কাঁচা ধানই বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা মণ
অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ-বালাই কম হওয়ায় এবার বোরো ধানের উৎপাদন হবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি। আর ধানের মান ভালো হওয়ায় চাষিরা দামও পাবেন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ আশা প্রকাশ করে বলেন, কাটা-মাড়াই এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি। তারপরও অনেক এলাকাতে ধানের ফলন পাওয়া গেছে বিঘায় ২৫ মণ পর্যন্ত। আর কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু ও ধনুট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক অভিন্ন স্বরে জানান, চলতি বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল বিঘায় গড়ে ২১ মণ। কিন্তু যেসব এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে, সেসব এলাকায় জাতভেদে বিঘায় পাওয়া গেছে ২৩ থেকে ২৫ মণ।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু জানান, ওই উপজেলার রনবাঘা এলাকায় কাটার পর বিঘাপ্রতি পাওয়া গেছে ২৫ মণ পর্যন্ত ধান।
উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ৩০ বিঘা জমিতে এবার বোরো ধানের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, 'ধানের জাত ও ভূমির গঠনভেদে প্রতি বিঘায় ধান পেয়েছি ২২ থেকে ২৫ মণ।'
তিনি আরও জানান, গত বছর এ সময় যে ধান মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৬২০ টাকায়, সেই ধান এবার ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, 'গত আমন মৌসুমে শুকনো ধানও আমি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারিনি। তবে এবার বোরো ধান, তাও আবার ভেজা অবস্থায় বিক্রি করছি ৮৫০ টাকা মণ।'
শেরপুর উপজেলার পাইকারী ক্রেতা আবদুল হালিম জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘাসহ বিভিন্ন হাট থেকে তিনি পাবনার দাশুরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধান পাঠান। এবার উৎপাদিত ধানের মান ভালো।
তিনি বলেন, 'গত মৌসুমে আমি শুকনো ধান সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকা দরে কিনেছি। আর চলতি মৌসুমের শুরুতেই ভেজা বোরো ধান কিনছি ৯০০ টাকা দরে। এখন কাঁচা ধানের বাজারদর গড়ে ৮৫০ টাকা। শুকনো হিসেব করলে দাম পড়বে ১ হাজার টাকা মণ।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর দেশের ৬৪ জেলায় বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে তিন কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার বিঘা জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা তিন কোটি ছয় লাখ টন হলেও বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে অতিরিক্ত আরও দেড় কোটি মণ ধান পাওয়া যাবে।
আদনান বাবু জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলায় এক লাখ ৫২ হাজার ১৬২ বিঘা জমিতে ধানের যে ফলন হয়েছে, তাতে বিঘাপ্রতি গড়ে অন্তত এক মণ করে ধান বেশি পাওয়া যাবে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার কিয়াসপাড়া গ্রামের চাষি ইদ্রিস আলী জানান, সিংড়াবিল এলাকায় ধান কাটা মাত্র শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় গড়ে ২২ মণ করে ধান পাওয়া যাচ্ছে। তিনিও মনে করেন, বড় ধরনের বিপর্যয় না হলে নাটোরে গড়ে ধানের ফলন হবে বিঘায় অন্তত ২২ মণ।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাসেম আজাদ জানান, ধানের যে ফলন পাওয়া গেছে, তাতে আশা করা যায় বিঘায় গড়ে ফলন হবে ২৫ মণ করে; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।