করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার সবচেয়ে কম ঢাকায়, সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে
বর্তমানে দেশে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম সংক্রমণ ঢাকা বিভাগে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে পরায় জুন মাস মে মাসের মতো স্বস্তির হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংক্রমণ মোকাবিলায় চলমান চলডাউন ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানায় লকডাউন চলছে, তারপরও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর হাসপাতালগুলো কোভিড রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিলো চাঁপাইনবাগঞ্জের মহারাজপুরের শিউলি বেগমের (২৭)। হঠাৎ অবস্থার অবনতি হলে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাকে শনিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার। হাসপাতালে বেড খালি না থাকায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর শিউলি বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারে তার পরিবার। আইসিইউয়ের প্রয়োজন হলেও তাকে করোনার ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
শয্যা সংকটের কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন করোনা আক্রান্ত সব রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে না। যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, অবস্থা খারাপ, তাদেরকেই হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। অল্প সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাদের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক, শুধুমাত্র তাদেরকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আবার অনেকের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে আমাদের পক্ষে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে। রোগীদের চাপ সামলাতে ইতোমধ্যে করোনা ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত বেড বসিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রোগীদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলেও সিলিন্ডার অক্সিজেন ও অক্সিজেন কনসুলেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"
করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য দুই শিফটে ৭০ জন চিকিৎসক ও ১৯০ জন নার্স রয়েছেন। এক শিফটে ১৪ দিন ডিউটির পর আবার ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে যেতে হয় তাদের। এজন্য চিকিৎসক ও নার্স বেশি প্রয়োজন বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
"হাসপাতালে বিদ্যুতের একটি ভয়াবহ সংকট দেখা যাচ্ছে। গরমে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এ সময় জেনারেটর চালিয়ে আইসিইউসহ করোনা রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। হাইফ্লোন্যাজাল ক্যানোলা লাগানো রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হচ্ছে। মহামারিকালে হাসপাতালে বিদ্যুৎ যাতে না যায়, সে বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না,' বলেন ডা. শামীম ইয়াজদানি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রোববার ঢাকা বিভাগে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার ছিলে ৬.০৫ শতাংশ, এর মধ্যে ঢাকা শহরে শনাক্তের হার ৫.৭২ শতাংশ।
বিভাগগুলোর মধ্যে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে। সেখানে রোববার শনাক্তের হার ছিলো ২৫.১৮ শতাংশ। বিভাগটিতে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি রাজশাহী শহর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলায়, শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের বেশি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার খুলনা বিভাগে, ২১.৬৬ শতাংশ। খুলনা বিভাগের যশোর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গায় এ হার ৩০ শতাংশের বেশি।
সংক্রমণ বেশি হলেও রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে এখন পর্যন্ত দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন মাত্র ৪ লাখ মানুষ। আর শুধু প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন খুলনায় ৭ লাখ ৩১ হাজার ও রাজশাহীতে ৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন রোববার (৬ জুন) এক ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, একটি মেডিকেল টিম ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছে ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
"চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সব সীমান্তবর্তী এলাকায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের রোগী সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে," বলেন তিনি।
প্রয়োজনে সম্পূর্ণ হাসপাতাল করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে করে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাসপাতালগুলোকে রোগীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পদক্ষেপ নিতে হবে, বলেন তিনি।
"হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলার আগে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সাপ্লাই নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এটি জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী। যারা মুমূর্ষু অবস্থায় চলে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই লো ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন,"
"জুন মাস শুরু হয়েছে মাত্র ছয় দিন, এর মধ্যেই আমরা আট হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত মানুষকে শনাক্ত করেছি। এই মাসটি গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে বলে মনে হচ্ছে না," বলেন রোবেদ আমিন।
"গত এক সপ্তাহে আমাদের করোনা শনাক্তের হার বেড়ে গেছে। সংক্রমণের দিক থেকে আমরা সাত থেকে আট শতাংশ নিচে নেমে এসেছিলাম। সেটি ক্রমাগত বাড়ছে। গত এক মাসের চিত্র লক্ষ করলে দেখা যাবে, আমরা ওই পর্যায়ে নেই যেখানে বলতে পারি পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। সংক্রমণের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে গেছে।"
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১২ হাজার ৮৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ১ হাজার ৬৭৬ জনের দেহে। তবে বর্তমানে কোভিড পরীক্ষার সংখ্যাও কিছুটা কম। মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ লাখ ১০ হাজার ৯৯০ জনে।