করোনা রোগীদের ঢাকা প্রবেশ থামান: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার জন্য যেন ঢাকায় না আসেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সকল বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), জেলা প্রশাসক, জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের হাসপাতাল উইংয়ের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে রাজধানীর বাইরের কোভিড আক্রান্ত রোগীরা যাতে ঢাকামুখী না হন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর কথা বলা হয়েছে।
ঢাকার কোভিড হাসপাতালগুলোতে জেনারেল বেড ও আইসিইউ সংকট দেখা দেওয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের হাসপাতাল উইংয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, 'ঢাকায় করোনা রোগীর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ঢাকার ২২টি কোভিড হাসপাতালে এখানকার রোগীদের চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত কোভিড আক্রান্ত রোগী ঢাকায় এসে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না। অনেকে আইসিইউ পাওয়ার ঢাকায় এলেও শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যুবরণ করছেন। এ প্রেক্ষিতেই ঢাকার বাইরের রোগীদের ঢাকায় না এসে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে।'
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার জন্য কোভিড সংক্রমণিত রোগী যাতে উপজেলা, জেলা এবং বিভাগ হতে ঢাকা মহানগরের হাসপাতালে গমন না করে, সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।
কোভিড আক্রান্ত রোগীকে স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশাও দেওয়া হয়েছে এতে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোভিড রোগীদের ঢাকায় না আসার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে বেড ফাঁকা না থাকলেও আশপাশের জেলাগুলোর হাসপাতালে বেড ফাঁকা রয়েছে। তিনি ঢাকার বাইরের রোগীদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আহ্বান জানান।
মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর নজরুল ইসলাম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, ঢাকার হাসপাতালগুলো যেহেতু বাড়তি রোগীর চাপ নিতে পারছে না, তাই জেলা-উপজেলা পর্যায় থেকে ঢাকায় রোগীদের আসা নিরুৎসাহিত করা যৌক্তিক। তবে জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, তা এখনও কার্যকর হয়নি।
'জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করে হাই ফ্লো নোজাল ক্যানুলা সরবরাহ করা প্রয়োজন। এতে আইসিইউ বেড বা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হবে না,' যোগ করেন তিনি।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য সাধারণ বেড রয়েছে ১০,৩৬৪টি। এর মধ্যে ঢাকায় ৪০২৩টি বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৩৫৬২জন, চট্টগ্রামে ৬২৮ বেডের বিপরীতে রোগী আছেন ৩৫৭টিতে। আর এই দুই মহানগরীর বাইরে সারাদেশে সাধারণ বেডের সংখ্যা ৫৭১৩টি, রোগী ভর্তি আছেন ১৫৬৫জন।
অন্যদিকে, সারাদেশে ৬৭২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে রোববার পর্যন্ত রোগী রয়েছে ৫৩০টিতে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৭৭ আইসিইউ বেডের বিপরীতে রোগী আছেন ৩৭০টিতে, চট্টগ্রামে ৫১টির মধ্যে রোগী আছেন ২৬টিতে এবং এর বাইরে ২৪৪টি আইসিইউ এর মধ্যে রোগী রয়েছে ১৩৪টিতে।
এদিকে, রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৪৮৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে ৩ লাখ টাকা করে মোট ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই টাকা উপজেলা পর্যায়ে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ব্যবস্থাপনায় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি, করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পথ্য, ওষুধ, গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা, কেমিকেল রি-এজেন্ট, এক্সিজেন ও অন্যান্য গ্যাস সরবরাহ ও ক্রয়সহ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হবে।