কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো বিশ্বের সপ্তম অনিরাপদ শহর ঢাকা
২০২১ সালের নিরাপদ শহর সূচকের ৬০ টি দেশের মধ্যে দুই ধাপ এগিয়ে ৫৪ তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।
ডিজিটাল, অবকাঠামো, ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত নিরাপত্তার দুর্বল অবস্থা ঢাকা শহরকে বিশ্বের ৭ম অনিরাপদ শহরে পরিণত করেছে।
২০২১ সালের নিরাপদ শহর সূচকের ৬০ টি দেশের মধ্যে দুই ধাপ এগিয়ে ৫৪ তম অবস্থানে রয়েছে দেশের রাজধানী।
সোমবার ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক প্রকাশিত দ্বি-বার্ষিক এ প্রতিবেদনে ঢাকা শহরকে ইয়াঙ্গুন, করাচি, কারাকাস, কায়রো, লাগোস এবং ক্যাসাব্লাঙ্কার সামনে এগিয়ে এনে ৫৪ নম্বরে রাখা হয়েছে।
এর আগে, ২০১৯ সালের সূচকে রাজধানীর অবস্থান ছিল ৫৬ তম, এবং ২০১৭ তে ছিল ৫৮ তম।
বাংলাদেশের ইন্সটিটউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বলেছেন, ইতোমধ্যেই অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে ঢাকার দরিদ্র জীবনযাত্রার অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, "এ সূচকে ঢাকার অবস্থান আদতে শহরটির বাস্তব পরিস্থিতি প্রতিফলিত করছে। শহরের নিরাপত্তা সূচকের প্রতিটি প্যারামিটারে রয়েছে সুশাসন ও নীতি বাস্তবায়নের অভাব।"
এ বছরের সূচকে ১০০ এর মধ্যে ঢাকার সামগ্রিক স্কোর ছিল ৪৮.৯, যেখানে শহরটির আগের স্কোর ছিলো ৪৪.৬।
এদিকে, ৮২.৪ পয়েন্ট নিয়ে কোপেনহেগেন বর্তমানে সবচেয়ে নিরাপদ শহর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়াও, ৮২.২ পয়েন্ট নিয়ে শহরটি থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে টরন্টো।
তবে, এ তালিকার শীর্ষ দশে আধিপত্য করছে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় শহরগুলো। প্রথম দশটি দেশের মধ্যে এ অঞ্চল থেকে রয়েছে- সিঙ্গাপুর (তৃতীয়), সিডনি (চতুর্থ), টোকিও (পঞ্চম), ওয়েলিংটন (সপ্তম), হংকং এবং মেলবোর্ন (যৌথভাবে অষ্টম)।
এনইসি কর্পোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত এ প্রতিবেদনটি পাঁচটি স্তম্ভের অধীনে ৭৬ টি সূচকের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। স্তম্ভগুলো হল- ডিজিটাল, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত নিরাপত্তা।
পাঁচটি স্তম্ভে ঢাকার পারফরম্যান্স
দুঃখজনকভাবে, পরিবেশ সুরক্ষা বাদে সূচকের সকল স্তম্ভের মধ্যে সবচেয়ে অনিরাপদ ১০ টি শহরের মাঝে স্থান পেয়েছে ঢাকা।
এছাড়াও, ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ৩৯ স্কোর নিয়ে অনিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে ৫ম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী। এক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ শহর হিসেবে তালিকায় সর্বপ্রথমে উঠে এসেছে সিডনি, এবং তারপরেই রয়েছে সিঙ্গাপুর ও কোপেনহেগেন।
গোপনীয়তা লঙ্খন, পরিচয় চুরি এবং অনলাইন আক্রমণের ভয় ছাড়াই শহুরে নাগরিকদের ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম অবাধে ব্যবহারের ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয় এ স্তম্ভে।
এদিকে অবকাঠামোগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ৪৯.৬ স্কোর নিয়ে ৬ষ্ঠ অনিরাপদ শহর হিসেবে চিহ্নিত হয় ঢাকা, যেখানে সবচেয়ে নিরাপদ শহর হংকং। শহরে অবকাঠামোর প্রাপ্যতা্, গুণমান ও পর্যাপ্ততা পরিমাপ এবং মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেলায় এর দুর্বলতার পরিমাপ করা হয় এক্ষেত্রে।
আবার, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বেলায়- নাগরিকেরা কি পরিমাণে অপরাধ, সহিংসতা, সন্ত্রাসী হুমকি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে তা বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে ঢাকা ৭ম অনিরাপদ শহর এবং কোপেনহেগেন সবচাইতে নিরাপদ।
স্বাস্থ্যসেবার মান এবং অবকাঠামোগত দিক বিবেচনা করা হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে। ঢাকা এ স্তম্ভে ৯ম অনিরাপদ শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে।
এদিকে পরিবেশগত নিরাপত্তায় ঢাকা অপেক্ষাকৃত ভালো ফল দেখিয়েছে। শহরটি কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য নগর পরিকল্পনায় স্থায়ীত্বের প্যারামিটার অন্তর্ভুক্ত করেছে- সেসকল বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে এক্ষেত্রে। প্রতিবেশী নয়াদিল্লি এবং করাচির চেয়ে এগিয়ে যেয়ে এই সূচকটিতে ১৪ তম অনিরাপদ শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে ঢাকা।