আখাউড়া দিয়ে ভারতফেরতদের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে
ভারতে মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল সীমান্তপথগুলো বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বাড়ানো হয়েছে বন্ধের মেয়াদ, যা এখনও বলবৎ রয়েছে। তবে এই বন্ধের মাঝেও ভারতে আটকা পড়া বাংলাদেশিরা স্থলপথে দেশে ফিরছেন। এদের মধ্যে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকাবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
গত ২৭ এপ্রিল থেকে গতকাল শুক্রবার (২৮ মে) পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে মোট ১১৪৬ জন যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন, যারা ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসে কাজ করেন।
ভারতীয়দেরকে হোম এবং বাংলাদেশিদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে রাখা হয়েছে। বর্তমানে ১৭ জন ভারতীয় নাগরিক হোম এবং ৫৪১ জন বাংলাদেশি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে রয়েছেন।
তবে ভারতফেরতদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার (২৮ মে) পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ২৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশি। এদের মধ্যে করোনাভাইরাস নেগেটিভ হয়েছেন তিনজন। আক্রান্ত বাকি ২৩ জন এখনও আইসোলেশনে আছেন।
এছাড়া ভারতফেরতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ দিনের কোয়োরেন্টিন শেষে ছাড়া পেয়েছেন হয়েছেন ৫৮৮ জন। আর বাকি ৫৫৮ জন এখনও হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে আছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ওই টিমে একজন মেডিকেল অফিসার ও কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। টিমের সদস্যরা ভারতফেরত যাত্রীদের চেকপোস্টে হেলথ্ স্ক্রিনিং এবং নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন। হেলথ্ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে কোনো যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে কিনা- সেটি পরীক্ষা করা হয়। কাকে কোয়ারেন্টিন সেন্টার অথবা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠাতে হবে, সেটিও নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য বিভাগের ওই টিম।
জেলার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলকে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ভারতফেরত যাত্রীদেরকে ইমিগ্রেশন, পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগীতায় চেকপাস্ট থেকে সরাসরি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়। প্রত্যেককেই বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকতে হয়।
পরবর্তীতে কোয়ারেন্টিনে থাকাবস্থায় করোনা শনাক্ত হলে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। জেলায় সরকারি আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে তিনটি হাসপাতালে। এগুলো হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ভারতফেরত যাত্রীদের মধ্যে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকাবস্থায় গতকাল শুক্রবার শনাক্ত হওয়া তিনজনসহ মোট ২৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন নেগেটিভ হয়েছেন। বাকি ২৩ জন এখনও আইসোলেশনে রয়েছেন।
করোনা ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. ইনজামামুল হক সিয়াম জানান, আইসোলেশনে থাকা করোনা আক্রান্তদের সবার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। কারো তেমন কোনো সমস্য হচ্ছেনা। তবে তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, 'আক্রান্ত ২৬ জনের শরীরে কোন ভ্যারিয়েন্টের করোনাভাইরাস রয়েছে, সেটি নির্ণয় করা যায়নি। এজন্য জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষা করতে হয়, এটি ঢাকায় হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ফলাফল পাওয়া যায়নি'।