আবারও আর্থিক সংকটের মুখে পরিবহন শ্রমিকরা
পাবনা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী সি লাইনে কাজ করেন পরিবহন শ্রমিক রবি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ৫ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করলে হঠাৎ থমকে যায় তার জীবনের স্বাভাবিক গতি।
সাধারণত মাসে ১৩ থেকে ১৫টি সফরে যাত্রা করেন রবি। তবে লকডাউন চালু হওয়ার পর থেকে তিনি কোনো কাজ পাননি। লকডাউন দীর্ঘসময় ধরে চললে পাঁচ সদস্যের পরিবারের খরচ বহন করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে।
২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে দেশে রবির মতো হাজারও পরিবহন শ্রমিকের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলমান অনিশ্চিত পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে সাম্প্রতিক লকডাউন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবি বলেন, 'আমার সর্বশেষ ট্রিপ ছিল এপ্রিলের ২ তারিখ। ৩ এপ্রিল থেকে আমার কোনো উপার্জন নেই। আরেকটি ট্রিপ পেতে হলে আমাকে অন্তত দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে, লকডাউন আরও বৃদ্ধি পেলে ভাগ্যে কী আছে বলা সম্ভব না। কীভাবে পরিবারের খরচ সামলাব, জানি না।'
'মহামারির সময় ট্রিপের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আমার কাজও কমে যায়। গত বছর তাই বড় অংকের ঋণ নিতে হয়েছিল। এবারও গত বছরের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কীভাবে টিকে থাকব, আমি এর কিছুই জানি না,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (বিএসপিএসএফ) তথ্যানুসারে, দেশে পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ লাখ।
ফেডারশনের সহ-সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, হঠাৎ করে লকডাউন চাপিয়ে দেওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। ২৫ লাখ পরিবহন শ্রমিক চাকরি হারিয়ে কঠিন আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন।
'সাম্প্রতিক সংকটের সবচেয়ে বড় ভোগান্তির শিকার পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের সহায়তার জন্য সরকারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। বাস ছাড়া সবই চলছে। সরকার একটি অপ্রত্যাশিত ও ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে,' বলেন তিনি।
সাদিকুর রহমান আরও বলেন, 'আমরা বিএসপিএসএফের বিভাগীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেছি। সবাইকে চাকরিচ্যুত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। গত বছর আমরা কর্মীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছিলাম। এ বছরও আমরা তাদের সহায়তা করব।'
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সূত্রানুসারে, দেশে বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেল, সিএনজিচালিত অটো রিকশা, মাইক্রোবাস এবং মিনি বাসসহ ৪৬ লাখের বেশি রেজিস্ট্রিকৃত পরিবহন রয়েছে।
লকডাউনে শহরের অভ্যন্তরে স্থানীয়ভাবে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাস চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
পাবনার গাড়িচালক রফিকুল ইসলাম সি লাইন পরিবহনে কাজ করেন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, লকডাউনে তিনি গ্রামের বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছেন। লকডাউনের সময় বৃদ্ধি পেলে তিনি বিপাকে পড়বেন।
'আমি জীবিকা অর্জনের তাগিদে গাড়ি চালানো শিখেছি। একটা ট্রিপ মিস করলেও আমার জন্য তা বেশ পীড়াদায়ক। কোভিড-১৯ মহামারি আসার আগে আমি মাসে ২০টি ট্রিপ চালাতাম। কিন্তু এখন মাসে সর্বোচ্চ ১৪টি ট্রিপ পাই। মাস হিসেবে আমার জন্য তা যথেষ্ট নয়,' বলেন তিনি।
দেশব্যাপী লকডাউনে সরকার রাইড শেয়ারিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিভিন্ন রাইড শেয়ার সেবাদানকারী মোটরসাইকেল চালকও আছেন সংকটের মুখে।
রাইড শেয়ার চালক আল আমিন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঋণের টাকায় মোটর সাইকেল কিনেন। তিনি রাইড শেয়ারের আয় থেকে পরিবার চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি বাইকের ইন্সটলমেন্টের টাকা পরিশোধ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। নতুন লকডাউনে আল আমিনের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
'সাম্প্রতিক লকডাউনের ক্ষতি পোষাতে আমাকে বাড়তি সময় কাজ করতে হবে। লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলে আমার স্বপ্ন পূরণের আশা করা কঠিন হয়ে পড়বে,' বলেন তিনি।