খুলনা মহানগরীর তিন থানায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরাধে আপাতত খুলনায় লকডাউন দেওয়া হচ্ছে না। তবে, আগামী শুক্রবার (৪ জুন) থেকে মহানগরীর তিনটি থানা এলাকায় এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
থানাগুলো হচ্ছে-খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা ও খালিশপুর।
উল্লিখিত সময়ের জন্য এসব এলাকায় সকল দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে। জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সভাপতি ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। পরে জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্তটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারির কথা বলেন।
সভায় জানানো হয়, যেভাবে জাতীয় পত্রপত্রিকায় খুলনাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- তার সঙ্গে বাস্তব তথ্যের মিল নেই। ফলে খুলনায় লকডাউন দেওয়ার মতো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু, সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনসমাগমের স্থানসমূহ বিবেচনায় নিয়ে খুলনা মহানগরীর সদর, সোনাডাঙ্গা এবং খালিশপুর থানা এলাকায় জরুরি সেবা ব্যতীত সকল দোকান, কাঁচাবাজার এবং জনসমাবেশের স্থান ৪ জুন থেকে আগামী এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে।
একইসঙ্গে, রূপসা উপজেলাসহ খুলনা মহানগরীতে সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ রাখা, হোটেলগুলোতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং যত্রতত্র একাধিক লোকের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেবে।
এসময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায়, স্বাস্থ্যবিধি পালনে মনিটরিং জোরদার করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে প্রচার-প্রচারণা চলমান থাকবে।
সভায় জেলা প্রশাসন, জেলা ও মহানগর পুলিশ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি এবং সাংবাদিকসহ সকলকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একমত পোষণ করা হয়।
সভায় সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে খুলনার স্বাস্থ্যবিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সন্ধ্যার পর একাধিক লোকের জনসমাগম বন্ধ করতে হবে। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সর্বক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করার নির্দেশনা দেন। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মসজিদের ইমামদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখারও আহবান জানান।
সভায় জেলা সিভিল সার্জন দপ্তরের পক্ষ থেকে খুলনা জেলা ও মহানগরীর সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে জানানো হয়, খুলনা মহানগরীর সদরে করোনা সংক্রমণ হার শতকরা ৩৫, খালিশপুরে ২৫ এবং সোনাডাঙ্গাতে এই হার শতকরা ১৭ ভাগ। তবে, রূপসা উপজেলাতে করোনা সংক্রমণের হার শতকরা ৪ দশমিক ১৮ ভাগ। কিন্তু, অন্যান্য উপজেলাতে এই হার শতকরা প্রায় এক ভাগ। এছাড়া, অন্যান্য স্থানে সংক্রমণের হার নিম্নগামী।
সভায় ঢাকা থেকে জুমে অংশগ্রহণ করেন সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) মো. কামাল হোসেন এবং খুলনা থেকে বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন।
এছাড়া, খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়েত হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার মুন্সী মো. রেজা সেকেন্দার, খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইউসুপ আলীসহ সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন ।