কোভিড-১৯: সংক্রমণের নতুন ধরনে ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণে মিলছে না আশানুরূপ ফল
দেশে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভে পরিবর্তন এসেছে সংক্রমণের ধরনে। এখন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরপরই রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে গড়ে ওঠা 'ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে এখন ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) প্রধান ডা. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'করোনার নতুন ওয়েভে সতর্কতামূলক পরিবর্তনটা হলো আগে রোগী আক্রান্ত হওয়ার ৮-১২ দিনের মধ্যে অবস্থা খারাপ হতো। কিন্তু এখন আইসিইউতে অনেক খারাপ হয়ে রোগীরা আসছে। আমাদের যে স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন আছে তা অনুসরণ করে আমরা এখন ফল কম পাচ্ছি। একই ট্রিটমেন্ট কিন্তু আমরা শুরু থেকে দিয়ে আসছি। তখন ফল ভালো ছিল'।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডা. নাজনীন রহমান বলেন, 'এক বছর ধরে আমাদের যে ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন গড়ে উঠেছে সেই গাইডলাইন অনুসারে চিকিৎসা দিয়ে এখন আমরা ভালো ফল পাচ্ছি না। বিষয়টা ভয়াবহ। আগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যালুনা দিয়েই অনেক রোগী ভালো হয়ে যেত, এখন তা হচ্ছে না'।
ডা. নাজনীন রহমান বলেন, 'এবারের ওয়েভের আরেকটি পরিবর্তন হলো এখন অনেক তরুণ রোগী আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছে। ৩০ বছরের কম বয়সী রোগীও আমরা আইসিইউতে পেয়েছে। এখন ৩০-৪০ বছর বয়সী অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে'।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আগস্ট পর্যন্ত সংক্রমণ বেশি ছিল। এরপর সংক্রমণ কমতে শুরু করে। এ বছরের মার্চ থেকে সংক্রমণ বাড়ছে। দেশে এখন সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডা. অনিরূদ্ধ টিবিএসকে বলেন, 'আগে রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও তা একটা জায়গায় গিয়ে স্থির থাকতো কিন্তু এখন সেটি হচ্ছে না। আমরা এমনও রোগী পাচ্ছি যাদের আরটি পিসিআর রিপোর্ট কোভিড নেগেটিভ কিন্ত সিটি স্ক্যান বা এক্সরে করে দেখা যাচ্ছে ফুসফুস বাজেভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এখন অনেক রোগীর হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে, আগে যেটি হতো না। গাইডলাইনের বাইরে গিয়েও আমাদের রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হচ্ছে'।
গতকাল রবিবার ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯০৮ জনের দেহে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৪ এ।
এছাড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও সপ্তাহজুড়ে ওঠানামা করছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ১ বছরে কোভিডজনিত কারণে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৯০৪।
গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর আগের দিন শনিবার সংক্রমণের হার ছিল ১৪ দশমিক ৯০।
ডা. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, 'এখন পর্যন্ত কোভিডের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমাদের গাইডলাইন অনুসারে চিকিৎসা করা হচ্ছে। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার বিকল্প নেই্। কিন্তু এখন যারা আইসিইউতে ভুগছে তারা বা তাদের পরিবার ছাড়া কেউ করোনার ভয়াবহতা বুঝছে না। সংক্রমণ প্রতিরোধে জোর না দিলে সেকেন্ড ওয়েভে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে'।
ঢাকার সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র ৩টি
সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানী ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড ১০টি সরকারি হাসপাতালের ১০৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র তিনটি। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খালি আছে ৪৩টি আইসিইউ বেড।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৯টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৩৩২৯টি জেনারেল বেডের মধ্যে বর্তমানে খালি আছে ৭৮৭টি বেড। এর মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বেডের তুলনায় ১৫০ জন বেশি রোগী ভর্তি আছে।
বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও আইসিইউতে বেড পাচ্ছেন না রোগীরা।
ডা. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, 'আইসিইউ এর জন্য অপেক্ষমান রোগীর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আমরা অনেক বেশি আবেদন পাচ্ছি কিন্তু সিট দিতে পারছি না'।
কুর্মিটোলা হাসপাতালে এখন আইসিইউতে একটি বেডের জন্য এখন ৩০ থেকে ৪০ টি কল আসছে, আগে এটি ১৫টির মত থাকতো বলে জানান ডা. নাজনীন রহমান।