ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দায়িত্ব হারালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের শাহ আলম
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো শাহ আলমকে ঘুষ গ্রহণেরঅভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শাহ আলমকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রায় এক দশক ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন শাহ আলম। তার দায়িত্ব কালীন সময়ে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অবস্থার অবনতি হয়েছে, দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
এরমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান হলো পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের জুনে প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ন (লিকুইডেশন) হয়েছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) অবসায়নের প্রক্রিয়া এখনো চলমান।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড সহ (আইএলএফসি) অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দুর্নীতির খবর সামনে এসেছে।
ক্রমাগত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কথা সামনে আসেনি।
দুর্নীতি ঢাকতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণের ব্যাপারে আইএলএফসি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের আদালতে স্বীকারোক্তির পর শাহ আলমের দুর্নীতির খবর অবশেষে প্রকাশ পেয়েছে।
আইএলএফসি'র পাঁচটি জালিয়াতির ঘটনায় রাশেদুল হকের সম্পৃক্ততার অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রেপ্তারের পর গত মঙ্গলবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারের সহযোগী এই রাশেদুল।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন শাহ আলম।
তার দায়িত্ব কালীন সময়ে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শোচনীয় অবস্থা সত্ত্বেও শাহ আলম ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হওয়ার দৌঁড়ে ছিলেন।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে যেভাবে ধস নেমেছে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে
দুটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সম্পূর্ণ খাতেই। লাভের পরিমাণ প্রায় বন্ধ হওয়ার দশায় পড়েছে এরফলে।
২০১৯ সালের প্রথম নয় মাসে নিবন্ধিত ৭০ শতাংশ এনবিএফআই'র অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে, ফলে শেয়ার প্রতি আয়ও লোকসানের মুখে পড়ে।
শোচনীয় আর্থিক অবস্থার কারণে এনবিএফআই'র লাভের সূচক এখন নেতিবাচক।
তবে পিপলস লিজিং এর অবসায়নের পর এনবিএফআই খাতের অর্থ আমানতের হার কমতে শুরু করে, ফলস্বরূপ তারল্য সঙ্কট আরও প্রবল হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী , ২০১৯ সালের এপ্রিল- জুনে এনবিআইএফের আমানতের হার ২.৭ শতাংশ কমে যায়।
বর্তমানে ৩৪ টি এনবিএফআই'র কার্যক্রম চলমান, এরমধ্যে চারটি গ্রিন জোনে আছে। অর্থাৎ মাত্র ১১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকিমুক্ত।
২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এনবিএফআই খাতে ঋণ খেলাপির মোট পরিমাণ ৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এ সংখ্যা মোট ঋণের ১১ শতাংশ।
তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠাবের শেয়ারের শেয়ারের বর্তমান দর ১০ টাকার কম।