দুদকের মামলায় হাজিরার জন্য কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে সাবেক ওসি প্রদীপ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আদালতে হাজির করাতে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে কক্সবাজার কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান কক্সবাজারের জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন।
বেলা ১টার দিকে ওসি প্রদীপ চট্টগ্রাম কারাগারে পৌঁছান বলে জানান চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন।
জানা গেছে, দুদকের মামলায় আগামি সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হাজিরা দিতে সাবেক ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে।
২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন। এ মামলায় ২৭ আগস্ট মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জমা দেওয়া হয়। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর আদেশের শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন।
মামলার এজাহারে প্রদীপ কুমার দাশ ও চুমকি কারণের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা 'ওসি প্রদীপ' ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ এনেছে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়েছে চুমকির বিরুদ্ধে।
প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন বলেও দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং এজাহারে বলা হয়েছে।
২০১৮ সালে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকী কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে দুদক। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তাদের দুজনকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। ১২ মে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এ তারা পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফের আগে কক্সবাজারের মহেশখালী থানার ওসি, সিএমপির পতেঙ্গা, বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব জায়গায় কাজ করতে গিয়ে বিস্তর সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। একাধিকবার স্ট্যান্ড রিলিজও হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই অদৃশ্য ছায়ায় পার পেয়ে গেছেন প্রদীপ কুমার দাশ।
সর্বশেষ টেকনাফ থানায় যোগদান করে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন প্রদীপ কুমার দাশ। মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া নিরীহ লোকজনকে বন্দুকযুদ্ধের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের একটি আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব।
ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মেজর (অবঃ) সিনহা নিহতের ঘটনার পর ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ, সাংবাদিক নির্যাতনের দায়ে ও দুর্নীতির অভিযোগে মোট ১৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।