ওসি প্রদীপসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে এবার মহেশখালী আদালতে হত্যার অভিযোগ
কক্সবাজারের মহেশখালীর বহুল আলোচিত আবদুস সাত্তার হত্যার ঘটনায় টেকনাফ থানার (সাময়িক) বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার সময় ২০১৭ সালে প্রদীপ কুমার দাশ মহেশখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। মামলাটি নিতে সেসময় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল। পরে তা স্থগিত করতে পুলিশের পক্ষে করা আবেদন খারিজ হলেও, নিজের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত করেননি ওসি প্রদীপ।
সেই পুরোনো অভিযোগটি আমলে নিতে আজ বুধবার (১২ আগস্ট) দুপুরে মহেশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্বাস উদ্দিনের আদালতে লিখিত অভিযোগটি করেছেন কথিত ক্রসফায়ারে নিহত ভিকটিম আবদুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার (৪০)। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বাদির বক্তব্য শুনলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত (রিপোর্ট লেখাকালীন সময়) কোনো আদেশ দেননি বলে জানিয়েছেন, বাদি পক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম।
আদালতে করা অভিযোগে সাবেক ওসি প্রদীপ ছাড়াও পুলিশের পাঁচ সদস্য এসআই হারুনুর রশীদ, এসআই ইমাম হোসেন, এএসআই মনিরুল ইসলাম, এএসআই শাহেদুল ইসলাম ও এএসআই আজিম উদ্দিনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে ২৯ জনের মধ্যে প্রধান আসামি করা হয়েছে মহেশখালীর ফেরদৌস বাহিনীর প্রধান ফেরদৌসকে (৫৬)। তিনি মহেশখালীর হোয়ানকের মৃত নুরুল কবিরের ছেলে।
নিহত ভিকটিম আবদুস সাত্তার হোয়ানক পূর্ব মাঝেরপাড়ার মৃত নুরুচ্ছফার ছেলে।
অভিযোগকারী হামিদা আক্তার মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে ফেরদৌস বাহিনীর সহায়তায় হোয়ানকের লম্বাশিয়া এলাকায় তার স্বামী আবদুস সাত্তারকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন তিনি। রিট পিটিশন নং-৭৭৯৩/১৭ মূলে 'ট্রিট ফর এফআইআর' হিসেবে গণ্য করতে আদেশ দেন বিচারক।
আদালত সূত্র জানায়, হামিদা বেগমের করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ৭ জুন আদেশ দেন। এতে বলা হয়, হামিদা বেগম এজাহার দাখিল করলে মহেশখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তা তাৎক্ষণিক গ্রহণ করতে হবে। এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র সচিবের (জননিরাপত্তা বিভাগ) পক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ১৩ মে আপিল বিভাগ আদেশ দেন। এতে রুল ইস্যু না করে এজাহার গ্রহণ করতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে ওই রিটটি মামলা হিসেবে নতুন করে শুনানি করতে বলা হয়।
এদিকে ওই সময় হাইকোর্টে রিট পিটিশনকারী অ্যাডভোকেট রাশেদুল হক খোকন জানান, উচ্চ আদালত থানায় মামলাটি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু পরে আইজিপির পক্ষ থেকে আদেশ স্থগিতের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা স্থগিত করেন উচ্চ আদালত।
বুধবার করা অভিযোগের বিষয়ে বাদি পক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা হত্যার অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে আদালতে আবেদন জানিয়েছি। আদালত আমাদের ভাষ্য শুনেছেন। সেই সময়ের (২০১৭ সালের) নথি পর্যালোচনা করছেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা গ্রহণ বা বাতিল কোন বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত আদেশ দেননি। আমাদের বিশ্বাস ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমাদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নিতে আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) নির্দেশনা দিবেন বিজ্ঞ বিচারক।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশির নামে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক আইনে এবং রামু থানায় মাদক আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় নিহত মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রানী দেব নাথকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এরপর গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইন্সপেক্টর লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৬ আগস্ট বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৭ আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
মামলার তদন্তে নিয়োজিত সংস্থা র্যাবের পক্ষে করা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনে বরখাস্তকৃত ইন্সপেক্টর লিয়াকত, ওসি প্রদীপ এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এরপর থেকে টেকনাফ ও মহেশখালীতে তার (ওসি প্রদীপের) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ মামলা করতে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এদের মাঝে সে সময় ক্রসফায়ারে নিহত সত্তারের স্ত্রী হামিদা প্রথম অভিযোগকারী। এ মামলা গ্রহণ ও বাতিলের উপর নির্ভর করছে অন্যরা মামলা করবেন কিনা, এমনটি দাবি সচেতন মহলের।