ঘূর্ণিঝড়ের শেষে কক্সবাজারের সৈকতে ফিরেছে প্রাণ
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুরসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এলাকায় আঘাত হানার পর দূর্বল হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। তবে এখনো উত্তাল রয়েছে সাগর।
কক্সবাজারে ভোর থেকে ঝলমলে রোদ থাকলেও দুপুর গড়াতেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি স্থবির করে তুলেছে জনজীবন। কিন্তু বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে উদ্দীপনা নিয়ে সৈকতে গোসলে মত্ত হচ্ছেন সব বয়সী পর্যটকরা। ঢেউয়ের তোড়ে অনেকে গা এলিয়ে দিচ্ছেন অশান্ত সমুদ্রের শীতল জলে।
তবে স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে আনন্দটি দূর্যোগে যেনো পরিণত না হয়, বিপদের সেই ঝুঁকি এড়াতে হুশিয়ারি করছেন লাইফগার্ড কর্মীরা।
অন্যদিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকরাও নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ।
কক্সবাজারে এখনো তিন নম্বর সংকেত বলবৎ রয়েছে। আগামীকাল সংকেত কমলে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইয়িং এর ব্যবস্থাপক শাহ আলম।
কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করা সী সেইফ লাইফগার্ড’র সুপারভাইজার মো. ওসমান গনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবলের প্রভাবে শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির পাশাপাশি সাগর প্রচন্ড রকম উত্তাল ছিল। টানা তিনদিনের ছুটিতে বেড়াতে আসা সিংহভাগ পর্যটক হোটেল রুমে, লবিতে বসে সময় কাটালেও তরুণ বয়সী কিছু পর্যটক তখনো সাগরে নেমেছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় খুলনা এলাকায় অতিক্রম করার তথ্য জানার পর রোববার ভোর থেকেই সববয়সী পর্যটক সৈকতে নেমেছে। যে যার মতো গোসল, হৈ হল্লুড় করে আনন্দ করছেন।
তিনি আরো জানান, ঘুর্ণিঝড়টি অতিক্রমের পর নিম্নচাপে পরিণত হলেও সাগর স্বাভাবিকের চেয়ে উত্তাল রয়েছে। এরই মাঝে সৈকতে সব বয়সী পর্যটকরা গোসলে নামায় ভেসে যাবার শঙ্কা আছে। পর্যটকদের বিপদাপন্ন পরিস্থিতি এড়াতে লাইফগার্ডকর্মীরা সতর্ক নজর রেখে চলেছে। যারা একটু বিপদ সীমা অতিক্রম করছেন তাদের কাছে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে আসা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে স্বপরিবারে আসা বেক্সিমকো মিডিয়া লিমিটেডের ফাইনান্স বিভাগের কর্মকর্তা সাজ্জাদুল হক বলেন, শনিবারটা দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রুমেই বন্দি থাকতে হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের আতংক কেটে যাওয়ায় সকাল থেকেই সবাই মিলে সৈকতে আনন্দ করেছি। ভোর থেকে ঝলমলে রোদ থাকলেও দুপুর গড়াতেই আবারো বৃষ্টিপাত একটু ভোগাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ দূর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগর একটু উত্তাল রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যহত থাকতে পারে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি থেকে সৃষ্টিকর্তা কক্সবাজারবাসীকে রক্ষা করেছেন। যেকোন ধরণের দুর্যোগ এড়াতে প্রস্তুতি ছিল আমাদের। ৮ উপজেলায় ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল ভবনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে রাখা হয়েছিল। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ায় মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ উপকূলের নিচু এলাকায় কিছুটা পাব্লিত হয়েছে বলে খবর পাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের এসব বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, জেলার আইন-শৃংখলার নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ নজর রেখে মাঠে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি পর্যটন এলাকাতেও আমাদের দৃষ্টি রয়েছে।