কর্মীরা সমানে চাকরি ছাড়ছে! তাদের ধরে রাখতে করা উচিত যে ৩ কাজ
চলছে 'দ্য গ্রেট রেজিগনেশন'। একের পর এক চাকরি ছেড়ে চলেছে কর্মীরা। বলাই বাহুল্য, তাদের চাকরি ছাড়ার পেছনে একটি বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বর্তমান কর্মস্থলের ব্যাপারে মনের মধ্যে জাগ্রত নেতিবাচক ধারণা। সেই ধারণা জন্মানোর পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকে তাদের বস বা নেতাদেরই।
তাই কর্মীদের বর্তমান চাকরিতে ধরে রাখা, এবং চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর্মীবান্ধব নেতার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের দিনে সেরকম কর্মীবান্ধব নেতার সংখ্যা খুবই কম।
ভালো নেতৃত্ব এমন একটি জিনিস, যা স্রেফ গুটিকয়েক কাজের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। বরং একজন মানুষ আদতেই ভেতর থেকে কেমন, সেটির উপরই নির্ভর করে তার ভালো নেতা হয়ে ওঠা।
তবে আপাতত চলমান জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় কিছু পদক্ষেপ নিতেই পারে নেতারা। তুলে ধরছি সেরকমই তিনটি কাজের কথা, যার মাধ্যমে কর্মীদের বর্তমান চাকরি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মন থেকে রাজি করানো যেতে পারে।
১. কর্মীদের সামনে ক্যারিয়ারে আগে বাড়ার নিত্যনতুন সুযোগ তুলে ধরুন
আজকালকার কর্মীরা কেবল একটি ক্যারিয়ারে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রেখে, সেই ক্যারিয়ারের উন্নতিতেই সন্তুষ্ট নয়। তারা দেখতে চায়—নিজস্ব দক্ষতা, যোগ্যতা ও আগ্রহ অনুযায়ী বর্তমান ক্যারিয়ারের বাইরেও তারা আর কোথাও গিয়ে, আরও ভালো করতে পারে কি না। তাই তাদের সামনে সেসব সম্ভাব্য সুযোগ উপস্থাপন করতে হবে।
তবে এখন প্রশ্ন এটি নয় যে কর্মীরা ক্যারিয়ারে পরিবর্তনের সুযোগ খুঁজছে কি না। বরং প্রশ্ন এটি যে, নতুন কোথায় গিয়ে বা কী করে তারা ক্যারিয়ারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে। তাই একজন ভালো নেতা বরং বর্তমান কোম্পানিতেই প্রত্যেক কর্মীকে নতুন নতুন ভূমিকা বা পদ গ্রহণের অফার দিতে পারে।
চাকরির বাজার নিয়ে কাজ করা গ্লোটের একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারীই (৬৫ দশমিক ১ শতাংশ) মনে করে না যে তারা ক্যারিয়ারে আগে বাড়ার জন্য যেসব কাজের সুযোগ বা অপশন খুঁজছে, তাদের বর্তমান কর্মস্থল তাদেরকে সেগুলো দিচ্ছে না।
তাই একজন ভালো নেতার উচিত হবে গতানুগতিক বস সুলভ আচরণ থেকে বেরিয়ে এসে কর্মীদের সামনে নতুন নতুন সুযোগ হাজির করা।
২. কর্মীদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাতের পরিমাণ বাড়ান
জুম বা স্কাইপির মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে একে অন্যকে 'দেখা' যায় ঠিকই। কিন্তু পৃথিবীতে করোনা মহামারি আসার আগে কর্মস্থলে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে সশরীরে, মুখোমুখি যোগাযোগের মাধ্যমে যে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হতো, তা এখানে অনুপস্থিত। কাজের কথার বাইরে পারস্পরিক ভালো-মন্দের খোঁজখবর নেওয়া বা অন্য কোনো ধরনের আন্তরিকতাই এ ধরনের প্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগে ঠিকভাবে সম্ভব হয় না।
বিমারি ২০২১ ট্যালেন্ট ইনডেক্স তাদের একটি গবেষণার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছে, কর্মীরা আসলে কী চায়। সেখানে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,০০০-এর বেশি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে অর্ধেকই বিশ্বাস করে, বসের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান বা একান্ত আলাপ ও সময় কাটানোর সুযোগের অভাবেই বিগত বছরে তাদের পদোন্নতি আটকে গেছে।
তাই একজন কর্মীবান্ধব নেতার উচিত অধীনস্থ প্রত্যেক কর্মীর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা ও সময় কাটানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। সেই সময়ে সে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিতে পারে তারা ভবিষ্যতে কী করতে চায় এবং নিজেদেরকে কোথায় দেখতে চায়।
"প্রত্যেক কর্মীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারলে নিয়োগকর্তাদের পক্ষে আরও সহজ হবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রমোশন, গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন এবং উন্নয়ন সহায়তা নিশ্চিত করা," বিমারির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আবাকার সাইদভ বলেন।
৩. যোগাযোগের পথ প্রশস্ত করুন
নেতার সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগের অভাবই কর্মীদের কাজের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি ও চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ। তাই কর্মীদেরকে শুধু বছরে একবার পারফরম্যান্স রিভিউ দিলেই চলবে না। বরং বিভিন্ন ডিজিটাল এইচআর টুলের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ জারি রাখতে হবে। এতে করে একদম রিয়েল-টাইমে তাদের যেকোনো ফিডব্যাক বা সুবিধা-অসুবিধার কথা জানা যাবে না।
তাছাড়া কর্মীরা যেন গণহারে চাকরি না ছাড়ে, তা নিশ্চিত করতে ভালো নেতাদেরকে আজকের দিনে ভালো কোচও হতে হবে। ভালো নেতারা কর্মীদের সঙ্গে প্রতিটি একান্ত আলাপে তাদের মধ্যে আত্মসচেতনতা তৈরি করে, নানা ধরনের পরামর্শ দেয় যেন সেগুলো মেনে তারা কাজের ক্ষেত্রে আরও উন্নতি ঘটাতে পারে।
এভাবে ভালো নেতারা শুধু ভুল হওয়ার পরই কর্মীদের সেই ভুল ধরতে উদ্যত হয় না, রাগারাগি করে না; বরং আগে থেকেই তাদেরকে উপযুক্ত গাইডলাইন দেয় যাতে কাজে কোনো ভুলই তাদের না হয়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্মীরা তাদের বসদের কাছ থেকে এগুলোই আশা করে, তাই সহজে মেন্টর-বসের সান্নিধ্য ছাড়তে চায় না তারা।
- সূত্র: ইঙ্ক