দিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী, সফরে তিস্তা-রোহিঙ্গা-এনআরসি বিষয়ে আলোচনা
চারদিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার দিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল সোয়া ৮টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সকাল পৌনে ১০টায় (স্থানীয় সময়) বিমানটি নয়াদিল্লির পালাম এয়ারফোর্স স্টেশনে পৌঁছে।
সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারতের শিশু ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চুদ্রী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
ভারত সফরে দু’দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর ভারতীয় শাখা ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক ফোরাম-২০১৯-এ যোগ দিতে ৩ অক্টোবর সকালে ৪ দিনের সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছুলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শনিবার (৫ অক্টোবর) দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যোগাযোগ, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে বুধবার (২ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমান্তে সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে বহুমুখী কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, উভয় দেশের মধ্যে জনযোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ, যেমন বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা থাকা সাপেক্ষে আরও অবাধে যাতায়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্ত্রাসবাদ রোধ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সার্বিক বাণিজ্যিক ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর।
এছাড়া, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং এবং অ্যান্টি সারকামভেশন ডিউটি প্রত্যাহারের পাশাপাশি বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্য ভারতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ এবং উভয় দেশের স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির উদ্যোগ বিষয়ে আলোচনা হবে।
আলোচনায় উভয় দেশের মধ্যে নৌ ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ স্থান পাবে। এর ভিত্তিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারত হতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে এসওপি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘বিবিআইএন এমভিও’ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে উদ্যোগ এবং রেল, বিমান ও সড়ক পথে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে।
গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উভয় দেশের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনে ‘কাঠামোগত চুক্তি’ স্বাক্ষর এবং উন্নয়ন ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি যৌথভাবে উদযাপনের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হবে।
আলোচনা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, নৌ-পরিবহন, অর্থনীতি, সমুদ্র গবেষণা, পণ্যের মান নির্ধারণ, বাণিজ্য, শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি খাতে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ৩ অক্টোবর সকাল ৮টায় নয়াদিল্লীর উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। আর ভারত সফরের সমাপ্তি টেনে প্রধানমন্ত্রী রোববার (৬ অক্টোবর) রাত ১১টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটে করে শাহজালালে এসে পৌঁছাবেন।