরে সব পরিবেশেই টিকে থাকে গাছটি। গাছটির যত্ন নেওা বেশ সহজ, বাতাস থেকে দূষিত বস্তুকণা দূর করে।