ঢাকা মানেই তখন তাঁতিবাজার, শাঁখারী বাজার…আর কল্পনা বোর্ডিং!
এই হোটেলের চিতল মাছের কোফতা খেয়ে নাকি প্রশংসা লিখেছিলেন ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকার এক সাংবাদিক! তাই লোভ সামলাতে না পেরে পা দিয়েছিলাম শাঁখারীবাজারের কল্পনা বোর্ডিং ও হোটেলে। শাঁখারী বাজারের পোগোজ স্কুলের লাগোয়া যে গলি, তার একবারে শেষ মাথায় কল্পনা বোর্ডিং।
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক মহাতীর্থ এই শাঁখারী বাঁজার। শাঁখারীদের নামানুসারেই এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে শাঁখারীবাজার। ঢাকা শহরের পত্তনের সময় থেকেই শাঁখারীরা বসবাস করছে এখানে। আজও তেমনি অপ্রতিহত গতিতে শাঁখারীরা তাদের শাঁখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিন ভাইয়ের কল্পনা বোর্ডিং
১৯৬৫ সালে তিন ভাই—নন্দলাল নাগ, সিতানাথ নাগ আর বৃন্দাবন নাগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যার নাম 'কল্পনা বোর্ডিং ও হোটেল'। সে সময় ঢাকা মানেই ছিল পুরান ঢাকার এই তাঁতিবাজার, শাঁখারী বাজার—এসব অঞ্চল। নতুন ঢাকার গোড়াপত্তন তখনও হয়নি। ফলে ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসত, তাদের থাকতে হতো এই অঞ্চলগুলোতেই।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা এসব মানুষকে এক টুকরো ঘরের স্বাদ দিতেই তিন ভাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে মানুষ নিজ ঘরের মতোই সেবা পাবে, থাকবে জানমালের নিরাপত্তা।
তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাই বৃন্দাবন নাগই ছিলেন মূলত এই হোটেলের দেখভালের দায়িত্বে। তাই উত্তরাধিকারসূত্রে বৃন্দাবন নাগের মৃত্যুর পর এ দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় তার ছেলেদের ওপরই। বৃন্দাবনের মৃত্যুর পর বড় ছেলে দীপক কুমার নাগ দীর্ঘদিন এই দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুর পর মেজো ভাই বিদ্যুৎ কুমার নাগ বর্তমানে হোটেলটির দেখাশোনা করছেন।
কল্পনা বোর্ডিং কেন এক আস্থার নাম
কল্পনা বোর্ডিং এখনও মানুষের সেই আগের ভরসার জায়গাটি ধরে রেখেছে। এত বছরেও 'কল্পনায়' মানুষের আনাগোনা কমেনি। কিন্তু কেন? এর উত্তর দিলেন কল্পনা বোর্ডিংয়ের অভ্যরথনাকারী বা রিসিপশনিস্ট, শ্যামল চন্দ্র সেন।
তার মতে, এখানে প্রথম সুবিধা হলো এটা সদরঘাটের কাছে। দ্বিতীয়ত, এই বোর্ডিংয়ে যারা থাকতে আসেন তাদের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী, আর পুরান ঢাকা হলো সমগ্র বাংলাদেশের পাইকারী দোকানের আখড়া, ফলে ব্যবসায়ীরা এসে এখানেই ওঠেন। তৃতীয়ত, এখানে জানমালের সুবিধা তথা নিরাপত্তাও ভালো, যা অন্য জায়গায় পাওয়া যায় না।
এই কথা যখন হচ্ছে, তখনই উত্তর হোটেলের বিল পরিশোধের জন্য পাশে এসে দাঁড়ালেন এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। নাম জানলাম সুবল আচার্য্য। কথা বলে আরো জানলাম, ব্যবসার কাজে প্রায় ২৫ বছর ধরেই তিনি নিয়মিত আসেন এখানে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ কুমার নাগও যোগ করে বলেন, 'আমাদের এই শাঁখারী বাজার তো খুব নিরাপদ একটি অঞ্চল। রাত দুইটা বাজেও আপনি টাকাপয়সা নিয়ে হাঁটতে পারবেন। কোনো ছিনতাইকারী বা ডাকাত ধরবে না। তাছাড়া সবাই আমাকে চেনে, আমার বাবা-জ্যাঠাদের চেনে, আমাদের বোর্ডিং চেনে। কারও সাহস নেই কিছু করার।'
এসব মাথায় রেখেই হয়তো এখনও অনেকেই আসেন এখানে থাকতে। স্বামীকে নিয়ে গ্রীন রোডের ল্যাবএইডে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন ৬৫ বছরের অনিচ্ছা ঘোষ। পাঁচ দিন ধরে আছেন এখানে। আজ পনেরো বছর ধরে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে আসেন। প্রতিবারই ওঠেন এই হোটেলে। তাঁতিবাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সরাসরি ল্যাবএইডে যাওয়ার বাস থাকায় যাতায়াতেও সমস্যা হয় না।
এখানেই ঐতিহ্যবাহী কাঁসা, শঙ্খ আর সুরের দোকান
আগেই বলেছি, পুরান ঢাকার শাঁখারী বাঁজার মানেই ইতিহাস, ঐতিহ্য আর হস্তশিল্পের কেন্দ্র। ব্রিটিশ আমলের সাক্ষী পোগোজ স্কুলের পাশ দিয়ে গলির ভেতর ঢুকলেই কানে ভেসে আসবে বাদ্যযন্ত্রের টুংটাং সুর। তাকালেই দেখা যাবে 'যতিন এন্ড কোং', 'বুদ্ধ এন্ড কোং'-এর মতো ঢাকার সেরা বাদ্যযন্ত্রের দোকানগুলো এখানেই স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। সংগীতপিপাসুদের জন্য এই দোকান এক দর্শনীয় স্থান। একসময় এই দোকানে নিয়মিত গানের জলসার আয়োজন হতো।
আছে কাঁসার দোকান, শাঁখাপলা, টিপসহ মিষ্টির দোকান। এদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরপর কয়েকটি পূজামণ্ডপ। ভক্তরা দু-হাত এক করে ঠাকুরের কাছে আরজি জানাচ্ছেন। কেউ কেউ হয়তো রাস্তার একধারে বসে একমনে পুজোর ফুল গাঁথছেন।
রাস্তার দুধারে এসব দৃশ্য দেখতে দেখতেই হাতের ডানে পড়বে কল্পনা বোর্ডিং ও হোটেলের সাইনবোর্ড।
বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন বৃন্দাবন নাগ
করোনার আগপর্যন্ত কল্পনা বোর্ডিংয়ে থাকা-খাওয়া দুই ব্যবস্থাই চালু ছিল। ইন্টারনেটের সুবাদে জানতে পারি, এখানকার খাবার খেয়ে নাকি প্রশংসা করেছিলেন কলকাতার তৎকালীন ছাত্রনেতা প্রিয়দাস মুন্সী। চিতল মাছের কোফতা খেতেই নাকি কল্পনা বোর্ডিং ও হোটেলে আগে প্রচুর লোক আসত। এছাড়াও, এই রেস্তোরাঁয় রান্না হতো কই, রুই, কাতলা, বোয়াল মাছের তরকারি, নানা রকম ভর্তা-ভাজি আর নানারকম সবজির সালুন।
করোনা আসার পর হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন তার বদলে একটি কমিউনিটি সেন্টার খোলা হয়েছে।
সুতরাং চিতল মাছের কোফতা খাওয়ার সাধ অপূর্ণই রয়ে গেল। তবে রসনার তৃপ্তি না পেলেও সেখানে গিয়ে মুখোমুখি হলাম যেন এক অজানা ইতিহাসের।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে প্রায়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে আসতেন। কল্পনা বোর্ডিং ছিল বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বাড়ির মতো। এখানেই গোপন বৈঠক, আড্ডা চলতো তার। খুব খাতির ছিল বোর্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা বৃন্দাবন নাগের সঙ্গে। বৃন্দাবন নাগ ছিলেন আইয়ুব খানের আমলের একজন বিডি (বেসিক ডেমোক্রেসি) মেম্বার। সারা পূর্ববাংলায় এর সদস্যসংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬০০। এদের একজন ছিলেন বৃন্দাবন নাগ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয় এই রাজনীতির অঙ্গনেই। পরবর্তীতে তিনি মুসলিম লীগ এবং পরে আওয়ামীলীগও করেছেন। তিনি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগরীর সহ-সভাপতি।
বঙ্গবন্ধুর এলাকা থেকে কেউ ঢাকায় এলে তাকে বলে দিতেন, 'শাঁখারীবাজারের কল্পনায় যাও, ওখানে বৃন্দাবন আছে, কোনো সমস্যা হবে না।'
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু বৃন্দাবন নাগকে পাঠিয়েছিলেন কলকাতায় ক্যাম্প দেখে আসার জন্য। বৃন্দাবন তার পুরো পরিবারকে রেখে কলকাতায় চলে যান ৮ মার্চ। সেরকম একটি পরিবেশে নিজ পরিবার ছেড়ে এভাবে দায়িত্ব পালন করা বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালোবাসা আর বিশ্বাসকেই তুলে ধরে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের স্মৃতি নিয়ে বিদ্যুৎ কুমার নাগ জানান, 'আমি তো বঙ্গবন্ধুর চুল ধরেও টেনেছি। তার পকেটে থাকত লজেন্স। হোটেলে এলেই আশপাশের সব বাচ্চাদের ডেকে পাঠাতেন তিনি। তারপর সবাইকে লজেন্স দিতেন। আদর করতেন আমাদের খুব। বাচ্চারাও খুব পছন্দ করতো তাকে। বাচ্চারা তার খুব প্রিয় ছিল। ৭০-এর ইলেকশানের সময় শেষবার তাকে দেখেছি। এরপর আর শাঁখারীবাজার আসেননি। চলে যাওয়ার সময় হাজার হাজার লোক তাকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিল। আমার ছোট ভাইও মালা পরিয়ে দিয়েছিল তার গলায়। তার মতো লোক আর জন্মবে না।'
শাঁখারী বাজারের কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে 'কল্পনা বোর্ডিং ও হোটেল'
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পাক হানাদার বাহিনী বোর্ডিংটি পুড়িয়ে দেয়। এরপর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এটি পুনরায় চালু হয়। তারপর থেকে এখানে আগের মতোই থাকা-খাওয়া চলছিল। করোনা এসে খাওয়ার সুব্যবস্থাটি বন্ধ করে দেয়। এখন চালু আছে শুধু বোর্ডিং ব্যবস্থা।
আগে যেখানে ছিল সাতটা রুম, সেটা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০-এর উপরে। মানুষের আসা-যাওয়া চলছেই এখানে। কেউ একা আসছেন, কেউ পরিবার সমেত আসছেন, কেউ এসে একমাস-দুমাস থাকছেন। আবাসিকদের কাছে এ যেন এক দ্বিতীয় ঘর।
শুরুতে কল্পনা বোর্ডিং দোতলা ছিল, এখন এটি চারতলা। বর্তমানে পাঁচতলার কাজ চলছে। থাকার ব্যবস্থা খুব সাধারণ হলেও পরিপাটি। সিঙ্গেল রুম ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। ডাবল রুম ৬০০ টাকা।
পাক বাহিনীর রোষানলে পড়তে হয়েছিল বহুবার
এই কল্পনা বোর্ডিংয়ে বসত বঙ্গবন্ধুর গোপন সব বৈঠক। এজন্য পাক বাহিনীর রোষানলেও পড়তে হয়েছিল বহুবার। শুধু কল্পনা বোর্ডিং নয়, বৃন্দাবন আর তার পরিবারকেও এজন্য হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বহুবার।
এমনকি বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পরও ১৯৭৬ সালে বৃন্দাবনকে ধরে নিয়ে যায় মেজর নাসির। সেখানে ১৯ দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। সালফিউরিক এসিডের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে, হাতে সুঁই ফুটিয়ে নানাভাবে নির্মম অত্যাচার করা হয় তাকে। ২০০৩ সালে মারা যান বৃন্দাবন নাগ।
রাজনৈতিক সমাবেশের গোপন আখড়া
কল্পনা বোর্ডিংয়ের দোতলার এক ঘরে সে সময় মুজিব বাহিনী গঠিত হয়। যুদ্ধের সময় এখানে নিয়মিত বিভিন্ন সভা বসত। সে সময় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারাও এখানে থাকতেন। এখান থেকে ভারতের ভিসা দেওয়া হতো তখন। পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষত কংগ্রেসের অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তি এখানে থেকে গেছেন।
এছাড়া, রাজা তৈলক্ষ মহারাজ, বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, কমরেড দীনেন সেন, সুবোধ মিত্র, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, রাজনীতিক রনেশ দাস মৈত্রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির যাতায়াত ছিল এখানে। এখানে এসে মাসের পর মাস থেকেছেন গায়ক মোহাম্মদ আবদুল জব্বার। এখানকার মুড়িঘণ্ট খুব পছন্দ ছিল তার।
হিন্দু এলাকা হলেও ধর্মের কোনো ভেদাভেদ নেই এখানে। সব ধর্মের, সব জাতের মানুষ এসে থাকতে পারে। কক্সবাজার, পঞ্চগড়, ভোলা চরফ্যাশন, ঠাকুরগাঁও, এমন কোনো জায়গা নেই কল্পনা বোর্ডিং চেনে না। তবে শ্যামলচন্দ্র জানান, তুলনামূলকভাবে বরিশাল থেকে বেশি মানুষ আসে। সবধরনের মানুষই এখানে আসেন কম-বেশি। তবে স্বর্ণশিল্পী, জুয়েলারির মালিক আর এর সঙ্গে যুক্ত ব্যাপারীরা এখানকার প্রধান গ্রাহক।
শেখ হাসিনা আমার শ্বশুরকে "দাদা" বলে ডাকতেন
'আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার শ্বশুরকে "দাদা" বলে ডাকতেন। সাইদ খোকন, মেয়র হানিফ, আসাদুজ্জামান নূর, আলী যাকের, এদের সবার পদচারণায় একসময় মুখর ছিল এই বাসা।' বলছিলেন বৃন্দাবন নাগের বড় ছেলে দীপক কুমার নাগের স্ত্রী, শুক্লা নাগ।
বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে অনেক ঘটনা আর স্মৃতির সাক্ষী শুক্লা নিজেই। শ্বশুরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'অনেক বড় মানুষ ছিলেন আমার শ্বশুর। এই এলাকায় তাকে সবাই একনামে চেনে এখনো। একবার তার গায়ে হাত তোলাতে পুরো পাড়া কারফিউ পড়ে যায়। তার মৃত্যুর পরও এই এলাকায় নেমে এসেছিল শোকের মাতম।'
ঐতিহ্যের অহঙ্কার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কল্পনা বোর্ডিং
একসময় যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল নদীভিত্তিক। তখন সদরঘাটের চারপাশেই এরকম বোর্ডিং গড়ে উঠত। সদরঘাট থেকে এসে মানুষ এই বোর্ডিংগুলোতেই উঠত। কালের গর্ভে সবই আজ বন্ধ। অবশিষ্ট আছে শুধু কল্পনা বোর্ডিং ও বিউটি বোর্ডিং।
কল্পনা বোর্ডিং গোড়ায় ছিল কল্পনা অপেরা হাউজ। পোশাকি সিনেমার কস্টিউমের ব্যবসা ছিল তখন। এরপর সেটা বদলে হয়ে গেল কল্পনা বোর্ডিং ও হোটেল। এখন হোটেলের জায়গা নিয়ে নিয়েছে কমিউনিটি সেন্টার।
হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ছ-মাস পর 'কল্পনা কমিউনিটি সেন্টার' চালু হয়। তবে কল্পনা বোর্ডিংকে পূর্বপুরুষের স্মৃতি হিসেবেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চান বিদ্যুৎ কুমার নাগ। পরিচালনার দায়িত্বে তিনি থাকলেও, তবে এটি পারিবারিক ব্যবসা। নিজের দু-ভাই (যদিও তারা মারা গেছেন) এবং চাচাতো ভাইরাও এর মালিক।
শুধু বোর্ডিং নয়, নাগ পরিবারের সঙ্গেও মিশে আছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য। ৬০০ বছর আগে যখন সুবেদার ইসলাম খাঁ ঢাকা নগরী প্রতিষ্ঠা করেন, তখন থেকেই নাগ পরিবারের বাস এখানে। নাগ পরিবারের মূল ব্যবসা হলো শাঁখার ব্যবসা। 'আমার আগে আমার চৌদ্দ পুরুষের বাস এই শাঁখারী বাঁজারে। সবাই আমাদের চেনে, আমার বাবা-জ্যাঠাদের চেনে,' বললেন শাঁখারী বিদ্যুৎ কুমার নাগ।
আজকাল এত বড় বড় তারকাখচিত হোটেলের পাশে কল্পনা বোর্ডিং হয়তো বেশ পুরোনো আর ছোট; তবে ছোট হলেও কল্পনার আছে ঐতিহ্যের অহঙ্কার। তাই এই ঐতিহ্যকেই যতটা সম্ভব ধরে রাখতে বিদ্যুৎ কুমার নাগ এখন নিজেই প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার সরল ঐকান্তিক ইচ্ছে, 'কালের বিবর্তনে কল্পনা বোর্ডিং যেন কখনো হারিয়ে না যায়!'