ভালোবাসা দিবসের নেপথ্য কাহিনি কী? ভালোবাসার কথা কম, রক্তপাতই কি বেশি?
ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে আমরা বলি ভালোবাসা দিবস। অর্থাৎ এ দিনটা ভালোবাসার। গোটা বিশ্বজুড়ে রোমান্টিক প্রেমের অভিন্ন কনসেপ্টকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভ্যালেন্টাইনস ডে-র ঐতিহ্য। কিন্তু যে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের থেকে এসেছে এ দিনটির নাম, তার আসল কাহিনি কিন্তু নৃশংসতায় ভরপুর, এবং যথেষ্ট হৃদয়বিদারক।
ইতিহাসে বেশ কয়েকজন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন রয়েছে। তাই এই বিশেষ ব্যক্তিত্বের ঐতিহাসিক উৎপত্তিস্থল নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আছে সন্দেহের অবকাশও। কেউ কেউ মনে করেন, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নিছকই একটি মিথ। আবার অনেকের মতে, তিনি ছিলেন রক্ত-মাংসের বাস্তব এক মানুষ।
অ্যাকাডেমিক জার্নাল 'রেপার্টোরিও দে মেডিসিনা ওয়াই সিরুগিয়া' অনুযায়ী, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক ঐতিহাসিক চরিত্রটির নেপথ্যের সম্ভাব্য মানুষটি হলেন তৃতীয় শতকের রোমান পুরোহিত ভ্যালেন্টাইন দে টার্নি।
২৭০ খ্রিস্টাব্দের কথা। সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার উপর। কেননা তার ধারণা ছিল, বিয়ে করার পর যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের মনে এক ধরনের অনীহা সৃষ্টি হয়। তাই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে সামরিক বাহিনী।
কিন্তু সম্রাটের এমন স্বেচ্ছাচারী আচরণ মানতে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন নারাজ। কোনো নারী-পুরুষ যদি পরস্পরকে ভালোবাসত, তাহলে সম্রাটের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই তাদের দুজনকে গোপনে বিয়ে দিয়ে দিতেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে ক্রুদ্ধ সম্রাট সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে কারারুদ্ধ করেন।
কারাগারে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাস্টেরিয়াস নামের একজন জেলার। ক্যাথলিক পুরোহিত ভ্যালেন্টাইনকে তার কথিত ক্ষমতা নিয়ে খোঁটা দিতেন অ্যাস্টেরিয়াস। বলতেন, এতই যদি তার শক্তি, তাহলে তার জন্মান্ধ কন্যা জুলিয়াকে সুস্থ করে তুলতে পারেন না কেন!
সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন তখন প্রার্থনা করে জুলিয়াকে দৃষ্টিশক্তি দান করেন। তার এই অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা দেখে রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে যান অ্যাস্টেরিয়াস। তৎক্ষণাৎ খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন তিনি, এবং কারাগার থেকে সব ধর্মীয় কারাবন্দিকে মুক্ত করে দেন।
বলাই বাহুল্য, এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ২৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিরশ্ছেদ করবেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ও অ্যাস্টেরিয়াসের।
ভ্যালেন্টাইন দে টার্নি তখন একটি চিঠি লেখেন তার মেয়ে জুলিয়াকে। চিঠির শেষে তিনি স্বাক্ষর করেন "ফ্রম ইয়োর ভ্যালেন্টাইন" লিখে। এই শব্দ তিনটি পরবর্তীতে তার শহীদী মৃত্যুকে উদযাপনের প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
যা-ই হোক, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন মৃগীরোগ সারিয়ে তোলার অনন্য ক্ষমতার কারণেও বিশেষ পরিচিতি পেয়েছিলেন। মৃগীরোগ শতকের পর শতক ধরে জনমনে ত্রাস ছড়িয়ে এসেছে। ভাবা হতো, কোনো এক প্রেতাত্মার আছরের কারণে এই রোগটি হতো। তাই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন একসরসিস্ট, অর্থাৎ ওঝা হিসেবে ঝেড়ে মৃগীরোগীদের প্রেতাত্মার কবল থেকে মুক্ত করতেন এবং তাদের রোগ সারিয়ে দিতেন।
চ্যাপেলসহ ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন আর্টে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের অবিশ্বাস্য রোগ-নিরাময় ক্ষমতার চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু বিশ্ব আজ তাকে সেজন্য নয়, চেনে একদমই ভিন্ন এক কারণে: ভালোবাসার সমার্থক আজ তার নাম!
- সূত্র: ইউএসএ টুডে