গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে প্রয়োজন ‘নারীবান্ধব বাজার ব্যবস্থা’
বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে উদ্যোক্তা হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা, তেমনি রয়েছে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বাধা। গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের জন্য নিরাপদ ও নারীবান্ধব বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নারীদের সরাসরি বাজার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার গুলশানে বাজার ব্যবস্থাপনা এবং নারী কৃষি উদ্যোক্তাদের নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত এক সম্মেলনে উদ্বোধনী পর্বে এমন অভিমত দেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ শেখ আজিজুর রহমান বলেন, দেশের অগ্রগতিতে নারীদের অবদান অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সদা তৎপর বলেও তিনি জানান।
পোল্ট্রির পাশাপাশি ডেইরি খাতেও নারী উদ্যোক্তাদের কাজ করার বিশাল সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্যের বিপণন জোরদার করা জরুরি। উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোগও।
উদ্বোধনী পর্বে নিজের গল্প তুলে ধরেন পটুয়াখালীর রাশিদা বেগম। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। পূর্বে সরাসরি মূল বাজারে গিয়ে বিক্রি করার সুযোগ না থাকায় মধ্যস্বত্তভোগীদের কারণে নারী কৃষক ও উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
তিনি সরকারের কাছে নারী কৃষকদের মূল বাজার ব্যবস্থার সাথে সরাসরি যোগসূত্র তৈরির মাধ্যমে নারী কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
বগুড়ার নারী উদ্যোক্তা শিরিন বেগম জানান, গ্রামীণ নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে একদিকে যেমন নির্যাতনের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাবে তেমনি নারী-পুরুষ উভয়ের উপার্জনে সংসারে আসবে সমৃদ্ধি।
তিনি জানান, তার মাসিক আয় বর্তমানে ১৫-২০ হাজার টাকা। এই অর্থ তিনি তার সন্তানের শিক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করেন।
উদ্বোধনী আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভিশন-এর প্রোগ্রাম পরিচালক টনি এম গোমেজ। তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর এর পেছনে ভূমিকা রাখছে নারীর ক্ষমতায়ন ও মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন। নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, বাংলাদেশের নারীরা অনেক সচেতন এবং অবস্থার উন্নয়নেও তারা অনেক বেশি সচেষ্ট। কিন্তু তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বাজার ব্যবস্থাপনা। আমাদের গ্রামীণ কৃষি উদ্যোক্তারা, বিশেষ করে নারীরা যেন উপযুক্ত পরিবেশ পায় এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সরাসরি অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষকে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।