লং প্লের বিশাল সংগ্রহ আর আড্ডা নিয়ে এখনও আছে গানের ডালি!
দোকানে বসে গান শুনছিলেন দিলীপ। কর্মচারীরাও কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ দোকানে এলেন সুবীর নন্দী। দিলীপকে বললেন, 'পাকোড়া আনতে পাঠাও, পাকোড়া খাবো।' ব্যস, নিয়ে আসা হলো গরম গরম পাকোড়া, আর তার সঙ্গে শুরু হলো তাল মিলিয়ে আড্ডা…এইরকম আড্ডা প্রায়ই বসতো রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ইয়াকুব সুপার মার্কেটের 'গানের ডালি' দোকানে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, গজল সম্রাট পঙ্কজ দাস, শ্রেয়া ঘোষালের মতো জনপ্রিয় সব সুরের তারকারা এসেছেন এই দোকানে। ভারতীয় কোনো শিল্পী বাংলাদেশে এলেই কম-বেশি ঢুঁ মেরে যেতেন এখানে। আর আশেপাশের দোকানের মানুষগুলো এসে ভিড় জমাতো এই ভেবে যে, তারকাদের যদি একটু দেখা যায়, একটা অটোগ্রাফ মেলে যদি!
একসময় এলিফ্যান্ট রোড, আজিজ সুপার মার্কেট ও নিউমার্কেট এলাকায় পাওয়া যেত গানের ডালি, সুরবিতান, গীতালী, সুর-সঙ্গম, সারগাম, কসমোপলিটন, মেমোরি রেকর্ডিং সেন্টার, ঝঙ্কার -গান ও সিনেমার সিডি-ক্যাসেট বিক্রির দোকান। বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠত অডিও রেকর্ডের এই দোকানগুলো। ভিড় লেগে থাকত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণী থেকে মধ্যবয়সী সংগীতানুরাগী শ্রোতাদের। মাঝেমধ্যে বসতো সুরের শিল্পীদের আড্ডা।
এই আড্ডার চিত্র যে শুধু 'গানের ডালি'তেই দেখা যেত এমনটি নয়; সেসময়ের নামকরা প্রায় প্রতিটি গানের দোকান গমগম করতো বিখ্যাত এসব ব্যক্তিদের পদচারণায়।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দোকান আজ হারিয়ে গেছে। যেগুলো টিকে আছে, সেগুলোও অনেকটাই অচল। বছরের পর বছর ধরে ধুলো জমে গেছে ক্যাসেট, সিডি রাখার তাঁকে। বেচাকেনা নেই। মানুষ এখন আর কষ্ট করে ক্যাসেট সিডি কিনবে কেন, গান তো এখন পকেটে! স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট হলেই হয়।
এখনও সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে গানের ডালি
দোকানের শাটার খুলতেই দেখা গেল, কাঁচের দরজার একটি ঘর। সাগর সেন, রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শ্যামল মিত্র, আরতি মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সূচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আরও কতজনের ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদেয়ালের এই ঘরে।
দরজার ভেতরের পাশ দিয়ে কিছু পোস্টার লাগানো। সেখানে রয়েছে রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, কিশোর কুমারসহ কয়েকজন বিখ্যাত সংগীতশিল্পীর পোস্টার। সবার মুখই প্রায় চেনা। কিন্তু একটি ছবি ছিল অন্যদের থেকে আলাদা। নীল পাঞ্জাবি পরা মধ্যবয়সী এক লোক। ছবির নিচে লেখা, 'আমরা শোকাহত'।
উনি কে- জিজ্ঞেস করতেই দোকানে ঢুকলেন সৈয়দ দিলীপ। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখেই তিনি উত্তর দিলেন, 'ও আমাদের রিন্টু, ৩৭ বছর কাজ করেছে আমাদের সঙ্গে। গতবছর করোনায় মারা যায়।'
রিন্টু ছিল সবচেয়ে পুরোনো কর্মচারী। বয়স ছিল ৫০। শারিরীক জটিলতা থাকায় করোনার কাছে হার মানতে হয় তাকে। তাকে নিয়ে দিলীপ বারবারই বলছিলেন, 'ওর মতো দ্বিতীয় কেউ আর হবে না। এখানে যত গান আছে, সব মুখস্থ ছিল ওর।'
রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি আর ক্লাসিক্যাল মিউজিকের হাজার হাজার সংরক্ষণ রয়েছে এখানে।
শুরুটা সৈয়দ মানিকের হাতে
সৈয়দ দিলীপের বড় ভাই সৈয়দ মানিক, ছোটোবেলা থেকেই গানপাগল মানুষ। ভালোবাসতেন রবীন্দ্র, নজরুল আর ক্লাসিক্যাল সংগীত। মোহাম্মদ রফি ছিল তার প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। গানের প্রতি অগাধ টান আর ভালোবাসাই তাকে উদ্বুদ্ধ করলো ১৯৭২ সালে 'গানের ডালি' শুরু করতে।
সৈয়দ মানিক পেশায় ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, গানের ডালি ছিল তার নেশার জায়গা। চাকরি আর গানের ডালি একসাথে চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তাই ৮৩ সালে ছোটো ভাই সৈয়দ দিলীপ নেমে পড়েন এই ব্যবসায়।
মানুষের জীবনে তখন বিনোদনের অভাব ছিল
ইয়াকুব মার্কেটের ভেতরেই তাদের ছিল দুটি দোকান। একটিতে ক্যাসেট বিক্রি হতো অন্যটিতে সিডি। এই ক্যাসেট আর সিডির আগে চল ছিল লং প্লে'র। একসময় এখানে হরহামেশা লেগে থাকতো কাস্টমারদের আনাগোনা। তারা তাদের পছন্দের গানগুলো রেকর্ড করতে দিতো। প্রথমদিকে লং প্লে খুব চলতো। ভারত থেকে আনা এসব লং প্লের চাহিদা ছিল ঢাকার শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের ঘরে ঘরে। এরপর একটা সময় বাজারে ক্যাসেট চলে আসলে সবাই ক্যাসেটের দিকে ঝুঁকলো। কেউ সাত মিনিটের ক্যাসেট করতো, কেউ ৯০ মিনিটের করতো। আকারে ছোটো এবং গানও ধরে বেশি, তাই ক্যাসেটের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় আনেক বেশি। কিন্তু রেকর্ড করতে অনেক সময় লাগতো। একটা ক্যসেট করতেই আধাবেলা নাকি চলে যেত! তাছাড়া বেঁছে বেঁছে গান ঠিক করার বিষয়টাও ছিল, তাই সময় লাগতো আরও বেশি।
দিলীপ বলেন, 'ক্যাসেটের খুব চাহিদা ছিল আমাদের। যখনই ক্যাসেট আনতাম, শেষ হয়ে যেত।'
৮৬-৮৭ সালের দিকে বাংলাদেশে ক্যাসেট আমদানি শুরু করে গানের ডালি। সেসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় গানের কোম্পানি, 'দি গ্রামোফোন কোম্পানি ইন্ডিয়া লিমিটেড' এর সঙ্গে চুক্তি হয় তাদের। কোম্পানির অনুরোধে, ১৯৮৯-৯০তে বাণিজ্য মেলাতেও অংশ নেয় 'গানের ডালি'।
এরপর সিডির যুগ আসে '৯০ এর পর। ইংল্যান্ডের বহুজাতিক সঙ্গীত প্রকাশনা কোম্পানি ইএমআই প্রথম সিডি নিয়ে আসে বাজারে। সেসময় সিডির অনেক দাম ছিল। দুই থেকে তিন হাজার টাকা দাম প্রতি সিডির!
সেসময় মানুষের বিনোদনের উৎস ছিল খুব কম। টেলিভিশন মানেই বিটিভি। আর ছিল রেডিও। তাই লং প্লে, ক্যাসেট, সিডি এসব মানুষের সেই অভাববোধটুকু পূরণ করতো।
কেন ভালো লাগে?
দোকানে এখন আগের মতো চার পাঁচজন করে কর্মচারী নেই। একজনই আছে, নাম জিহাদ। সে-ই মূলত ঝাড়া-মোছার কাজ করে। গত চার বছর ধরে কাজ করছে এখানে। তবে বয়স অল্প বলে কাজের প্রতি অনীহাই বেশি তার। এই বড় গোল গোল চাকা (লং প্লে রেকর্ড) তার কাছে তেমন ভালো লাগার বস্তু হয়ে ওঠেনি। তাই আফসোস হয় দিলীপের। নিজে একজন ঠিকাদারি ব্যবসায়ী, তাই সবসময় সময় দিতে পারেননা। শুক্রবারটুকুই বরাদ্দ রেখেছেন নিজে বসার জন্য। যত যা-ই হোক, প্রতি শুক্রবার তিনি বেলা বারোটায় আসেন এখানে, আর ফিরে যান রাত আটটার সময়।
'এখন নতুন কিছু আর আমদানি করিনা, রেকর্ডও করিনা। আসলে প্রয়োজনই নেই। কিন্তু নিয়মিত ঝাড়া-মোছা করি। সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখার চেষ্টা করি।' দিলীপ বলেন।
ব্যবসা আজ তলানিতে গিয়ে পৌঁছলেও দোকানের চেহারা ঠিকই ৫০ বছরের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। চারপাশের সব জামাকাপড়ের দোকানের মাঝে এই 'গানের ডালি' যেন সত্যিই ভালো লাগার ডালি খুলে বসে আছে। ইন্টারনেটের পুরোনো ছবি ঘেঁটে দেখলাম, শুধু সময় আর ব্যবসার হাল-হকিকতই বদলেছে। বাহির থেকে দেখতে দোকানটি একদম যেন সেই আশির দশকের জনপ্রিয় 'গানের ডালি'ই হয়ে আছে।
আর কেনো-ই বা থাকবেনা? বেচাকেনা নেই একথা ঠিক, কিন্তু মানুষের আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়নি। একসময় যারা আসতেন, তারাই এখনো আসেন। হয়তো আড্ডা দিতে, হয়তো নিজের স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখতে, হয়তো ছেলেমেয়ে-নাতিনাতনিকে যৌবনের প্রেমস্থলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে, কখনো-বা শখের বশে কোনো অ্যালবাম কিনতে।
দিলীপ জানান, 'শিক্ষিত সমাজ আমাদের গান পছন্দ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে, বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাও আমাদের কাছে আসেন। কেউ কেউ এসে পুরোনো গানগুলোই কিনে নিয়ে যান'। শৌখিন ব্যাক্তিরাই মূলত আসেন এখানে। তা নাহলে পকেটেই যখন রয়েছে, কে আর আসে কষ্ট করে গান কিনতে?
এই মানুষগুলোই আসলে গানের ডালিকে বাঁচিয়ে রেখেছে
শুরুটা বড় ভাই সৈয়দ মানিকের হাত ধরে হলেও, ছোটো ভাই দিলীপ সবসময়ই সাথে সাথে ছিলেন। তাই এই দোকানের প্রতি ভালোবাসা ভাইয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
দিলীপ বলেন, 'আমার আগে আমার ভাই দেখতো। ভাইয়ের পর আমি, আমার পর কে হবে জানিনা। নতুন প্রজন্মের তো খুব একটা আগ্রহ নেই। তবে যতদিন দু ভাই বেঁচে আছি, এটাকে ধরে রাখবো। ব্যবসার কথা এখন আর ভাবিনা। মানুষ আসে, স্মৃতিচারণ করে, আড্ডা দেয়- এটাই এখন আমাদের পাওয়া।'
'প্রতিমাসেই অনেক টাকার লস হয়। তারপরও ভালো লাগে। কেন লাগে? এই যে আপনি আসছেন, কথা বলছি, ভালো লাগছে। আমি আমার ভাইয়ের স্মৃতিটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।'
কীভাবে হতো রেকর্ড?
কোনো সংগীতশিল্পীর গান প্রথমে রেকর্ড করা হয়, তারপর সেটা একজন সঙ্গীতপরিচালক স্টুডিওতে নিয়ে যায়। স্টুডিও থেকে ভয়েস রেকর্ডিং হয়ে তারপর সেখান থেকে ক্যাসেট বা সিডিতে সেটি ধারণ করা হয়।
এরপর তাদের কাছে পাঠানো হতো ক্রোম বা মাস্টার ক্যাসেট। সেখান থেকেই গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী গান বেছে নিয়ে রেকর্ড হতো। আরেকটা ছিল স্পুল, কোনোরকম রেকর্ড করতে গেলে, স্পুল দিয়ে রেকর্ড করা হতো।
১৯৮০-২০০০ পর্যন্ত বেচাকেনা ছিল সবচেয়ে রমরমা। নব্বইয়ের পরেই মূলত বাংলাদেশের শিল্পীরা যেমন, সাদি মোহাম্মদ, ফেরদৌস আরা, শবনম মুশতারি, নাশিদ কামাল, সুবীর নন্দী, শুভ্র দেব আসতেন রেকর্ড করতে।
শুধু গান নয়, আছে সুরের মেলা
গানের ডালির সংরক্ষণে শুধু রবীন্দ্র-নজরুল, বাংলা হিন্দি ক্লাসিক্যাল গানই নয়, রয়েছে ওস্তাদ জাকির হোসেন, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ওস্তাদ রশিদ খান, আলাউদ্দীন খাঁ, পণ্ডিত যশরাজ, পণ্ডিত ভীমসেন জোশী, উস্তাদ গুলাম আলী খান, মনোহারী সিং প্রমুখ সঙ্গীতজ্ঞের বিশাল সমাহার।
একবার নাকি এক মজার কাণ্ড ঘটেছিল। এক বিখ্যাত লোক এসে ক্লাসিক্যাল রবি শংকরের সেতার কিনে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার ছেলে সেই সিডির বাক্সের মধ্যে একটি বাংলা হিট গানের সিডি রেখে দেয়। সিডির উপরে রবিশংকরের পোস্টার, আর ভিতরে বাংলা সুপার হিট গানের ডিস্ক। ফলে যা হলো, যখনই সে সিডিটা বাজাতো, সেতারের বদলে ঝাকানাকা গান শুরু হয়ে যেত!
গানের ডালির ভার্চুয়াল স্টুডিও
গান যেমন এখন পকেটে, তেমন গানের ডালিরও রয়েছে ভার্চুয়াল স্টুডিও। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে 'গানের ডালি' নামেই একটি অনলাইন স্টুডিও খুলেছে গতবছর। ইতোমধ্যে তা অনেকটাই ব্যবসাসফল হয়েছে।
তাছাড়া, ইউটিউব পেজে তাদের এই একবছরেই সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারেরও বেশি। টিভি স্টেশনের মতো নিয়মিত লাইভ হচ্ছে, গান রেকর্ড হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ইসলামিক কন্টেন্ট, নাটক, গানসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম পোস্ট করা হয় এখানে। সরকারের অনুমতি পেলে ইন্টারনেট বেজড টেলিভিশন 'আইপিটিভি'তেও দেখা যাবে গানের ডালিকে, এমনটাই আশা করছেন দিলীপ।
গানের ডালি হবে জনগণের
মানুষ যেভাবে লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়ে, গানের ডালিও হবে তেমনি গান শোনার একটি কেন্দ্র। সঙ্গীতপিপাসুরা এখানে এসে গান শুনবেন, সময় কাটাবেন। যারা কখনো কলের গান বা গ্রামোফোনের গান শুনেনি তারাও সে শখ মিটাতে পারবে।
আর গানের ডালির সদস্যদের অর্থ অসুস্থ, দরিদ্র শিল্পীদের মাঝে দান করা হবে- এমনি স্বপ্ন দেখেন দিলীপ।
তিনি মনে করেন, একটা সময় গানের ডালি হয়ে যাবে প্রাচীন ও দূর্লভ জিনিসের সংরক্ষণশালা। আর তখন শৌখিন ও শিল্পীপ্রেমীরা ঠিকই আসবেন এসবের খোঁজে। গানের ডালি হবে তখন এক তৃপ্তি আর ভালোলাগার উন্মুক্ত জায়গা।
গানের ডালি হাঁটছে পুরোনো দিনের পথেই
গানের ডালি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এইচএমভি-আরপিজির এ-দেশীয় পরিবেশক। একসময় দোকানটির ৮০ ভাগ রেকর্ড আমদানি হতো ভারত থেকে। লং প্লে গুলো সব ভারত থেকে আসা। বাংলাদেশে লং প্লে রেকর্ড তেমন একটা নেই। শবনম মুশতারীর এবং দেশাত্মবোধক গানের কিছু লং প্লে আছে।
কিন্তু এখন আর কোনো আমদানি নেই, নতুন প্রোডাকশন নেই এবং রেকর্ডিং সাইটও বন্ধ। পুরাতন রেকর্ডগুলোই ঘুরেফিরে চলে। ভারত থেকে তাদের শেষ চালানটিও এসেছিল ২০১৫ সালে। দিনে আগে ১০-১২টা করে গান রেকর্ড করা হতো, এখন একটা দুইটা, অনেক সময় তাও না। তবু দোকানে ডিজিটালের ছোঁয়া লাগতে দেননি দিলীপ। এলিফ্যান্ট রোডের সিডির দোকানগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই যেখানে লেখা, এখানে মেমোরি কার্ডে গান লোড করা হয়। গানের ডালি সেখানে হাঁটছে পুরোনোদিনের পথেই।
পেন্ড্রাইভ বা মেমরি কার্ডে ৫০০ গান ভরতে মূল্য আসে ১০০ টাকা। আর সেখানে একটা সিডি করলেই মেলে ২০০ টাকা। কিন্তু আজকাল কেউ তো আর সিডি কেনে না। তবে যারা সত্যিই ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত ভালোবাসে, পুরোনো স্মৃতি ধরে রাখতে চায়, তারা ঠিকই আসে এসব কিনতে। এই যুগে এসেও কেউ কেউ লং প্লে রেকর্ড কিনে নিয়ে যায়। দুদিন আগেই নাকি ৬০ বছর বয়সী একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এসেছিলেন। পাঁচটি লং প্লে কিনে নিয়ে যান।
এই হাতে গোনা কিছু শৌখিন পুরোনো মানুষদের ভালোবাসায় দোকানটি বেঁচে আছে। লাভ তো হয়না, তবে স্টুডিও এবং এখান থেকে যতটুকুই উঠে আসে, তাতেই চলে যাচ্ছে দোকানের রক্ষনাবেক্ষণ খরচ। আগের দুটি দোকানের একটি এখন জামাকাপড় বিক্রি করছে। সেসময় অন্য যারা ছিলেন, তারা তো ব্যবসাই বদলে ফেলেছেন। কিন্তু এই দুই ভাই (মানিক-দিলীপ) মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছেন দোকানটির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার।
গানের ডালিকে তাই আর দোকান নয়, বরং 'আড্ডাখানা' কিংবা 'সঙ্গীত সংরক্ষণশালা' বলা যায়!