চামড়া কিনে বিপাকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা, দাম কমের অভিযোগ
চামড়া কিনে এবার বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। যে দামে চামড়া কিনেছেন তার চেয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা, এতে করে লোকসানের আশংকায় রয়েছেন তারা। তবে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আড়তদারেরা।
দিনাজপুরের হিলির মুন্সিপট্টিস্থ চামড়ার আড়তে চামড়া বিক্রি করতে আসা এনামুল হক বলেন, "আমি প্রতি মৌসুমে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গিয়ে চামড়া ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করি, এটি আমার পেশা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো লাভের আশায় চামড়া ক্রয় করে নিয়ে আসছি বিক্রির জন্য। কিন্তু যে দামে আমরা চামড়া ক্রয় করে এনেছি বিক্রির জন্য, তার চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে ক্রয় করে এখন যে দামে বিক্রি করছি তাতে করে প্রতি চামড়াতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই পদ্ধতি যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা যারা মৌসুমি ব্যবসায়ী রয়েছি তারা কিভাবে চলবো! বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তারা আমাদের কাছে সঠিক দামে চামড়া ক্রয় করছেনা। এ বিষয়টির প্রতি সরকার নজর দিলে আমরা উপকৃত হতাম"।
চামড়া বিক্রি করতে আসা সেলিম হোসেন বলেন, "প্রতিবছর আমরা গ্রামাঞ্চল থেকে চামড়া ক্রয় করি। গতবছর চামড়া ক্রয় করেছিলাম ২০০-২৫০ টাকা করে, বিক্রি করেছিলাম ৩০০ টাকা করে। এবারে ওই দাম অনুযায়ী চামড়া ক্রয় করে নিয়ে আসছি, এখন চামড়া বিক্রি করতে এসে দেখি চামড়া প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মতো দাম কম। এতে করে আমরা চামড়া ক্রয় করে প্রচুর লোকসান খাচ্ছি। গরুর চামড়া তবুও তো নিচ্ছে, কিন্তু ছাগলের চামড়ার দাম নেই বা তারা নিতেও চাচ্ছে না। ছাগলের চামড়া ১০ টাকা করে বলছে। সেই টাকা দিয়ে ভ্যান ভাড়াও উঠবেনা। আমরা ছোট ব্যাপারী, সারা দিনে ১০ হাজার টাকার চামড়া ক্রয় করে যদি চামড়া বিক্রি করি ৮ হাজার টাকায়, তাতে কী চলে!"
"এর সাথে সারাদিন নিজের পরিশ্রম ও ভ্যান ভাড়া আছে- এগুলো আমরা কোথা থেকে কি করবো! এভাবে প্রত্যেক বছর লোকসান খেলে আমরা তো চামড়ার ব্যবসা করতে পারবোনা। চামড়ার দামটা যদি ৪০০-৪৫০ টাকা থাকতো তাহলে আমাদের জন্য লাভ হতো। পরবর্তী বছরে আবারো চামড়া ক্রয় করার প্রতি আগ্রহ থাকতো"।
হিলির মুন্সিপট্টিস্থ চামড়া ব্যবসায়ী স্বপন মুন্সি বলেন, "গতবছরে যে চামড়া মোকামে পাঠিয়েছিলাম সেই চামড়ার বেশ কিছু টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। আমরা ঈদের আগে কোন টাকাই পাইনি। টাকা পাওনা থাকার পরেও আমরা ভয়ে ভয়ে সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া ক্রয় করছি। প্রতি গরুর চামড়া আকারভেদে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ক্রয় করছি। আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত আকারভেদে, তবে ছাগলের চামড়া কেউ কিনতে চাচ্ছেনা। তারপরেও শ্রমিকের মূল্য আগের তুলনায় বেশী ও বস্তাপ্রতি লবণের দাম ৫০ টাকা করে বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে আগামীকাল (২৩ জুলাই) থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে, এতে করে কি হবে না হবে বলতে পারছিনা। তবে লকডাউন যদি না হয় তাহলে বর্তমানে আমরা যেভাবে চামড়া কিনছি তাতে করে চামড়াগুলো বিক্রি করতে পারতাম। আর যদি লকডাউন হয়, চামড়া বিক্রিও করতে না পারি তাহলে আমরা একেবারে মাঠে মারা যাবো"।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও চামড়ার দাম নিয়ে হতাশ ক্রেতা-মৌসুমি ব্যবসায়ী
প্রতি বছরের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবারও কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে গেল বছরের মতো এবারও চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই চামড়া কিনে ঢাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা।
গতকাল বুধবার (২১ জুলাই) বিকেল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে কুমারশীল মোড়, জেল রোড, পৌর আধুনিক সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণসহ কয়েকটি জায়গায় অস্থায়ী চামড়ার হাট বসে। চামড়ার দর নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই হতাশার কথা জানিয়েছেন। অনেকে কম দামে চামড়া বিক্রি না করে মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঈদে বাড়তি কিছু টাকা উপার্জনের আশায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সুহিলপুর গ্রামের বাসিন্দা মোবারক হোসেন জানান, তিনি এবার ৭৫ হাজার টাকা দামের গরু কোরবানি দিয়েছেন। গরুর চামড়াটি মাত্র ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। অথচ আগে এই চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা যেত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, তিনিসহ আরও কয়েকজন জেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাসহ গ্রামাঞ্চল থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে গরু ও মহিষের চামড়া কিনেছেন। পরিবহন ব্যয়সহ বিভিন্নভাবে তাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না তারা। কেনা দরের চেয়ে কমে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
তবে জেলার পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী সানি হোসেন জানান, "মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অদক্ষ। তারা লাভের আশায় বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনে আনেন। এতে করে লোকসানে পড়তে হয়"।