জলবায়ুজনিত কারণে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনের মডেল হতে পারে ‘মাইগ্র্যান্ট-ফ্রেন্ডলি টাউন’
প্রতি বছরই বন্যার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ ঢাকায় চলে আসার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।
সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক বলেন, "আগামী ১০-২০ বছরের মধ্যে আরও ১ কোটি অতিরিক্ত জলবায়ু শরণার্থী সামলানোর সক্ষমতা নেই আমাদের,"
ইতোমধ্যেই জনসংখ্যার চাপে পিষ্ঠ রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রধান প্রধান শহরগুলো ছাড়া অন্যান্য শহরকেও 'অভিবাসী বান্ধব' করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি ও তার সহকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার 'সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত তাদের একটি গবেষণায় বলা হয়, নতুন জনগোষ্ঠীকে আকর্ষণে এ ধরনের স্যাটেলাইট অঞ্চলগুলোতে প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি তুলে ধরতে নিজস্ব উন্নয়ন ও অভিযোজন পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দিন দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে পরিবেশগত কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়তে পারে। গবেষণাটির ফলাফলে এ বিষয়টিই উঠে এসেছে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বার্ষিক গড় উষ্ণায়ন ১.৫-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থ হলে, ২০৩০ সালের মধ্যে ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষের এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৩ কোটি ৪৪ লাখ মানুষের অন্যত্র অভিবাসনের প্রয়োজন পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কিত ২০২০ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণার পূর্বাভাসে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
অন্যদিকে, সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটিতে আরও বলা হয়েছে, অভিবাসী বান্ধব শহরগুলো জলবায়ু সহনশীল হওয়া প্রয়োজন, শহরগুলোতে কম খরচে বসবাস ও কর্মসংস্থানের সুবিধাসহ মৌলিক অবকাঠামো সুবিধা থাকতে হবে। সেইসঙ্গে এসব অভিবাসীদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ চর্চার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এসব অভিবাসীরা তাদের মূল আবাসের খুব বেশি দূরে যেতে চান না বলেও উল্লেখ করেন গবেষকরা।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তত পাঁচটি শহরে এ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বাস্তুচ্যুত হয়ে ঘিঞ্জি বস্তিতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এমন জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসূচি রয়েছে এরমধ্যে। এছাড়াও, এমন অনেক মিউনিসিপ্যালিটি রয়েছে যেখানে এসব বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
রাজশাহী শহরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এধরনের অভিবাসীদের বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে তুলতে কর্মসূচি প্রণয়নে সাহায্য করেছে। খুলনায় বন্যা নিরোধক আবাসন গড়ে তোলার কাজ চলছে, নতুন বাসিন্দাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতেও সাহায্য করা হচ্ছে। মাছ ধরা ও চিংড়ি খাতের জন্য বিখ্যাত নোয়াপাড়ায় স্থানীয় কর্মকর্তারা পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে কাজ করছেন।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে চলমান এসব কর্মসূচির কারণে আর্থিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক অভিবাসীরাই ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছেন। সংস্থাটি এ সম্পর্কিত নানা উদ্যোগও নিয়েছে ইতোপূর্বে।
এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসন সংকট মোকাবিলা সম্ভব হলেও, অকস্মাৎ আবহাওয়াজনিত বড়সড় পরিবর্তন হলে, ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী আর্থিক সুযোগ ও নিরাপদ পরিবেশের সন্ধানে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে পারেন। দেশের অভ্যন্তরে পুনর্বাসনের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে জলবায়ু অভিবাসীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারকে অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়শীল দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা ও সুরক্ষিত থাকা দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। এক দেশ থেকে আরেক দেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ওই দেশের শ্রম বাজার, রাজস্ব আয় ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর অভিবাসীদের স্থানান্তরের ইতিবাচক প্রভাব আছে বলেও উল্লেখ করেন গবেষকরা।
তবে কোনো দেশ বৈশ্বিক সহায়তায় প্রস্তুত থাকলে ও জেনোফোবিয়া মোকাবিলার মতো সামর্থ্য থাকলে তবেই এ ধরনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে বলে সতর্ক করেন গবেষকরা।
- হাদ্রিয়ানা লোয়েনকর্ন ডেইলিপেনের প্রধান সম্পাদক
- ব্লুমবার্গ থেকে অনুবাদ: রাফিয়া তামান্না