আরব আমিরাতে থেকেও চট্টগ্রামে মণ্ডপ ভাঙচুর মামলার আসামি যুবদল নেতা
যুবদল নেতা মো. আজম (৩১)। গত ৩ মে জীবিকার তাগিদে আরব আমিরাতের আবুধাবিতে পাড়ি জমান। কিন্তু দেশ থেকে তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থান করলেও আজমকে চট্টগ্রামে একটি পূজামণ্ডপের তোরণ ভাঙচুরের মামলার আসামি করেছে পুলিশ!
মো. আজমের বাড়ি হাটহাজারী পৌড়সভার পশ্চিম দেওয়ান বুলবুলি পাড়ায়। তিনি হাটহাজারী পৌর যুবদলের সদস্য। পুলিশের দায়ের করা মামলায় তাকে ৩১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. আজম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সন্তানদের সুন্দর জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে আমি ৬ মাস ধরে আরব আমিরাতের আবুধাবিতে কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত। অথচ ১৩ মে দেশের কোনো এক মন্দিরে হামলার মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।'
এছাড়া হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার মামলায় ছয় মাস ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকর্মীকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তারা হলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সৈয়দ ইকবাল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য আকরাম উদ্দিন ওরফে পাভেল এবং বিএনপিকর্মী জোনায়েদ মেহেদী। এই তিনজনেরই বাড়ি হাটহাজারীতে।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় ৬১ আসামির মধ্যে ১৫ নম্বরে রয়েছে জোনায়েদ মেহেদীর নাম। ৫৩ নম্বরে সৈয়দ ইকবাল ও ৫৫ নম্বরে আকরাম উদ্দিন।
কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগের জেরে ১৩ অক্টোবর হাটহাজারী উপজেলার সরকারহাট বাজারসংলগ্ন সোমপাড়া সর্বজনীন পূজামণ্ডপের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা ও মণ্ডপের গেট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরদিন এই ঘটনায় হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবিদুর রহমান বাদী হয়ে ৬১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
অন্যদিকে, একই মামলায় মিরসরাই উপজেলা থেকে বিএনপি ও যুবদলের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শাহিনুল ইসলাম এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে টিবিএসকে বলেন, 'হাটহাজারীর ঘটনায় মিরসরাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহেদ হোসাইন, সেচ্ছাসেবক দল নেতা ফিরোজ ভূঁইয়াসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ফিরোজ ভূঁইয়া একজন ব্যবসায়ী। ঘটনার সময় তিনি মিরসরাইয়ে নিজের দোকানেই ছিলেন। ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজও আছে। গ্রেপ্তারকৃতরা কেউই মামলার এজহার ভুক্ত আসামি নন।'
এদিকে সাতকানিয়ার ঘটনায় সোমবার রাতে বোয়ালখালী উপজেলা থেকে বিএনপি ও জামায়াতের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতরা মামলার আসামি।' তবে সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বোয়ালখালী থেকে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলায় তাদের নাম নেই।'
এ বিষয়ে কথা বলতে মামলার বাদি হাটহাজারী থানার এসআই আবিদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি। তবে হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, 'মো. আজম বিদেশে ও আকরাম উদ্দিন ওরফে পাভেল জেলে থাকলেও সেখান থেকেই হামলায় ইন্ধন দিয়েছেন।'
তবে চট্টগ্রাম কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'কারাগারে বন্দীরা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে থাকেন। বর্তমানে স্বজনদের সঙ্গেও তাদের সাক্ষাৎ বন্ধ আছে। তাই জেল থেকে কোনো আসামির হুকুম দেওয়ার সুযোগ নেই।'
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, '২৬ মার্চ হাটহাজারীতে হেফাজতের বিক্ষোভ-সহিংসতার মামলাতেও বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছিল। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা তিনজনকে আবারও মণ্ডপ ভাঙচুর মামলার আসামি করা হয়েছে! কিছু একটা হলেই বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করা পুলিশের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।'
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, 'এটি খুব লজ্জাজনক। আগে গায়েবি মামলায় আসামি করা হতো, এখন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আমাদের পদধারী নেতাদের আসামি করা হচ্ছে। সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।'