কক্সবাজারে ৬০০ পরিবার জায়গা পাচ্ছে ‘শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ’ প্রকল্পে
কক্সবাজারে চলমান অর্ধশতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর মাঝে অন্যতম 'শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে'র প্রথম পর্যায়ে ১৯টি পাঁচ তলা ভবনের কাজ শেষ হয়েছে।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষা এলাকায় তৈরি হওয়া এ প্রকল্পের ফ্ল্যাট হস্তান্তর আগামী ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন শেষে উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে ফ্ল্যাটের চাবি।
সেই লক্ষ্য মাথায় নিয়েই এরই মধ্যে উদ্বোধনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাঝে ১৯টি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এসব ভবনের ফ্ল্যাটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের হস্তান্তর করতে গত মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে লটারির ড্র সম্পন্ন করা হয়েছে। লটারির ভিত্তিতে ৬০০ পরিবারের মাঝে ফ্ল্যাটগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিশ্বমানের পর্যটন শিল্প বিকাশ ও ভৌগোলিক গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হচ্ছে। বিমানবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, নাজিরাটেক ও সমিতি পাড়া এলাকায় বিপুল পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার।
অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জমিতে চার হাজার ৪০৯টি পরিবার বাস করত, তারা ভূমিহীন হয়ে পড়ে।
সাড়ে চার হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার ক্ষতিগ্রস্তকে পুনর্বাসন করতে সরকার 'শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প' হাতে নেয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষা এলাকায় প্রায় ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
এ প্রকল্পে ১৩৭টি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে 'শেখ হাসিনা টাওয়ার' নামে একটি ১০ তলা সুউচ্চ ভবনও থাকবে।
আরও জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ২০১৭ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯টি ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ভবনগুলোর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ সময় উপকারভোগীদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার বলেন, ইতোমধ্যে উপকারভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া তালিকা অনুসারে জেলা প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা করেছে। বিমান বন্দরের পাশে থাকা পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তর করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারি পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল, স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক, বিনোদনের জন্য পার্ক থাকবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় আশ্রয় পাওয়া মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের জন্য স্থাপত্যশৈলী ও আধুনিক নগরায়ন পরিকল্পনায় নির্মিত হবে একটি শুটকি পল্লী।
খুরুশকূল আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে মূল শহরের সঙ্গে সংযোগের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ কররে।
উপকারভোগীরা জানান, ভূমিহারা মানুষগুলো স্থায়ী ঠিকানা পেলেও কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে তারা। এসব মানুষের স্থায়ী বসবাসের পাশাপাশি আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির দাবি জানান তারা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে সব ব্যবস্থা যখন চালু হবে, তখন তাদের কর্মসংস্থানের অভাব হবে না। এ বিষয় নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা যেন আধুনিক সুযোগ সুবিধা পান, সেদিকে নজর দেওয়া হবে।