এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: এখনো অধরা ৪ আসামি
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের মামলায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও সকালে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে আরেক আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এখনো এই মামলার এজাহারভুক্ত ৪ আসামি পলাতক রয়েছে।
এদিকে, রোববার ধর্ষিতার জবনবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। দুপুরে ধর্ষিতা তরুণীকে সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতে হাজির করা হলে শারমিন খানম নিলা তার জবনবন্দি গ্রহণ করেন। আদালতে সেই রাতের ঘটনার বিবরণ দেন ওই তরুণী।
গত শুক্রবার রাতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের বিচার দাবিতে যথারীতি রোববারও আন্দোলনমুখর ছিল। বিচার দাবিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে বেশ কয়েকটি সংগঠন। ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাদের নাম উঠে এলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও দোষিদের বিচার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
দুই আসামি গ্রেপ্তার
রোববার ভোরে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ছাতক থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে ছদ্মবেশ ধরলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
রোববার সকালেই এই মামলার চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তার ও সাইফুর ও অর্জুন এমসি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী।
পুলিশ জানায়, মাধবপুর উপজেলার মনতলা সীমান্ত এলাকা থেকে অর্জুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান মাধবপুর থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম দস্তগির।
ধর্ষণের ঘটনার পরদিন শনিবার নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে নগরীর শাহপরাণ থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। নাম উল্লেখ আসামিদের ছয়জনই ছাত্রলীগের কর্মী। তারা হলেন সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান।
সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, 'ঘটনার পর থেকেই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম সিলেটজুড়ে কাজ করছে। সীমান্ত এলাকায়ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
আদালতে নির্যাতিতা তরুণী
রোববার বেলা ১টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি সেন্টার থেকে নির্যাতিতা তরুণীকে সিলেটের আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে ওই রাতের ঘটনার ব্যাপারে জবানববন্দি দেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুপুরে পুলিশ আক্রান্ত তরুণীকে ওসমানী হাসপাতাল থেকে আদালতে নিয়ে আসে। দেড়টার দিকে তিনি আদালতে ওই রাতের ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালতে তার জবানববন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
নগরজুড়ে বিক্ষোভ
ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবারের মতো রোববারও সিলেট নগড়জুড়ে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এসব বিক্ষোভ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার, তাদের প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করা, এমসি কলেজের দুর্বল প্রশাসের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
প্রতিবাদসভা হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনেও। এতে মেয়র ও কাউন্সিলররা অংশ নেন। ওই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে নাগরিক প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হবে।
সভা শেষে নগর ভবন থেকে সিলেট মহানগর পুলিশ কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কাউন্সিলরবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেলে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার এক দম্পতি। ছাত্রলীগের ৫-৬ জন নেতাকর্মী তাদের ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে আসেন। সেখানে দুজনকেই মারধর করেন তারা। পরে স্বামীকে বেঁধে রেখে তার সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষণের শিকার তরুণী বর্তমানে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন।