চিকিৎসকেরা ব্যস্ত প্রাইভেট ক্লিনিকে, সরকারি হাসপাতালে ১৮ মাসে কেবল কয়েকটি অস্ত্রোপচার
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গৌরিনাথপুর গ্রামের মৃত জামাত আলী মন্ডলের ছেলে ফারুক হোসেন (৩০)। দীর্ঘদিন নাকের পলিপে ভুগছেন। গত জুন মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নাক-কান-গলা বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে পলিপ অপারেশন করার পরামর্শ দেন।
অপারেশনের জন্য ৯ আগস্ট ভর্তির তারিখ দেয়া হয়। প্রস্তুতি নিয়ে নির্ধারিত দিনে ফারুক হোসেন ভর্তি হন। ওয়ার্ড থেকে তাকে পাঠানো হয় নাক-কান-গলা বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছে। এসময় তাকে বলা হয়, 'লকডাউন কাটলে আসবেন'।
আরেক রোগী মিলন হোসেন (৩৩)। বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে। গত ১৭ আগস্ট পলিপ অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসেন। চিকিৎসক অপারেশনের জন্য আগামী ৭ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন। এতে তিনি হতাশ হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের অজুহাতে হাসপাতালের সকল বিভাগে রুটিন অপারেশন কমেছে। আর নাক-কান-গলা বিভাগে সব ধরণের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে টানা ১৮ মাস। করোনার আগে হাসপাতালে রুটিন অপারেশন করা হতো গড়ে ২৫টি। করোনা চলাকালে সেটি নেমে আসে ৪-৫টিতে।
যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন পেটের যন্ত্রণায় ভুগছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক বলেছেন তার খাদ্যনালীতে সমস্যা, প্রয়োজন অপারেশন। গত জুলাই মাসে তাকে একবার ভর্তির তারিখ দেয়া হয়। ভর্তি হওয়ার পর নানা অজুহাতে অস্ত্রোপচার করা হয়নি। ওই সময় বাড়ি ফিরে যান। আগস্ট মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি হলেও অস্ত্রোপচার মেলেনি।
আরেকজন ভুক্তভোগী চান্দুটিয়া গ্রামের বুলু জানান, সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকরা কয়েক মাস ঘোরানোর পরও তার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার করেননি।
সূত্র জানায়, করোনার অজুহাতে সরকারি এই হাসপাতালে এমন অবস্থা চললেও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সকল ধরণের অস্ত্রোপচার চলছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই সেখানে অস্ত্রোপচার করছেন। চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত বাণিজ্য জমজমাট করতে করোনার অজুহাতে সরকারি হাসপাতালে রুটিন অপারেশন বন্ধ রেখেছেন।
অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্ব পালনকারী একজন সেবিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনার অজুহাতে অর্থোপেডিকস, সার্জারী, গাইনী ইত্যাদি বিভাগে রুটিন অপারেশন অনেকাংশে কমেছে। রোগী আসলেও অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসিয়ে রেখে নানা অজুহাত দেখিয়ে বলা হয় আগামী সপ্তাহে করা হবে। ওই সেবিকা আরও জানান, বর্তমানে নাক-কান-গলা বিভাগে কোন অস্ত্রোপচার করা হয় না।
গত এপ্রিল মাস থেকে এই অবস্থা চলছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, "করোনার কারণে রুটিন অপারেশন কমেছে এটা সত্য। তবে কোন বিভাগে অপারেশন পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়নি। অপারেশন থিয়েটারে উন্নয়নের কাজ চলার কারণে মাঝে একটি মাস জরুরি ছাড়া সকল অপারেশন বন্ধ রাখা হয়েছিলো"।
এদিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, ১ সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে যাতে সকল ধরণের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম নিয়মিতভাবে হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।